ETV Bharat / state

বুথ ফেরত সমীক্ষা : পূর্বে দোলাচল, দক্ষিণে স্পষ্ট; 2021 এর রাজ্য নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্লেষণ

এই ধরনের বুথফেরত সমীক্ষাকে একাধিকবার ভুল প্রমাণ হতে দেখা গিয়েছে । ভোটের পাশা পালটাতে যে বেশি সময় লাগে না তার উদাহরণ ইতিহাসে অনেক রয়েছে । তাই শেষ হাসি কে হাসবে তা জানার জন্য রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ।

author img

By

Published : Apr 30, 2021, 6:32 AM IST

Updated : Apr 30, 2021, 12:08 PM IST

West Bengal Assembly Election 2021
ছবি

কলকাতা, 30 এপ্রিল : 2 মে ৷ অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং কেন্দ্র শাসিত রাজ্য পুদুচেরির স্ট্রং রুমে বন্দি থাকা ইভিএম মেশিনগুলো বাইরে আসবে ৷ আর তার পরই স্পষ্ট হবে সেখানকার সব প্রার্থীদের ভাগ্য ৷ কম করে ছয় জন প্রার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাদের রাজনৈতিক ভাগ্য জানা সম্ভব হবে না ৷ তবে, বর্তমানে পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন অবশ্যই সবার বহু দিন মনে থাকবে ৷

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, ভারতের কোনও রাজ্যের নির্বাচনই পশ্চিমবঙ্গের 294 টি বিধানসভার মতো আর্কষণীয় ছিল না ৷ শুরুটা অবশ্যই হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের হাত ধরে ৷ যারা এবারের নির্বাচনকে আট দফায় ভাগ করেছিল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুরু হয়েছিল গেরুয়া ব্রিগেডের ৷ এই লড়াইয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিল বাম এবং কংগ্রেসের জোট ৷ এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া সেকুলার ফ্রন্ট (এআইএসএফ) ৷ যে দলের প্রবর্তক ছিলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ৷ 294 টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড সংক্রমণের কারণে দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী প্রাণ হারান ৷ তাই 292 টি আসনে ভোট গ্রহণ হয় ৷

দশ বছরের সরকার বিরোধী হাওয়া ছিল এবারের ভোটের অন্যতম ইস্যু ৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পক্ষপাতিত্ব এবং স্বজনপোষণের গুরুতর অভিযোগ ৷ বিশেষ করে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের ধ্বংসলীলা চালানোর পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয় ৷ দ্রুত তীব্র বিরোধী হিসেবে উঠে আসে বিজেপি ৷ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ভাবে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেন ৷ দক্ষিণ কলকাতায় নিজের ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের নামেন ৷ যে ভবানীপুরে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, সত্যজিৎ রায়, এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত মানুষদের জন্মস্থান ৷ মমতা ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে দেন তৃণমূলের প্রবীণতম বিধায়ক বিশ্বস্ত শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ৷

বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বঙ্গের রঙ্গমঞ্চে আর্বিভূত বিজেপি ৷ পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিকে নিজেদের দখলে নিতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গেরুয়া ব্রিগেড ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা প্রত্যেকেই রাজ্যটিতে গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর চেষ্টায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে ফেলতে শুরু করেন ৷

বাংলার এবারের নির্বাচনে মেরুকরণ এবং আঞ্চলিক বর্ণগত বিষয়গুলিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ৷ নির্বাচনের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সফর করেন ৷ সন্দেহ নেই, রাজ্যের মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে দখলে আনার জন্য, তাদের বিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি একটা আন্তর্জাতিক বিশ্বাস অর্জনের তাগিদ এখানে কাজ করেছিল ৷ অমিত শাহ বারবার উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ রাজ্যের প্রায় 35 টি আসন এই রাজবংশীদের প্রভাব রয়েছে ৷ এই আসনগুলি বিজেপির ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে অতিব গুরুত্বপূর্ণ ৷

