কলকাতা, 7 অক্টোবর : মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে COVID-19-এর সংক্রমণ বেড়ে চলেছে এ রাজ্যে । মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত 24 ঘণ্টায় COVID-19-এ রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি "অশনি সংকেত" বলে জানিয়েছে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল। এই মঞ্চের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গতকাল মেইল পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে, এ বছর পুজোর সময় যে কোনও উপায়ে জনস্রোত বন্ধ করার জন্য যথাযথ এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে, COVID-19 সংক্রমণের সুনামি ঘটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যার জেরে, এ রাজ্যের নাগরিকদের জন্য গণ আত্মঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
মাঝে কয়েকদিন রাজ্যে COVID-19-এর সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সামান্য কম থাকলেও, গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের হার আবার বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে 3,370 জন COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এবং 63 জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে 24 ঘণ্টার নিরিখে এটাই সর্বাধিক আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর যুগ্ম আহ্বায়ক চিকিৎসক হীরালাল কোঙার এবং চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, "মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে এ রাজ্যে লক্ষণীয়ভাবে COVID-19-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অশনি সংকেত।"
এ রাজ্যে আসন্ন শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে আশঙ্কায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের এই মঞ্চ। যার জেরে মুখ্যমন্ত্রীকে গতকাল এই মঞ্চের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মেইল পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই মেইল-এ এমনই জানানো হয়েছে, শারদ উৎসব বাঙালির আবেগ, আনন্দ, উচ্ছ্বাস প্রকাশের সবথেকে বড় উৎসব। কিন্তু, এখন কোরোনা-কাল। মহারাষ্ট্রে গণেশ চতুর্থী নিয়ে মাতামাতি আটকানো গিয়েছে। নবরাত্রিতে ঐতিহ্যশালী গর্বা নাচ বাতিল করেছে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র।
প্রশাসনের সঠিক ভূমিকায় রাজ্যে ইদ-মহরম ঘরের মধ্যে পালিত হয়েছে। এরই উলটোদিকে উৎসব পালনের আবেগকে অধিকতর মান্যতা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধিতে শিথিলতা ঘটে কী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে কেরালে। ওনাম-এ লাগামহীন উৎসব পালনের পরে ওই রাজ্যে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে সাড়ে সাতশো শতাংশ। ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে সেখানে রাজ্যজুড়ে 144 ধারা জারি হয়েছে। স্পেন-এ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের জন্য, আর একটি ফুটবল ম্যাচের জনসমাগমের পরে ওই দেশে সংক্রমণ তুঙ্গে উঠেছে।
এ কথার পাশাপাশি জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর যুগ্ম আহ্বায়ক চিকিৎসক হীরালাল কোঙার এবং চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো মেইল-এ বলেছেন, "এই সব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাস্তবতা বিচার করে আমাদের ধারণা, আসন্ন পুজোর সময় উপযুক্ত সাবধানতার অভাব ঘটলে এই রাজ্যের নাগরিকদের জন্য এক গণ আত্মঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সংক্রমণের সুনামি ঘটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের, পুলিশ প্রশাসন কর্মীদের একটানা এতদিনের সব পরিশ্রম, জীবনদান ও সরকারের এত দিনের সব সদর্থক উদ্যোগ কয়েক দিনের সাময়িক আনন্দ উন্মাদনার জন্য নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।"
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর যুগ্ম আহ্বায়ক চিকিৎসক হীরালাল কোঙার এবং চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো মেইল-এ বলেছেন, "রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে আপনার কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, (1) এ বারের পুজোয় যে কোনও উপায়ে জনস্রোত বন্ধ করার জন্য যথাযথ এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিন। (2) বাড়ির বাইরে প্রতিটি নাগরিকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করুন। আমাদের বিবেচনায় এই সময়ে এগুলিই প্রধান ও একমাত্র ভাবনার বিষয়।"