কলকাতা, 2 নভেম্বর : যে কাজ করেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা, সেটাই এবার করে দেখালেন ENT বিভাগের চিকিৎসকরা । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই প্রথম । যার জেরে, নাক ফিরে পেলেন এক বৃদ্ধ । ক্যানসার থেকেও মুক্তি পেলেন তিনি ।
নবদ্বীপের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নাম চাঁদু ঘোষ (66) । তাঁর নাকের মধ্যে টিউমার হয়েছিল । এই টিউমার থেকে ঘা হয়ে যায় । বছর দেড়েক ধরে এই অবস্থাযতেই ছিল । চিকিৎসা করালেও তা কমেনি । এই ঘা পরিণত হয় আলসারে । নাকের উপরের দিকে চামড়ায় হয়েছিল এই টিউমার । সেখান থেকে নাকের ভিতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে । সপ্তাহ তিনেক আগে এই রোগীকে নিয়ে আসা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । ভরতি নেওয়া হয় ENT বিভাগে ।
ভরতির পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, ওই ঘা আসলে ক্যানসারে পরিণত হয়েছে । এটা ত্বকের ক্যানসার । নাকের হাড়েও জড়িয়ে যায় এই ঘা । এখানে অস্ত্রোপচার করার বিষয়টি ENT বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে কোনও সমস্যার ছিল না । তবে, নাক পুনর্গঠন করার বিষয়টি ছিল এই বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জের । কারণ এটা প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা করেন । কিন্তু, ENT বিভাগের চিকিৎসকরাই শেষপর্যন্ত এই রোগীর নাক পুনর্গঠন করেন ।
23 অক্টোবর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই অস্ত্রোপচার চলে । এটা প্রথম দফায় । অস্ত্রোপচারের এই দলে ছিলেন চিকিৎসক সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায়, চিকিৎসক রাহুল সরকার এবং চিকিৎসক সন্দীপ প্যাটেল । দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার হবে, প্রথম অস্ত্রোপচারের 6 সপ্তাহ পরে । চিকিৎসক দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই রোগীর কপালের চামড়া, মাংসপেশি এবং সেখানকার রক্তনালী অর্থাৎ শিরা-ধমনী সহ কিছুটা অংশ কেটে নিয়ে তাঁর নাকে বসানো হয়েছে । 6 সপ্তাহে এই রোগীর নাক নতুন করে তৈরি হয়ে যাবে। তখন নাকের উপরে থাকা চামড়া, মাংসপেশি, রক্তনালীর অতিরিক্ত অংশটি আবার কপালে বসিয়ে দেওয়া হবে ।"
একই সঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, "প্লাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্টের সাহায্য ছাড়াই এই ধরনের অস্ত্রোপচার কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আমরাই প্রথম করলাম ।" আগামী মঙ্গলবার এই রোগীর নাকে অস্ত্রোপচারের স্থানের সেলাই কাটা হবে । তার পরে তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে । প্রথম অস্ত্রোপাচারের পাঁচ সপ্তাহ পরে আবার এই রোগীকে এই হাসপাতালে ভরতি নেওয়া হবে, যাতে 6 সপ্তাহ নাগাদ তাঁর কপাল ঠিক করে দেওয়া যায় । চিকিৎসক দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই রোগী এখন সুস্থ। তিনি ক্যানস্যার থেকেও মুক্ত ।"