এবার বাংলা এক অভিনব প্রচার কৌশলের সাক্ষী থেকে । গরমাগরম, চমক ধরানো প্রচার । শাহ থেকে নাড্ডা এমনকি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রত্যেকেই সহানুভূতি আদায়ে এবং চমক ধরানো প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন । রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ থেকে পিছপা হয়নি । তবে, শুধুই কড়া কড়া কথা বলা নয়, প্যারোডি - ছদ্মবেশি কার্টুন তৈরি করে প্রচারের মাত্রাকে অন্য রূপ দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন এবার লড়াইটা কঠিন আছে । আবার বিজেপি জানত, তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরার মতো অবস্থা নেই । আবার কারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ক্যারিশমাও নেই । বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং তাদের মিত্ররা জানত তাদের ক্ষীণ সুযোগ রয়েছে । তবে এবার, বামেরা প্রবীণদের সরিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ- নবীণদের প্রার্থী করেছিল । নতুন শিক্ষিতদের প্রার্থী করে নতুন ঢেউ আনার চেষ্টা করেছিল বামেরা । সত্যি বলতে, কিছুটা এনেও ছিল । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, কোনও দলই ম্যাজিক ফিগার 148 পার করতে পারবে না । যা পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তাদের একচ্ছত্র অনুমতি দেবে ।

West Bengal Assembly Election 2021
টাইমস নাও - সি ভোটার বুথফেরত সমীক্ষা

আরও পড়ুন, ভোটের হিংসায় গ্রাম বাংলার কাছে কি হেরে গেল কলকাতা ?

আমাদের সমীক্ষা বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে 131 টির মতো আসন । বিজেপি পেতে পারে 126 টি আসন । বাম এবং তাদের সহযোগিরা 32 টি আসন পেতে পারে । অন্যদের দখলে থাকতে পারে তিনটি আসন ।

West Bengal Assembly Election 2021
ইটিভি ভারতের বুথফেরত সমীক্ষা

যদি কোনও দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে কি বাংলায় ঘোড়া কেনাবেচাই বিকল্প পথ হয়ে দাঁড়াবে ? না কি আমাদের সমীক্ষাটি ভুল প্রমাণিত করে যে কোনও একটি দল প্রয়োজনীয় নম্বর আদায় করে সংখ্যা গরিষ্ঠ সরকার গঠন করবে ? ইভিএমগুলো সিল করা অবস্থায় আছে । সব উত্তর মিলবে 2 মে ।

সবুজ মাঠ এবং পাহাড়ে ঘেরা অসমে তিন দফায় নির্বাচন হয়েছিল । এখানে মূলত বিজেপি এবং কংগ্রেস অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) জোটের মধ্যে সরাসরি লড়াই হয়েছে । এখানে আরও সাতটি দল রয়েছে । উত্তর পূর্বের প্রবেশদ্বার এই রাজ্যটির ফল ইটিভি ভারতের হিসেবে বেশ চমকপ্রদ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে ।

West Bengal Assembly Election 2021
রিপাবলিক সিএনএক্সের বুথফেরত সমীক্ষা

মনে করা হচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অসমের 126 টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 64 টি পেতে পারে । এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় 55টি আসন পেতে পারে । অসম জাতীয় পরিষদ (এজেপি), রাইজল দল, জেল বন্দি কৃষক নেতা অখিল গগৈ এবং নির্দলরা পেতে পারেন বাকি 7 টি আসন ।

বিগত পাঁচ বছরে বিজেপির কাজের নিরিখে অসমের মানুষের ভোটের চিন্তাধারা বদলেছে । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অসমবাসীর মনে প্রভাব ফেলেছে । কংগ্রেসের মানসিকতা দ্বারা এখানকার মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন । শতাব্দী প্রাচীন এই দলটি বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ- এর সঙ্গে জোট বেঁধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে । এছাড়াও কংগ্রেসের আর একটা সুবিধা হচ্ছে, বোরোল্যান্ড পিপিলস ফ্রন্ট (বিপিএফ) -র সঙ্গে জোট । যা কম করে 12 টি আসনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে । অসমে বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরতে পারে, কিন্তু, তাদের এই জয় খুব একটা সুখকর হবে না । এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং তাঁর ডেপুটি হেমন্ত বিশ্বশর্মা এই ফলাফলে কোনও চমক দেখাতে পারেন কি না । এবার দৃষ্টিটা পূর্ব থেকে দক্ষিণে ঘোরানো যাক ।

