কলকাতা, 5 অক্টোবর: থ্রেট কালচারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিল আরজি কর হাসপাতাল। অভিযুক্ত 59 জনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা পড়েছিল আগেই। কলেজ কাউন্সিল বৈঠকে শনিবার তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার পরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কাউন্সিল। অভিযুক্তদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেই ভাগ অনুযায়ী, 10 জনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁরাই এই থ্রেট কালচারের অন্যতম মাথা বলে কাউন্সিল মনে করে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠনের সভাপতি অনিকেত মাহাতো বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্বরূপ জানান,
- অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হয়েছে ৷
- তাঁদেরকে হস্টেল থেকেও বিতাড়িত করা হয়েছে ৷
- অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগগুলি আইসিসির কাছে পাঠানো হবে ।
- মেডিক্য়াল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির বিষয়ে এই অভিযুক্তদের নাম পাঠানো হবে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলকে ।
- অভিযুক্তদের পরিবারকেও পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হবে ৷
অভিযুক্ত 59 জনের বিরুদ্ধে 14 ধরনের অভিযোগ পেয়েছেন তদন্ত কমিটির 7 জন সদস্য। সেগুলি কী কী-
- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো ৷
- হস্টেলের বাইরে বের করে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো।
- গভীর রাতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ৷
- কমনরুমে নিয়ে গিয়ে সকলের সামনে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ও দুর্ব্যবহার ৷
- ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগদান করতে বাধ্য করা ৷
- গভীর রাতে মদ্যপান করা এবং ড্রাগস নিতে বাধ্য করা ৷
- গভীর রাতে কমনরুমে নিয়ে গিয়ে নানা ভাবে হেনস্থা করা।
- পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ ৷
- ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট করতে দেওয়া হবে না বলে ভয় দেখানো ৷
- যৌন হেনস্থা হয়েছে এমন মিথ্যা এফআইআর দায়েরের ভয় দেখানোর অভিযোগ।
- আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানিকতলা হস্টেলে মধ্যরাতে ডাক্তারি পড়ুয়াদের উপর হামলা ৷
- পড়ুয়া চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা ৷
- টাকার বিনিময়ে জোর করে ইন্টার্ন ও হাউস স্টাফদের ডিউটি সিডিউল পরিবর্তনের অভিযোগ।
অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে 3টি ক্যাটিগরিতে ভাগ করা হয়েছে অভিযুক্তদের। ক্যাটেগরি '1-এর A'-থ্রেট সিন্ডিকেটের জড়িতদের মধ্যে সবথেকে বেশি অভিযোগ রয়েছে 10 জনের বিরুদ্ধে ৷
- চিকিৎসক সৌরভ পাল
- আশিস পাণ্ডে
- অভিষেক সেন
- আয়ুশ্রী থাপা
- নির্জন বাগচী
- শরিফ হাসান
- নীলাদ্রী দেবনাথ
- অমরেন্দ্র সিং
- সৎপাল সিং
- তানবীর আহমেদ কাজি
ক্যাটেগরি '1-এর B- বিভাগে রয়েছে 27 জন ডাক্তারি পড়ুয়ার নাম ৷
ক্যাটেগরি 2-এ রয়েছে 16 জন ডাক্তারি পড়ুয়ার নাম ৷
ক্যাটেগরি 3- এ রাখা হয়েছে 6 জন ডাক্তারি পড়ুয়াকে ৷
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর 1টা থেকে অধ্যক্ষ অফিসে কলেজ কাউন্সিল বৈঠক শুরু হয়। এদিনের বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন কলেজ কাউন্সিলের সদস্যরা। এছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকরা। বৈঠক শুরু হওয়ার পর কলেজ কাউন্সিল ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা ঘেরাও করে রাখেন কলেজ কাউন্সিলের সদস্যদের। কেন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরেও এতদিন দেরি হল সেই প্রশ্নই তাঁরা তোলেন । কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক চলে প্রায় রাত 8টা পর্যন্ত ।
প্রসঙ্গত, থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে প্রথমে নাম জমা পড়েছিল 51 জনের। তারপর সেই তালিকায় 1 জনের নাম বাদ যায় । আর 9 জনের নাম যুক্ত হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে 7 জনের তদন্ত কমিটি গঠিত হয় ৷ অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারীদের দু'পক্ষকেই বসিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। সেই তদন্ত করার পর তাঁরা অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষর কাছে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই শনিবার কলেজ কাউন্সিল বৈঠক হয়। যেখানে এই সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।