কলকাতা, 18 মে : গলার স্বর সেনাবাহিনীর সদস্যদের মতো বলিষ্ঠ । ফোনের ওপ্রান্তথেকে একজন বলে উঠলেন, সেনার 12 জন সদস্যের জন্য খাবার লাগবে ৷ মেনুতে থাকবে ভাত, ডাল, ভাজা, দু রকমের সবজি, চিকেন, পাঁপড়, চাটনি, সালাড ৷ রাত ন'টা নাগাদ গাড়ি পাঠিয়ে খাবার নিয়েযাওয়া হবে । অর্ডার মতো সব তৈরি করলেন খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসায়ী ৷ কিন্তু ন'টা পেরিয়ে গেলেও আসেনি কেউ ৷ ফোন করা হলে টাকা ট্রান্সফারের জন্য ATM কার্ডের তথ্য় চাওয়া হয় ৷ চাওয়া হয় CVV নম্বর ৷ ততক্ষণে বিষয়টি খানিকটাবুঝেছেন সোদপুরের হোম ডেলিভারির ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দাস ৷ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েযান তিনি ৷
এবার প্রতারণার নতুন ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা ৷ হোয়াটসঅ্যাপের DP-তে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ছবি ।সেনাবাহিনীর নানা তথ্যও বর্তমান ৷ সেনার নামেই ছোটো ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলতেসক্রিয় হয়েছে নতুন গ্যাং ৷ বিষয়টি জানতে পেরে তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশেরগোয়েন্দা বিভাগ।
বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাটো কাজ করতেন সোদপুরের উজ্জ্বল দাস । বৃদ্ধবাবা-মা আর ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার । উজ্জলের স্ত্রী মিঠু দাস খাবারের হোমডেলিভারির ব্যবসা শুরু করে ৷ লকডাউনের শুরুতেই কাজ হারান উজ্জ্বল । এরপর তিনিও এইহোম ডেলিভারির কাজে লাগে পড়েন ৷
12 জনের খাবার চেয়ে দিন কয়েক আগে উজ্জ্বলের কাছে ফোন আসে । মেনুতেবলা হয় ভাত, ডাল, ভাজা, দু রকমের সবজি,চিকেন, পাপড়, চাটনি, সালাড । সঙ্গে লাগবে 60 খানা রুটি । বলা হয়, সেনাবাহিনীর জন্য লাগবে এই খাবার ।উজ্জ্বল বলেন, “ মনে মনে খুব সম্মানিত হয়েছিলাম । সেনাবাহিনীর সদস্যদের খাওয়ানোর সুযোগ পাব ৷ খাবারও তৈরি করে ফেলি ৷" সেনাবাহিনীর সম্মানে ভাতের বাঁশকাঠি চালের জায়গায় আসে বাসমতি চাল । বেশি পরিমাণে রান্না হয় । উজ্জ্বল বলে চলেন, "বলা হয়েছিল, রাত ন'টা নাগাদ গাড়ি পাঠিয়ে খাবার নিয়েযাওয়া হবে । সেইমতো সবকিছু তৈরি ছিল । রাত সাড়ে ন'টা বেজে যায় ৷ কিন্তু গাড়ি আসেনি ৷তারপর ফোন করলাম । প্রথমে বলা হল,কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে । রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বলা হল, ATM কার্ড থেকে কার্ডেটাকা ট্রান্সফার করা হবে । সেইমতো আমার ATM কার্ডের ছবি চাওয়া হয় । ও প্রান্তথেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় স্মার্ট কার্ডের একটি ছবি । সেখানেসেনাবাহিনীর এক জওয়ানের ছবি । সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান আমায় সন্দেহ করতে দেয়নি ।এরপর চাওয়া হয় আমার ATM কার্ডের পেছনের ছবি । এখানে CVV নম্বর থাকে ৷ আমি বিশ্বাস করে সেটাও পাঠিয়ে দিই । সারাদিনের পরিশ্রম ৷ আশঙ্কা বাড়ছিল ৷ আবার ফোন আসে ৷ এবার চাওয়া হয় ATM-র পিন নম্বর । তখনই বুঝতে পারি, এটা প্রতারণা চক্রের কাজ । আমি দ্রুত ওই অ্যাকাউন্টের সব টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিই । সেই কারণে টাকা বাঁচানো গেছে ।"
উজ্জ্বলের বক্তব্য, "পুরো বিষয়টি জানিয়ে ঘোলা থানায়অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলাম । থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে । বলা হয়, আপনার টাকা তো আর খোয়া যায়নি । 12 জনের খাবারের বাজার করতে কত টাকা লাগে, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম ।পুলিশকে বলতে চেয়েছিলাম, এই ঘটনা যখন আমার সঙ্গে হয়েছে, তখন আরও অনেকের সঙ্গে হবে । অবিলম্বেওই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । কিন্তু পুলিশকে বোঝাতে পারিনি।"
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগেরঅফিসাররা । ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা । এবিষয়ে কলকাতা পুলিশেরযুগ্ম কমিশনার অপরাধ বলেন, "পুরোটা জানার পর মনে হচ্ছে এটা জামতাড়া গ্যাংয়ের কাজ। আমরাবারবার অনুরোধ করছি, কাউকে এটিএম কার্ডের কোন তথ্য দেবেন না। ব্যাংক সংক্রান্ত কোনও OTP কারও সঙ্গে শেয়ারকরবেন না। এটিএমের পিন শুধুমাত্র আপনার ব্যক্তিগত। সেটি কারও সঙ্গে শেয়ার করবেননা। মনে রাখবেন ব্যাংক থেকে ফোন করেও আপনার কাছ থেকে ওই তথ্য চাওয়া হবে না।"