প্রথমেই বলতে হয় তামিলনাড়ু কথা । খুব সম্ভবত, এখানে ইপিএসের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । ডিএমকে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ডিএমকে ফ্রন্ট 133 টা আসন নিজেদের দখলে আনতে পারবে । এআইএডিএমকে 89 টি এবং অন্যান্যরা 12টি আসন পেতে পারে । 234 টি বিধানসভা আসন ভিত্তিক তামিলনাড়ুতে ভোট হয়েছিল 6 এপ্রিল । দ্রাবিড় মুননেত্র কাজাঘাম (ডিএমকে) তাদের সভাপতি এম কে স্ট্যালিনকে মুখ্যমন্ত্রী করে পরবর্তী সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে ।

ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে-এর এদাপ্পাদি কে পালানিস্বামী (ইপিএস) বিজেপির সমর্থন নিয়ে দশ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এবার তেমন কিছুই করতে পারবেন না । ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে 90 টির মতো আসন পেতে পারে । কিন্তু, রাজ্যটির পশ্চিমাংশ ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেতে পারে । আমাদের সমীক্ষা বলছে, অর্ধেকের থেকে অনেকটাই বেশি আসন পাবে ডিএমকে ।

আরও পড়ুন, দিনভর ঘরবন্দি থেকে সন্ধ্যায় অনুব্রত বললেন, ফাইন খেলা হল

কংগ্রেস, বাম, বিদুথালাই চিরুথাইগাল কাটচি, মুসলিম পার্টি এবং অন্যান্য দল নিয়ে গঠিত ডিএমকে ফ্রন্ট বিপুল ভোটে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে । পাটিগণিতের হিসেবে এআইএডিএমকে- এর সঙ্গে জোট করে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বিজেপি । এম করুণানিধি বা জে জয়ললিতার অনুপস্থিতিতে এম কে স্ট্যালিন একজন নতুন নেতা হিসেবে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আর্বিভূত হতে চলেছেন ।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে থাকবেন উদয়ানিধি স্ট্যালিন, ডিএমকে দলের আগামী দিনের নেতা চৈপায়ুক ত্রিপলিকান আসন থেকে তিনি লড়াই করছেন । অন্যদিকে, দলের প্রবীণতম সদস্য কাটপাডি থেকে দুরাইমুরুগান এবং তিরুচিরাপল্লী থেকে কে এন নেহরুর কথা বলেতেই হবে ।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী ইপিএস -এর পরাজয় প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু, তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েক জন সদস্য ভাল ফল করতে পারেন । এর মধ্যে শশীকলার ভাইপো টি টি ভি ধিনাকরণের নাম বলতেই হবে । যিনি এআইএডিএমকে-এর অন্যতম কান্ডারি হিসেবে উঠে আসতে চলেছেন । তিনি এবারের ভোটে লড়াই করেছেন কোভিলপাত্তি এলাকা থেকে ।

কংগ্রেস কন্যাকুমারী লোকসভা আসনটি ধরে রাখতে প্রস্তুত । যেখানে বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি লোকসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । আমাদের সমীক্ষা অনুসারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের শিবগঙ্গা জেলাটি বেশ চমকপ্রদ । বাম দলের পাশাপাশি থল তিরুমাভালাভান এই নির্বাচনে ডিএমকে ফ্রন্টের অংশ হিসেবে বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করে ।

