কলকাতা, 13 জুন : মন্ত্রীর অনুরোধ-আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজেনি মঙ্গলবার । আর বুধবার স্বাস্থ্যসচিবের আবেদন-আশ্বাসের পরে বরফ গলল না । যার জেরে, অচলাবস্থার অবসান ঘটেনি NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । মুখ্যমন্ত্রীকে NRS-এ আসতে হবে বলে নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনকারীরা ।
আন্দোলনকারীদের তরফে বুধবার রাতে জানানো হয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে কর্মবিরতি । বুধবার রাতে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও অবস্থানে অনড় ছিলেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা । NRS-এর এই আন্দোলনের সমর্থনে অন্যান্য মেডিকেল কলেজে চালু কর্মবিরতিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জারি রয়েছে ।
এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত থেকে কর্মবিরতি করছেন NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা । জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাসপাতালে আসেন মন্ত্রী নির্মল মাজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা । দফায় দফায় আলোচনার পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি । কারণ, আন্দোলনরতদের দাবিগুলি পূরণ হয়নি বলে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মবিরতিরতদের তরফে জানানো হয়েছে ।
মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার সময় সংবাদমাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, "ওরা(আন্দোলনকারীরা) কতগুলো দাবি করেছিল । যেমন, এখানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো, পুলিশের অ্যাক্টিভিটি আরও বাড়ানো । পুলিশ কমিশনার নিজেই এসেছেন । পুলিশের তরফে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার, তার সব নেওয়া হবে । নিরাপত্তা থেকে সবকিছু যাতে আরও বেশি জোরদার হয়, সেগুলো দেখা হবে। ওরা ওদের আরও কতগুলো বক্তব্য আমাদের বলেছে । সেগুলি নিশ্চিত ভাবে আমরা দেখব কী করা যায়।" একইসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, "আমরা অনুরোধ করব, জুনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিন । যাতে কোনও মতে মানুষের পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, সেটা যেন তাঁরা দেখেন । আমাদের বিশ্বাস, যাঁরা ডাক্তার, তাঁরা মানুষের পরিষেবা দেবেন । এটা সর্বাগ্রে তাঁরা অগ্রাধিকার দেবেন । বাকি বিষয়গুলি আমরা দেখে নিচ্ছি ।"
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর এমন অনুরোধের পরেও অবস্থানে অনড় থেকেছেন আন্দোলনকারীরা । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরতদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন । বৈঠকের শেষে স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহার সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় । সেখানো জানানো হয়, NRS-এর দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে 5 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এই 5 জন এখন পুলিশ হেপাজতে রয়েছে।
একইসঙ্গে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছেন । প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে চলেছেন । এই ঘটনায় জখম ডাক্তারের জন্য যথাসম্ভব চিকিৎসা এবং স্পেশাল কেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে । জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যসচিব দেখা করে কথা বলেছেন । পরিবহর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই । অবিলম্বে বিক্ষোভরত ডাক্তাররা যাতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়ে কাজে যোগদান করেন এবং চিকিৎসার মত জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক করে তোলেন, তার জন্য আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব। এই ধরনের আন্দোলনে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হাওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন । চিকিৎসা জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে । এই পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটাবে এমন কোনও কাজ কাম্য নয়, এই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ।
এরপরও কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা বলেননি NRS-এর আন্দোলনকারীরা । বরং তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে । তাঁদের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি । NRS-এ মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে হবে । মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আন্দোলনকারীরা শুনতে চান, এই ঘটনায় কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । সোমবার মৃত রোগীর পরিজনরা যখন জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই আশঙ্কায় ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । অথচ, এই সময়ের মধ্যে পুলিশের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ । এই সময়ের মধ্যে মৃত রোগীর বহু পরিজন হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হয় । এই ঘটনায় NRS-এর পুলিশ ফাঁড়ির OC-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা ।