কলকাতা, 13 জুলাই: নানা অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি জায়গায় ভোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন ৷ বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা জানিয়েছেন, যে বুথগুলিতে ভোট বাতিল হয়েছে, সেখানে ফের নির্বাচন হবে ৷ হাওড়ার সাঁকরাইলে 15টি বুথে, হুগলি জেলার বেরিবেরিয়া বুথে, উত্তর 24 পরগনার হাবরার 2 নং ব্লকের 4টি বুথে (বুরকুণ্ডার 3টি বুথে এবং গুমার একটি বুথে) ভোট বাতিল করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে কমিশন ৷
কমিশন সুত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে । তবে এটি পুনর্নির্বাচন নয় । নতুন করে নির্বাচন হবে ৷
রাজ্যের ভোটগ্রহণ ও গণনার প্রক্রিয়ায় শাসকদলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৷ রাজ্যপালের পিস রুমে প্রাপ্ত অভিযোগগুলির বিচারবিভাগীয় যাচাইয়ের জন্য তা হাইকোর্টে জমা দিতে আজ নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ হিংসা ও অন্যান্য সমস্ত অভিযোগের তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলে স্থগিতাদেশ দেওয়া যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ৷
নির্বাচন কমিশনের জন্য জারি করা নতুন পরামর্শে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে যে, "আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করছি, আমরা স্পষ্ট করে দিচ্ছি যে এখনও পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, যেমন ভোট, ফলাফল ইত্যাদি সবই বর্তমান পিটিশন নিয়ে এই আদালতের পরবর্তী নির্দেশের উপর নির্ভর করছে । নির্বাচিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও তাঁদের নির্বাচন আমাদের পরবর্তী নির্দেশের উপর নির্ভর করছে ।" রাজভবনের পিস রুমে প্রাপ্ত 7500টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে হাইকোর্টে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে হিংসা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ না করে ব্যবস্থা নিন, রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতাকে বার্তা রবিশঙ্করের
যদিও রাজ্যপালের নির্দেশকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা । রাজ্যপালের নির্দেশে রাজভবনের পিস রুমের অভিযোগ তিনি হাইকোর্টে জমা দিচ্ছেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি একটু বিরক্ত হয়ে বলেন, "কার কাছে জমা দেব !" প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ৷
উল্লেখ্য, সাঁকরাইলে বিরোধীদের জয়ী আসনে গায়ের জোরে তাঁদের হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে । সাঁকরাইল ব্লকের অন্তর্গত একাধিক বুথে জয়ী বিরোধী দলের প্রার্থীদের সার্টিফিকেট কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে সাঁকরাইল বিধানসভার বিধায়ক প্রিয়া পালের বিরুদ্ধে । সাঁকরাইল ব্লকের সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোটগণনা কেন্দ্রের মধ্যে অবৈধ প্রবেশ পত্র দিয়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের গণনাকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে বিরোধী দলের প্রার্থী-সহ গণনা কর্মীদের বের করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে বিধায়কের বিরুদ্ধে । এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ভোটগণনা বন্ধ করে গণনাকেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে আসেন নিরাপত্তার অভাব বোধ করা সরকারি ভোটগণনা কর্মীরা । গোটা গণনাকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না বলে জানা গিয়েছে ৷
সূত্রের খবর, সাঁকরাইল ব্লকের তৃণমূল বিধায়ক প্রিয়া পাল 232 নম্বর বুথের জয়ী বিজেপি প্রার্থী অভিষেক মিশ্রর সার্টিফিকেট কেড়ে নেন । এছাড়াও সাঁকরাইল থানা এলাকার মানিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের 237, 239, 238 নম্বর বুথের জয়ী বিজেপির প্রার্থী সঞ্চিতা দাস, বাবলু চৌধুরী, মুকেশ সিংয়ের জয়ী হওয়ার সার্টিফিকেট কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । এই ঘটনার প্রতিবাদ করে জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ জানানো হয় ।