স্ট্যালিন যদি শেষ পর্যন্ত বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে ভোটের আগে ডিএমকে-এর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়ণ বিশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে তাঁর সামনে থাকবে । যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, ঋণ মকুব, মেয়েদের মাসিক 1 হাজার 500 টাকা করে অনুদানের মতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ।

প্রতিবেশী কেরালায় 140 টি বিধানসভা আসন । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব বলছে, এখানে সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট এখানে এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করবে । দ্বিতীয় বারের জন্য এখানে তারা সরকার গঠন করবে । এখানে বিরোধীদের কোনও প্রভাবই লক্ষ করা যায়নি । নেই সরকার বিরোধী কোনও বাতাবরণই ।

2016 সালের নির্বাচনে এলডিএফ যে আসন পেয়েছিল, এবার তার থেকে 11 টি আসন কম পেতে পারে । গত বার তারা 93 টি আসন পেয়েছিল । এবার সংখ্যাটি 82 তে নেমে আসতে পারে । তবে লালেরা বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এই রাজ্যটিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে ।

পূর্বাভাসে দেখা গিয়েছে, পিনারাই বিজয়নের এলডিএফ-এর উপর রাজ্যের মানুষের ভরসা করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে । যেমন নিপা ভাইরাসের প্রার্দুভাব, কোভিড প্যানডেমিক বা প্রায়শই বন্যার সময় সরকার যেভাবে সাধারণের পাশে থেকেছে, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে । যে কোনও সঙ্কটের সময় সমাজ কল্যাণমূলক একাধিক পদক্ষেপ, উন্নয়নমূলক কাজ এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের মনে আশা জাগিয়েছে ।

বিরোধী কংগ্রেসের তোলা একাধিক অভিযোগ যেমন দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ বা পিএসসি ব়্যাঙ্ক প্রাপকদের ধর্মঘট সরকারের উপর বেশ খানিকটা চাপ তৈরি করেছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই । কিন্তু, বিজয়ন এবং তাঁর দলের কমরেডরা একাধিক গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে আস্তে আস্তে সেই হারিয়ে যাওয়া জায়গাটা ফের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন ।

এবার ইউডিএফ বেশ কিছুটা আসন বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । 2016 সালে তারা 45টি আসন পেয়েছিল । এবার সংখ্যাটা 56-এ নিয়ে যেতে পারে । মধ্য কেরালা, এবং আইইউএমএল এবারও ইউডিএফ-এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই থাকছে । ইউডিএফ থেকে কেরালা কংগ্রেস (এম) এর বেরিয়ে আসা একটা বড় প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে । আইইউএমএল তাদের ক্ষমতা এবারও বজায় রাখবে, নিঃসন্দেহে তাদের ভোট ব্যাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে । ঐতিহ্যবাহী এলাকা গুলিতে বামেরা তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে । কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ তেমন কিছুই করতে পারবে না ।

আমাদের বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেবে কেরালায় রাহুল গান্ধিও কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না । এলডিএফ-এর গতি রুদ্ধ করতে রাহুল ফ্যাক্টরও কোনও কাজ করবে না এই রাজ্যে, তেমনই মনে করা হচ্ছে । আমাদের সমীক্ষা বলছে, 2019 সালে যে সাতটা লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেসের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল, তার মধ্যে কম করে চারটি এবার বামেদের সঙ্গেই থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ।

তিরুঅনন্তপুরম, যে আসনটিতে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের শশী থারুর । সেই তিরুঅনন্তপুরম লোকসভা এবার বামেরা তাদের হাত শক্ত করেছে । মনে করা হচ্ছে, এখানকার চারটি বিধানসভা নিজেদের দখলে নিতে পারবে তারা । সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি আসন নিজেদের দখলে আনতে পারবে বলেও আশাবাদী লাল ব্রিগেড ।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট 2016 সালে যেখানে জিতেছিল, সেখানেই লড়াই করছে । এই নেমোম বিধানসভা আসনটিতে এলডিএফ এবং ইউডিএফ কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখী । শেষবার এখান থেকে জিতেছিলেন বিজেপির ও রাজাগোপাল । পালাক্কাদ থেকে মেট্রোম্যান শ্রীধরণের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল ।

