কলকাতা, 17 এপ্রিল: এগারোয়া এক ডজন! না, কোনও খেলার স্কোর বোর্ড নয় ৷ কোনও সাংকেতিক কোডও নয় ৷ আদতে এটা হল রাজ্যের শাসক দলের 11 বছরে 11 রথী-মহারথীর দুর্নীতি যোগে উত্থান-পতনের সংখ্যাতাত্বিক হিসেব মাত্র ৷ 2011 সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে রাজভবন থেকে হেঁটে মহাকরণে গিয়ে কার্যত 'আমি তোমাদেরই লোক' বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয় ৷ আর তার ঠিক 11 বছরের মাথায় এসে দাঁড়িয়ে একাধিক দুর্নীতির দায়ে বিভিন্ন সময়ে 11 সাংসদ-বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছিলেন বা হয়েছেন । ঘটনাচক্রে এঁরা সকলেই তৃণমূল নেতা ।
সাম্প্রতক অতীতে সারদা থেকে একাধিক দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে ৷ সেই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন নিয়োগ দুর্নীতি । রাজ্য়ে ক্ষমতা দখলের বছর তিনেক পরই তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ কথায় বলে সাড়ে সাতি, আর বাংলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে দুর্নীতির তদন্তে নেমে কার্যত শনিকেও হার মানিয়ে ছাড়লেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থারা ৷ সময় যত গড়াচ্ছে সিবিআই বা ইডির মতো সংস্থার বলয় ক্রমেই শাসকদলের গলায় ফাঁসের মতো আটকে বসেছে ৷ দুর্নীতির দায় নিয়ে জেলে যেতে হয়েছে মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পাল, কেডি সিং, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবন কৃষ্ণ সাহা ৷
কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র ও সৃঞ্জয় বসু : সারদাকাণ্ডের তদন্তে প্রথমে সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। সেই সিট সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের পর কুণাল ঘোষকেও গ্রেফতার করে। কুণাল তখন রাজ্যসভার সাংসদ। পরে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়ে কুণালকে গ্রেফতার করে সিবিআই । এরপর 2014-র ডিসেম্বরে সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৎকালীন রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী মদন মিত্র ৷ আরও পরে গ্রেফতার হন রাজ্যসভার তৎকালীন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর তিনজনই ছাড়া পেয়েছেন। মদন আবার বিধায়ক হয়েছেন। কুণাল এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আগেই সাংসদ পদ ছেড়ে দেন সৃঞ্জয়। সক্রিয় নন রাজনীতিতেও।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,তাপস পাল ও কেডি সিং: সারদার রেশ কাটতে না কাটতে 2017 সালে রাজ্যে ফের নতুন দুর্নীতি মামলার তদন্তে নামে সিবিআই ৷ এক্ষেত্রেও অভিযোগের তীর ছিল রাজ্যের শাসক দলের দিকেই ৷ সে সময় কয়েক মাসের ব্যবধানে সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়েন তৃণমূলের দুই সাংসদ তাপস পাল এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আরেক চিটফান্ড সংস্থা রোজভ্যালি দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হন দু'জন। সেসময় তাঁদের কাউকেই অবশ্য এ রাজ্যে রাখেনি সিবিআই ৷ নিয়ে যায় ভূবনেশ্বরে। পরে জামিন পান দু'জনই । সুদীপ এখনও লোকসভার সাংসদ। বছর চারেক আগে প্রয়াত হন তাপস পাল। ভূবনেশ্বরে এঁদের দু'জনের সঙ্গেই ছিলেন তৃণমূলের আরও এক সাংসদ কে ডি সিংও ৷ যদিও কে ডি'কে অ্যালকেমিস্ট চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার করেছিল সিবিআই ৷
ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়: 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচন মিটতে না মিটতেই রাজ্যের দুই তৎকালীন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। নারদকাণ্ডে এই দু'জনের সঙ্গেই গ্রেফতার হন মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় । একমাত্র শোভনই তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। বলা যায়, সেদিন বর্তমান ও প্রাক্তন মিলিয়ে শহর কলকাতার তিন মহানাগরিককে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গ্রেফাতারির অব্যবহিত পরই নিজাম প্যালেসে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: টানা 65 ঘণ্টার ম্যারাথন তল্লাশির পর গ্রেফতার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য ও জীবনকৃষ্ণ সাহা: এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন অবশ্যই, নিযোগ দুর্নীতি মামলা ৷ শিক্ষক থেকে হালের পৌরসভা, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রেই আদ্য-পান্ত দুর্নীতি হয়েছে ৷ আর তাতেই কখনও ইডি তো কখনও সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক ৷ নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবনকৃষ্ণ সাহা ৷