ETV Bharat / state

দেশ বাঁচাতে টাকা ছাপানোই পথ, বলছেন অর্থনীতিবিদরা - Lockdown in India

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে টাকা ছাপানোই এই মুহূর্তে একমাত্র পথ হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা । তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে টাকা ছাপাতে হবে কিংবা মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে ।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ
author img

By

Published : Apr 10, 2020, 8:40 PM IST

Updated : Apr 10, 2020, 10:30 PM IST

কলকাতা, 10 এপ্রিল : লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বেকারের সংখ্যা । লকডাউনে জেরবার উৎপাদন ক্ষেত্রও । আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে চলেছে । অবিলম্বে দরিদ্রদের হাতে টাকা পৌঁছে না দেওয়া হলে সমস্যা আ্ররও বাড়তে পারে । শেষ হয়ে যেতে পারে দেশের মানব সম্পদ, অর্থনীতি । সেই সূত্র ধরেই নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে টাকা ছাপানোই এই মুহূর্তে একমাত্র পথ হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা ।

সম্প্রতি FICCI এবং ICC আয়োজিত এক ভিডিয়ো কনফারেন্সে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী এস্থার ডুফলো টাকা ছাপানোর পক্ষে জোরদার সাওয়াল করেন । অভিজিৎ বলেন, "প্রথাগতভাবে হাঁটার সময় এখন নয় । চাহিদা বজায় রাখতে হলে গরিব মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে হবে । এই অবস্থায় তা না করলে অর্থনীতিকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে ।" এস্থার বলেন, "ভারতে যখন গরিব মানুষের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে তখন তাকে ব্যবহার করতে হবে ।" দুই অর্থনীতিবিদের গলাতেই শোনা গিয়েছিল মিলিত সুর । তাঁদের দাবি ছিল, এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে ভাবলে চলবে না ।

লকডাউনের জেরে দেশের অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ । নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সরঞ্জাম এবং ওষুধ ছাড়া অন্য সব উৎপাদন ক্ষেত্র বন্ধ । ফলে বড় সমস্যায় পড়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা । প্রতিদিন কর্মহীন হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ । বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, এর প্রভাব পড়েছে কৃষিক্ষেত্রেও । কোরোনা আতঙ্কে এখন কৃষিক্ষেত্রেও শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে ৷ ফলে ব্যাপক মার খাচ্ছে শস্যের উৎপাদন । বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ভয়ের কারণ দেখছেন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার । তিনি বলেন, "কৃষিক্ষেত্রকে সচল রাখতেই হবে । প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রের জন্য ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন । মনে রাখতে হবে কৃষি উৎপাদন না হলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দেবে । সে ক্ষেত্রে কোনও লড়াই আর কাজ করবে না ।"

অর্থনীতিবিদ অভরূপ সরকার ও পঙ্কজ রায়
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার ও পঙ্কজ রায়

অর্থনীতিবিদ পঙ্কজ রায়ের গলাতেও শোনা গেল একই সুর । তিনি বলেন, "মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে অন্য দেশ থেকে খাদ্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয় । 130 কোটি মানুষকে দেশে উৎপন্ন কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর করতে হবে । ভাবতে হবে আগামী দিনের কথা । কোরোনা সংক্রমণের বিষয়টি কত দিন কাজ করবে জানা নেই । সেটি যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়, তবে আগামী দিনে খাদ্যপণ্যের অভাব প্রকট হবে । তখন সংক্রমণ কমে গেলেও দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে । যা একেবারেই কাম্য নয় । তাই সরকারের উচিত কৃষির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া । কোনওভাবেই যাতে ফসল নষ্ট না হয় তা দেখতে হবে । কৃষকদের সহযোগিতা এই মুহূর্তে ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় ।"