তবে, চূড়ান্ত রায় জানা যাবে 2 মে । এখন সব নজর কেবল মাত্র ওই দিনটার দিকে ।

কলকাতা, 30 এপ্রিল : 2 মে ৷ অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং কেন্দ্র শাসিত রাজ্য পুদুচেরির স্ট্রং রুমে বন্দি থাকা ইভিএম মেশিনগুলো বাইরে আসবে ৷ আর তার পরই স্পষ্ট হবে সেখানকার সব প্রার্থীদের ভাগ্য ৷ কম করে ছয় জন প্রার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাদের রাজনৈতিক ভাগ্য জানা সম্ভব হবে না ৷ তবে, বর্তমানে পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন অবশ্যই সবার বহু দিন মনে থাকবে ৷

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, ভারতের কোনও রাজ্যের নির্বাচনই পশ্চিমবঙ্গের 294 টি বিধানসভার মতো আর্কষণীয় ছিল না ৷ শুরুটা অবশ্যই হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের হাত ধরে ৷ যারা এবারের নির্বাচনকে আট দফায় ভাগ করেছিল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুরু হয়েছিল গেরুয়া ব্রিগেডের ৷ এই লড়াইয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিল বাম এবং কংগ্রেসের জোট ৷ এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া সেকুলার ফ্রন্ট (এআইএসএফ) ৷ যে দলের প্রবর্তক ছিলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ৷ 294 টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড সংক্রমণের কারণে দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী প্রাণ হারান ৷ তাই 292 টি আসনে ভোট গ্রহণ হয় ৷

দশ বছরের সরকার বিরোধী হাওয়া ছিল এবারের ভোটের অন্যতম ইস্যু ৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পক্ষপাতিত্ব এবং স্বজনপোষণের গুরুতর অভিযোগ ৷ বিশেষ করে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের ধ্বংসলীলা চালানোর পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয় ৷ দ্রুত তীব্র বিরোধী হিসেবে উঠে আসে বিজেপি ৷ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ভাবে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেন ৷ দক্ষিণ কলকাতায় নিজের ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের নামেন ৷ যে ভবানীপুরে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, সত্যজিৎ রায়, এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত মানুষদের জন্মস্থান ৷ মমতা ভবানীপুর আসনটি ছেড়ে দেন তৃণমূলের প্রবীণতম বিধায়ক বিশ্বস্ত শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ৷

বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বঙ্গের রঙ্গমঞ্চে আর্বিভূত বিজেপি ৷ পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিকে নিজেদের দখলে নিতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গেরুয়া ব্রিগেড ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা প্রত্যেকেই রাজ্যটিতে গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর চেষ্টায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে ফেলতে শুরু করেন ৷

বাংলার এবারের নির্বাচনে মেরুকরণ এবং আঞ্চলিক বর্ণগত বিষয়গুলিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ৷ নির্বাচনের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সফর করেন ৷ সন্দেহ নেই, রাজ্যের মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে দখলে আনার জন্য, তাদের বিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি একটা আন্তর্জাতিক বিশ্বাস অর্জনের তাগিদ এখানে কাজ করেছিল ৷ অমিত শাহ বারবার উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ রাজ্যের প্রায় 35 টি আসন এই রাজবংশীদের প্রভাব রয়েছে ৷ এই আসনগুলি বিজেপির ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে অতিব গুরুত্বপূর্ণ ৷

