কলকাতা, 16 মার্চ: নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার জড়িয়ে গেল ত্রিপুরার নাম ৷ উত্তর পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যেও নিয়োগ দুর্নীতিতে থেকে আসা টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল ৷ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate) গোয়েন্দাদের কাছে নাকি এমনই তথ্য এসেছে ৷ ইডি (ED) সূত্রে খবর, এই দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের হাত ধরেই ওই রাজ্যের চা-ব্যবসায়ীদের কাছে বিনিয়োগ করা হয় ৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা ৷
গত বছর থেকে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই (CBI) ও ইডি ৷ ইতমধ্যে কেন্দ্রীয় এই দুই তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করেছে একাধিক সন্দেহভাজনকে ৷ সেই তালিকায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় (Partha Chatterjee), মানিক ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) হেভিওয়েট নেতারা যেমন রয়েছেন, তেমনই যুব নেতা হিসেবে পরিচিত কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও রয়েছেন ৷ কুন্তল ও শান্তনুকে অবশ্য সম্প্রতি বহিষ্কার করেছে ঘাসফুল শিবির ৷
ইডির হাতে এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম শান্তনু বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তিনি আদালতে যাওয়া-আসার মাঝে জানিয়েছেন যে এই দুর্নীতির সব তথ্য রয়েছে কুন্তলের কাছে ৷ ইডিও কুন্তলকে অন্যতম মূল অভিযুক্ত বলে মনে করছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কুন্তল সম্পর্কে নতুন তথ্য তদন্তের গতি ঘোরাতে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা ৷
ইডি সূত্রে খবর, কুন্তলকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় তিনি ত্রিপুরায় গিয়েছেন । সেখানকার একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে একাধিক সময় বৈঠকও করেছেন তিনি ৷
কুন্তলকে গ্রেফতার করার আগে হুগলি ও নিউটাউনে কুন্তলের বাড়ি-ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি ৷ সেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয় ৷ পাওয়া গিয়েছিল একটি পেনড্রাইভ ৷ পরে সেগুলি থেকে অনেক তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে ৷ সেই তথ্যগুলির অন্যতম কুন্তলের ত্রিপুরা-যোগ ৷ সেই কারণেই জেরায় এই বিষয়ে কুন্তলের কাছে প্রশ্ন করেন গোয়েন্দারা ৷ ইডি সূত্রে খবর, তখনই ত্রিপুরায় বিনিয়োগের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ৷
কিন্তু কুন্তলের ত্রিপুরা-যোগ নিয়ে কী তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা ? ইডি সূত্রে খবর, কুন্তল ত্রিপুরায় গিয়ে যাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাঁরা সকলেই প্রভাবশালী ৷ বেশ কয়েকজনের আবার চা-বাগান রয়েছে ৷ তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে কুন্তলের 75টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কোনও কোনওটি থেকে ৷ সব মিলিয়ে প্রায় 20 কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা ৷
গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, গত দেড় বছরে ত্রিপুরায় রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল তৃণমূল ৷ সেখানকার স্থানীয় নির্বাচনে তারা লড়াই করেছে ৷ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনেও লড়েছে ঘাসফুল শিবির ৷ ফলে চা-বাগানে বিনিয়োগের আড়ালে রাজনৈতিক কাজে ওই টাকা ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে ৷ কারণ, কুন্তল তৃণমূলের নেতা ছিলেন ৷ তাছাড়া ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের হয়ে ত্রিপুরায় রাজনৈতিকভাবে যাঁরা সক্রিয়, এমন একজন হেভিওয়েটের নাম উঠে এসেছে ৷
আসল তথ্যটা কী, তা জানতে ওই ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে ৷ এখন দেখার ওই ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডির কাছে নতুন কী তথ্য বেরিয়ে আসে !
আরও পড়ুন: 'আমি নই, প্রভাবশালী কুন্তল !' কেন একথা বললেন শান্তনু ?