এই দুই অর্থনীতিবীদই মনে করছেন, এই মুহূর্তে দেশের গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি । কারণ তাদের হাতে টাকা নেই । ফলে ক্রয় ক্ষমতা নেই । অভিরূপ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, "কেইনসের থিওরি মেনে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াটা এই মুহূর্তে সরকারের আশু কর্তব্য । বলতে পারেন সরকারকে এখন কল্পতরু হতে হবে । হাইপার ইনফ্লেশন নিয়ে ভাবার সময় এখন নয় । সামান্য ইনফ্লেশন বাড়লেও কিছু এসে যাবে না । গোটা পৃথিবীজুড়েই এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতি হবে । তাতে খুব বেশি কিছু এসে যাবে না । কিন্তু মানুষ যদি তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে না পারে তবে দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়ে যাবে । মানুষের খাবারের জোগানটা ঠিক রাখাটা ভীষণভাবে জরুরি । আর সেটা করতে গেলে প্রয়োজনে নোট ছাপাতে হবে ।" অধ্যাপক পঙ্কজ রায় বলেন, "1929 সালের গ্রেট রিসেশনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনীতিবিদ কেইনস যে দাওয়াই দিয়েছিলেন সেটা এখন আবার প্রয়োগ করতে হবে । মনে রাখতে হবে মানুষ কাজ হারিয়েছে । তাদের ক্রয় ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এই মুহূর্তে সরকারকে টাকা ছাপাতে হবে । সেটা সূক্ষ্ম হিসাব করেই করতে হবে । তাতে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও কিছু এসে যাবে না । কারণ সময়টা এখন বাঁচার ।"

অর্থনীতির নিয়ম বলছে, বেশি টাকা ছাপানো হলে দেশের ভারসাম্য হারিয়ে যায় । অর্থনীতির ভারসাম্য একেবারে নড়বড়ে হয়ে যায় । এর উদাহরণ আছে । একটা সময় দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গিয়ে জ়িম্বাবোয়ে 100 ট্রিলিয়ন ডলারের নোট ছেপেছিল । কিন্তু সেটা বুমেরাং হয়ে যায় জ়িম্বাবোয়ের অর্থনীতিতে । ভেনেজুয়েলাও একইভাবে হাইপার ইনফ্লেশনের শিকার হয়েছিল । সেই সময় দেখা যায় জিনিসপত্রের চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধি । তথ্য বলছে, ভেনেজুয়েলায় এক প্যাকেট চালের দাম হয়েছিল 25 লাখ বলিভার । একটি টয়লেট পেপারের রোলের দাম গিয়ে পৌঁছায় 26 লাখ বলিভার । আড়াই কেজি ওজনের মুরগির দাম গিয়ে পৌঁছায় প্রায় দেড় কোটি বলিভারে । অভিরূপ সরকার যদিও দুই সময়ের পরিস্থিতি এক নয় বলে জানালেন । তাঁর কথায়,"সেই সময় গোটা পৃথিবী জুড়ে মন্দা ছিল না । গোটা পৃথিবীর মন্দার সময় তেমন হাইপের ইনফ্লেশন আসবে না । মনে রাখতে হবে এখনও পর্যন্ত দেশে কৃষির মন্দার পরিস্থিতি নেই । ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও কমবে । কৃষি উৎপাদন আর তেলের দাম এই দুটি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত । বিষয়টি যদি এমন হত যে, দেশে কৃষি পণ্যের জোগান কম অথচ মানুষের হাতে বহু টাকা তবে, ওই পরিস্থিতি তৈরি হত । তাই দুটির মধ্যে খুব একটা সম্পর্ক নেই । মনে রাখতে হবে এটা একটা আপৎকালীন ব্যবস্থা । হ্যাঁ, মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা হবে বৈকি । তাতে প্রভাব পড়বে চাকুরীজীবী এবং বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর । আমি এটিকে রি-ডিস্ট্রিবিউশন অফ মানি বলব । এই পরিস্থিতিতে চাকরিজীবী, ধনী এবং বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কিছুটা স্যাক্রিফাইজ় করতে হবে । তবেই দেশ বাঁচবে । বেঁচে যাবে অর্থনীতি ।"

কিন্তু অর্থনীতির নিয়ম বলছে, টাকা ছাপালে দেশের রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে যায় । পঙ্কজ রায়ের কথায়, "ওগুলো বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে শেখায় । তাদের সুবিধার জন্যই এটা করে । কারণ ফিসক্যাল ডেফিসিট বেড়ে গেলে তার অনেকখানি দায়িত্ব নিতে হয় এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে । এই সময়টা ফিসক্যাল ডেফিসিট নিয়ে ভাবার সময় নয় । এই সময়টা দেশের মানুষকে বাঁচানোর সময় । এটা মনে রাখতে হবে । এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে টাকা ছাপাতে হবে কিংবা মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে ।"

কলকাতা, 10 এপ্রিল : লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বেকারের সংখ্যা । লকডাউনে জেরবার উৎপাদন ক্ষেত্রও । আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে চলেছে । অবিলম্বে দরিদ্রদের হাতে টাকা পৌঁছে না দেওয়া হলে সমস্যা আ্ররও বাড়তে পারে । শেষ হয়ে যেতে পারে দেশের মানব সম্পদ, অর্থনীতি । সেই সূত্র ধরেই নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে টাকা ছাপানোই এই মুহূর্তে একমাত্র পথ হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা ।

সম্প্রতি FICCI এবং ICC আয়োজিত এক ভিডিয়ো কনফারেন্সে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী এস্থার ডুফলো টাকা ছাপানোর পক্ষে জোরদার সাওয়াল করেন । অভিজিৎ বলেন, "প্রথাগতভাবে হাঁটার সময় এখন নয় । চাহিদা বজায় রাখতে হলে গরিব মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে হবে । এই অবস্থায় তা না করলে অর্থনীতিকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে ।" এস্থার বলেন, "ভারতে যখন গরিব মানুষের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে তখন তাকে ব্যবহার করতে হবে ।" দুই অর্থনীতিবিদের গলাতেই শোনা গিয়েছিল মিলিত সুর । তাঁদের দাবি ছিল, এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে ভাবলে চলবে না ।

লকডাউনের জেরে দেশের অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ । নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সরঞ্জাম এবং ওষুধ ছাড়া অন্য সব উৎপাদন ক্ষেত্র বন্ধ । ফলে বড় সমস্যায় পড়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা । প্রতিদিন কর্মহীন হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ । বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, এর প্রভাব পড়েছে কৃষিক্ষেত্রেও । কোরোনা আতঙ্কে এখন কৃষিক্ষেত্রেও শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে ৷ ফলে ব্যাপক মার খাচ্ছে শস্যের উৎপাদন । বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ভয়ের কারণ দেখছেন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার । তিনি বলেন, "কৃষিক্ষেত্রকে সচল রাখতেই হবে । প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রের জন্য ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন । মনে রাখতে হবে কৃষি উৎপাদন না হলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দেবে । সে ক্ষেত্রে কোনও লড়াই আর কাজ করবে না ।"

অর্থনীতিবিদ অভরূপ সরকার ও পঙ্কজ রায়
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার ও পঙ্কজ রায়

অর্থনীতিবিদ পঙ্কজ রায়ের গলাতেও শোনা গেল একই সুর । তিনি বলেন, "মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে অন্য দেশ থেকে খাদ্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয় । 130 কোটি মানুষকে দেশে উৎপন্ন কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর করতে হবে । ভাবতে হবে আগামী দিনের কথা । কোরোনা সংক্রমণের বিষয়টি কত দিন কাজ করবে জানা নেই । সেটি যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়, তবে আগামী দিনে খাদ্যপণ্যের অভাব প্রকট হবে । তখন সংক্রমণ কমে গেলেও দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে । যা একেবারেই কাম্য নয় । তাই সরকারের উচিত কৃষির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া । কোনওভাবেই যাতে ফসল নষ্ট না হয় তা দেখতে হবে । কৃষকদের সহযোগিতা এই মুহূর্তে ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় ।"