এবার বাংলা এক অভিনব প্রচার কৌশলের সাক্ষী থেকে । গরমাগরম, চমক ধরানো প্রচার । শাহ থেকে নাড্ডা এমনকি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রত্যেকেই সহানুভূতি আদায়ে এবং চমক ধরানো প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন । রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ থেকে পিছপা হয়নি । তবে, শুধুই কড়া কড়া কথা বলা নয়, প্যারোডি - ছদ্মবেশি কার্টুন তৈরি করে প্রচারের মাত্রাকে অন্য রূপ দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন এবার লড়াইটা কঠিন আছে । আবার বিজেপি জানত, তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরার মতো অবস্থা নেই । আবার কারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ক্যারিশমাও নেই । বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং তাদের মিত্ররা জানত তাদের ক্ষীণ সুযোগ রয়েছে । তবে এবার, বামেরা প্রবীণদের সরিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ- নবীণদের প্রার্থী করেছিল । নতুন শিক্ষিতদের প্রার্থী করে নতুন ঢেউ আনার চেষ্টা করেছিল বামেরা । সত্যি বলতে, কিছুটা এনেও ছিল । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, কোনও দলই ম্যাজিক ফিগার 148 পার করতে পারবে না । যা পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তাদের একচ্ছত্র অনুমতি দেবে ।

West Bengal Assembly Election 2021
টাইমস নাও - সি ভোটার বুথফেরত সমীক্ষা

আরও পড়ুন, ভোটের হিংসায় গ্রাম বাংলার কাছে কি হেরে গেল কলকাতা ?

আমাদের সমীক্ষা বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে 131 টির মতো আসন । বিজেপি পেতে পারে 126 টি আসন । বাম এবং তাদের সহযোগিরা 32 টি আসন পেতে পারে । অন্যদের দখলে থাকতে পারে তিনটি আসন ।

West Bengal Assembly Election 2021
ইটিভি ভারতের বুথফেরত সমীক্ষা

যদি কোনও দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে কি বাংলায় ঘোড়া কেনাবেচাই বিকল্প পথ হয়ে দাঁড়াবে ? না কি আমাদের সমীক্ষাটি ভুল প্রমাণিত করে যে কোনও একটি দল প্রয়োজনীয় নম্বর আদায় করে সংখ্যা গরিষ্ঠ সরকার গঠন করবে ? ইভিএমগুলো সিল করা অবস্থায় আছে । সব উত্তর মিলবে 2 মে ।

সবুজ মাঠ এবং পাহাড়ে ঘেরা অসমে তিন দফায় নির্বাচন হয়েছিল । এখানে মূলত বিজেপি এবং কংগ্রেস অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) জোটের মধ্যে সরাসরি লড়াই হয়েছে । এখানে আরও সাতটি দল রয়েছে । উত্তর পূর্বের প্রবেশদ্বার এই রাজ্যটির ফল ইটিভি ভারতের হিসেবে বেশ চমকপ্রদ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে ।

West Bengal Assembly Election 2021
রিপাবলিক সিএনএক্সের বুথফেরত সমীক্ষা

মনে করা হচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট অসমের 126 টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 64 টি পেতে পারে । এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় 55টি আসন পেতে পারে । অসম জাতীয় পরিষদ (এজেপি), রাইজল দল, জেল বন্দি কৃষক নেতা অখিল গগৈ এবং নির্দলরা পেতে পারেন বাকি 7 টি আসন ।

বিগত পাঁচ বছরে বিজেপির কাজের নিরিখে অসমের মানুষের ভোটের চিন্তাধারা বদলেছে । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অসমবাসীর মনে প্রভাব ফেলেছে । কংগ্রেসের মানসিকতা দ্বারা এখানকার মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন । শতাব্দী প্রাচীন এই দলটি বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ- এর সঙ্গে জোট বেঁধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে । এছাড়াও কংগ্রেসের আর একটা সুবিধা হচ্ছে, বোরোল্যান্ড পিপিলস ফ্রন্ট (বিপিএফ) -র সঙ্গে জোট । যা কম করে 12 টি আসনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে । অসমে বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরতে পারে, কিন্তু, তাদের এই জয় খুব একটা সুখকর হবে না । এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং তাঁর ডেপুটি হেমন্ত বিশ্বশর্মা এই ফলাফলে কোনও চমক দেখাতে পারেন কি না । এবার দৃষ্টিটা পূর্ব থেকে দক্ষিণে ঘোরানো যাক ।

