কলকাতা, 7 মার্চ : রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ গ্রহণ করলেন না শিক্ষামন্ত্রী । বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক-বসন্ত উৎসব উপলক্ষে খোলা পিঠে ও জামায় আবির দিয়ে বেশ কয়েকটি অশ্লীল শব্দ লেখেন কয়েকজন যুবক-যুবতি । একটি রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে ছাপার অযোগ্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হয় । এই ঘটনায় নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি । আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, উপাচার্যের পদত্যাগ তিনি গ্রহণ করবেন না । উপাচার্যকে ফোনে সেকথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা দপ্তর ও আচার্যকে ই-মেল করে পদত্যাগপত্র পাঠান সব্যসাচীবাবু । তারপর আজ সকালে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে তিনি যখন দুপুর দেড়টা নাগাদ ফিরে যাচ্ছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একাংশ তাঁকে পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন জানান । আবেদনকারী পড়ুয়ারা বেশিরভাগই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের । তাঁদের বক্তব্য, একটি প্রশাসনিক পদে থেকেও উপাচার্য তাঁদের ক্লাস নিতেন । আবেদনের ভিত্তিতে উপাচার্য বলেন, "আমি অভিভূত । কিন্তু, শিক্ষক হিসেবে থাকব ।"
এবছর বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসবের পর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে বেশ কিছু ছবি । যেখানে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ের বুকে-পিঠে অশ্লীল শব্দ লেখা । এমনকী রবীন্দ্রনাথের গানেও সেইসব শব্দ ব্যবহার করে অভিযুক্তরা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সব মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে । গতকাল সকালেই সিঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপাচার্য। এই ঘটনায় নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগও করেন । আজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "শিক্ষক সহকর্মী, আধিকারিক সহকর্মী, শিক্ষাকর্মী সহকর্মী এবং আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আমি সর্বোতভাবে সহযোগিতা পেয়েছি । আমার কোনও অভিযোগ নেই। শিক্ষা দপ্তরের কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছি । এই ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে আমার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি ।"
কেন নৈতিক দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করলেন? উপাচার্য বলেন, "যে কোনও কিছু ঘটলে আমরা দায়টা অন্যের উপর চাপিয়ে দিই । আমি তা মনে করি না । একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব আমার উপরে ন্যস্ত । বিগত সাড়ে সাত বছর ধরে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য । সেক্ষেত্রে দায়টা আমারই ।"
যদিও আজ শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ তিনি গ্রহণ করবেন না । বেহালার শরৎ সদনে একটি অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "যারা এই কাজ করেছে তারা বাংলার সংস্কৃতিকে পিছিয়ে দিয়েছে । আজ উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে । এই ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব তাঁর একার নয় । এটা অবক্ষয় । সবাইকে সচেতন করতে হবে । তাঁর পদত্যাগপত্র নেব না । উনি কাজ করবেন ।"