এই দুই অর্থনীতিবীদই মনে করছেন, এই মুহূর্তে দেশের গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি । কারণ তাদের হাতে টাকা নেই । ফলে ক্রয় ক্ষমতা নেই । অভিরূপ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, "কেইনসের থিওরি মেনে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াটা এই মুহূর্তে সরকারের আশু কর্তব্য । বলতে পারেন সরকারকে এখন কল্পতরু হতে হবে । হাইপার ইনফ্লেশন নিয়ে ভাবার সময় এখন নয় । সামান্য ইনফ্লেশন বাড়লেও কিছু এসে যাবে না । গোটা পৃথিবীজুড়েই এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতি হবে । তাতে খুব বেশি কিছু এসে যাবে না । কিন্তু মানুষ যদি তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে না পারে তবে দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়ে যাবে । মানুষের খাবারের জোগানটা ঠিক রাখাটা ভীষণভাবে জরুরি । আর সেটা করতে গেলে প্রয়োজনে নোট ছাপাতে হবে ।" অধ্যাপক পঙ্কজ রায় বলেন, "1929 সালের গ্রেট রিসেশনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনীতিবিদ কেইনস যে দাওয়াই দিয়েছিলেন সেটা এখন আবার প্রয়োগ করতে হবে । মনে রাখতে হবে মানুষ কাজ হারিয়েছে । তাদের ক্রয় ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এই মুহূর্তে সরকারকে টাকা ছাপাতে হবে । সেটা সূক্ষ্ম হিসাব করেই করতে হবে । তাতে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও কিছু এসে যাবে না । কারণ সময়টা এখন বাঁচার ।"

অর্থনীতির নিয়ম বলছে, বেশি টাকা ছাপানো হলে দেশের ভারসাম্য হারিয়ে যায় । অর্থনীতির ভারসাম্য একেবারে নড়বড়ে হয়ে যায় । এর উদাহরণ আছে । একটা সময় দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গিয়ে জ়িম্বাবোয়ে 100 ট্রিলিয়ন ডলারের নোট ছেপেছিল । কিন্তু সেটা বুমেরাং হয়ে যায় জ়িম্বাবোয়ের অর্থনীতিতে । ভেনেজুয়েলাও একইভাবে হাইপার ইনফ্লেশনের শিকার হয়েছিল । সেই সময় দেখা যায় জিনিসপত্রের চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধি । তথ্য বলছে, ভেনেজুয়েলায় এক প্যাকেট চালের দাম হয়েছিল 25 লাখ বলিভার । একটি টয়লেট পেপারের রোলের দাম গিয়ে পৌঁছায় 26 লাখ বলিভার । আড়াই কেজি ওজনের মুরগির দাম গিয়ে পৌঁছায় প্রায় দেড় কোটি বলিভারে । অভিরূপ সরকার যদিও দুই সময়ের পরিস্থিতি এক নয় বলে জানালেন । তাঁর কথায়,"সেই সময় গোটা পৃথিবী জুড়ে মন্দা ছিল না । গোটা পৃথিবীর মন্দার সময় তেমন হাইপের ইনফ্লেশন আসবে না । মনে রাখতে হবে এখনও পর্যন্ত দেশে কৃষির মন্দার পরিস্থিতি নেই । ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও কমবে । কৃষি উৎপাদন আর তেলের দাম এই দুটি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত । বিষয়টি যদি এমন হত যে, দেশে কৃষি পণ্যের জোগান কম অথচ মানুষের হাতে বহু টাকা তবে, ওই পরিস্থিতি তৈরি হত । তাই দুটির মধ্যে খুব একটা সম্পর্ক নেই । মনে রাখতে হবে এটা একটা আপৎকালীন ব্যবস্থা । হ্যাঁ, মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা হবে বৈকি । তাতে প্রভাব পড়বে চাকুরীজীবী এবং বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর । আমি এটিকে রি-ডিস্ট্রিবিউশন অফ মানি বলব । এই পরিস্থিতিতে চাকরিজীবী, ধনী এবং বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কিছুটা স্যাক্রিফাইজ় করতে হবে । তবেই দেশ বাঁচবে । বেঁচে যাবে অর্থনীতি ।"

কিন্তু অর্থনীতির নিয়ম বলছে, টাকা ছাপালে দেশের রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে যায় । পঙ্কজ রায়ের কথায়, "ওগুলো বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে শেখায় । তাদের সুবিধার জন্যই এটা করে । কারণ ফিসক্যাল ডেফিসিট বেড়ে গেলে তার অনেকখানি দায়িত্ব নিতে হয় এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে । এই সময়টা ফিসক্যাল ডেফিসিট নিয়ে ভাবার সময় নয় । এই সময়টা দেশের মানুষকে বাঁচানোর সময় । এটা মনে রাখতে হবে । এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে টাকা ছাপাতে হবে কিংবা মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে ।"

Last Updated : Apr 10, 2020, 10:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.