প্রথমেই বলতে হয় তামিলনাড়ু কথা । খুব সম্ভবত, এখানে ইপিএসের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । ডিএমকে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ডিএমকে ফ্রন্ট 133 টা আসন নিজেদের দখলে আনতে পারবে । এআইএডিএমকে 89 টি এবং অন্যান্যরা 12টি আসন পেতে পারে । 234 টি বিধানসভা আসন ভিত্তিক তামিলনাড়ুতে ভোট হয়েছিল 6 এপ্রিল । দ্রাবিড় মুননেত্র কাজাঘাম (ডিএমকে) তাদের সভাপতি এম কে স্ট্যালিনকে মুখ্যমন্ত্রী করে পরবর্তী সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে ।

ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে-এর এদাপ্পাদি কে পালানিস্বামী (ইপিএস) বিজেপির সমর্থন নিয়ে দশ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এবার তেমন কিছুই করতে পারবেন না । ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে 90 টির মতো আসন পেতে পারে । কিন্তু, রাজ্যটির পশ্চিমাংশ ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেতে পারে । আমাদের সমীক্ষা বলছে, অর্ধেকের থেকে অনেকটাই বেশি আসন পাবে ডিএমকে ।

আরও পড়ুন, দিনভর ঘরবন্দি থেকে সন্ধ্যায় অনুব্রত বললেন, ফাইন খেলা হল

কংগ্রেস, বাম, বিদুথালাই চিরুথাইগাল কাটচি, মুসলিম পার্টি এবং অন্যান্য দল নিয়ে গঠিত ডিএমকে ফ্রন্ট বিপুল ভোটে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে । পাটিগণিতের হিসেবে এআইএডিএমকে- এর সঙ্গে জোট করে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বিজেপি । এম করুণানিধি বা জে জয়ললিতার অনুপস্থিতিতে এম কে স্ট্যালিন একজন নতুন নেতা হিসেবে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আর্বিভূত হতে চলেছেন ।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে নিঃসন্দেহে থাকবেন উদয়ানিধি স্ট্যালিন, ডিএমকে দলের আগামী দিনের নেতা চৈপায়ুক ত্রিপলিকান আসন থেকে তিনি লড়াই করছেন । অন্যদিকে, দলের প্রবীণতম সদস্য কাটপাডি থেকে দুরাইমুরুগান এবং তিরুচিরাপল্লী থেকে কে এন নেহরুর কথা বলেতেই হবে ।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী ইপিএস -এর পরাজয় প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু, তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েক জন সদস্য ভাল ফল করতে পারেন । এর মধ্যে শশীকলার ভাইপো টি টি ভি ধিনাকরণের নাম বলতেই হবে । যিনি এআইএডিএমকে-এর অন্যতম কান্ডারি হিসেবে উঠে আসতে চলেছেন । তিনি এবারের ভোটে লড়াই করেছেন কোভিলপাত্তি এলাকা থেকে ।

কংগ্রেস কন্যাকুমারী লোকসভা আসনটি ধরে রাখতে প্রস্তুত । যেখানে বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি লোকসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । আমাদের সমীক্ষা অনুসারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের শিবগঙ্গা জেলাটি বেশ চমকপ্রদ । বাম দলের পাশাপাশি থল তিরুমাভালাভান এই নির্বাচনে ডিএমকে ফ্রন্টের অংশ হিসেবে বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করে ।

স্ট্যালিন যদি শেষ পর্যন্ত বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে ভোটের আগে ডিএমকে-এর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়ণ বিশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে তাঁর সামনে থাকবে । যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, ঋণ মকুব, মেয়েদের মাসিক 1 হাজার 500 টাকা করে অনুদানের মতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ।

প্রতিবেশী কেরালায় 140 টি বিধানসভা আসন । ইটিভি ভারতের বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব বলছে, এখানে সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট এখানে এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করবে । দ্বিতীয় বারের জন্য এখানে তারা সরকার গঠন করবে । এখানে বিরোধীদের কোনও প্রভাবই লক্ষ করা যায়নি । নেই সরকার বিরোধী কোনও বাতাবরণই ।

2016 সালের নির্বাচনে এলডিএফ যে আসন পেয়েছিল, এবার তার থেকে 11 টি আসন কম পেতে পারে । গত বার তারা 93 টি আসন পেয়েছিল । এবার সংখ্যাটি 82 তে নেমে আসতে পারে । তবে লালেরা বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এই রাজ্যটিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে ।

পূর্বাভাসে দেখা গিয়েছে, পিনারাই বিজয়নের এলডিএফ-এর উপর রাজ্যের মানুষের ভরসা করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে । যেমন নিপা ভাইরাসের প্রার্দুভাব, কোভিড প্যানডেমিক বা প্রায়শই বন্যার সময় সরকার যেভাবে সাধারণের পাশে থেকেছে, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে । যে কোনও সঙ্কটের সময় সমাজ কল্যাণমূলক একাধিক পদক্ষেপ, উন্নয়নমূলক কাজ এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের মনে আশা জাগিয়েছে ।

বিরোধী কংগ্রেসের তোলা একাধিক অভিযোগ যেমন দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ বা পিএসসি ব়্যাঙ্ক প্রাপকদের ধর্মঘট সরকারের উপর বেশ খানিকটা চাপ তৈরি করেছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই । কিন্তু, বিজয়ন এবং তাঁর দলের কমরেডরা একাধিক গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে আস্তে আস্তে সেই হারিয়ে যাওয়া জায়গাটা ফের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন ।

এবার ইউডিএফ বেশ কিছুটা আসন বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । 2016 সালে তারা 45টি আসন পেয়েছিল । এবার সংখ্যাটা 56-এ নিয়ে যেতে পারে । মধ্য কেরালা, এবং আইইউএমএল এবারও ইউডিএফ-এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই থাকছে । ইউডিএফ থেকে কেরালা কংগ্রেস (এম) এর বেরিয়ে আসা একটা বড় প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে । আইইউএমএল তাদের ক্ষমতা এবারও বজায় রাখবে, নিঃসন্দেহে তাদের ভোট ব্যাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে । ঐতিহ্যবাহী এলাকা গুলিতে বামেরা তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে । কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ তেমন কিছুই করতে পারবে না ।

আমাদের বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেবে কেরালায় রাহুল গান্ধিও কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না । এলডিএফ-এর গতি রুদ্ধ করতে রাহুল ফ্যাক্টরও কোনও কাজ করবে না এই রাজ্যে, তেমনই মনে করা হচ্ছে । আমাদের সমীক্ষা বলছে, 2019 সালে যে সাতটা লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেসের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল, তার মধ্যে কম করে চারটি এবার বামেদের সঙ্গেই থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ।

তিরুঅনন্তপুরম, যে আসনটিতে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের শশী থারুর । সেই তিরুঅনন্তপুরম লোকসভা এবার বামেরা তাদের হাত শক্ত করেছে । মনে করা হচ্ছে, এখানকার চারটি বিধানসভা নিজেদের দখলে নিতে পারবে তারা । সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি আসন নিজেদের দখলে আনতে পারবে বলেও আশাবাদী লাল ব্রিগেড ।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট 2016 সালে যেখানে জিতেছিল, সেখানেই লড়াই করছে । এই নেমোম বিধানসভা আসনটিতে এলডিএফ এবং ইউডিএফ কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখী । শেষবার এখান থেকে জিতেছিলেন বিজেপির ও রাজাগোপাল । পালাক্কাদ থেকে মেট্রোম্যান শ্রীধরণের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল ।

তবে, চূড়ান্ত রায় জানা যাবে 2 মে । এখন সব নজর কেবল মাত্র ওই দিনটার দিকে ।

Last Updated : Apr 30, 2021, 12:08 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.