34 বছরের শাসন ক্ষমতার অবসান । পরিবর্তনের সরকারকে হারাতে একসময়ের যুযুধান দুই পক্ষের জোট বাঁধা । শাসকদলের সেকেন্ড ইন কমান্ড থেকে বিরোধী শিবিরে নাম লেখানো । আর রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের উত্থান । এই দশকে রাজ্যের রাজনীতি এককথায় ঘটনাবহুল ।
2011
রাজ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল 2009 সালে ৷ লোকসভা নির্বাচনে সেবার 19টি আসন পায় তৃণমূল ৷ আর বছর দুয়েক পর 34 বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এল তৃণমূল ৷ 20 মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনিই রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ৷
18 জুলাই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্টেশন (GTA) নিয়ে MoU স্বাক্ষর ৷ শিলিগুড়ির নিকটবর্তী পিনটেল ভিলেজে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার 9GJM) প্রধান বিমল গুরুং ও অন্য নেতারাও উপস্থিত ৷ GTA নিয়ে MoU স্বাক্ষর করলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জি ডি গৌতম, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্মসচিব কে কে পাঠক এবং GJM-র সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ৷ এরপর GTA গঠন নিয়ে 2 সেপ্টেম্বর বিধানসভায় বিল পাশ হয় ৷
2012
7 মার্চ রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল GTA বিল অনুমোদন করেন ৷ রাজ্য সরকার GTA আইন লাগুর বিজ্ঞপ্তি জারি করে 14 মার্চ ৷ GTA-র আওতাধীন 45টি আসনে ভোটের ঘোষণা হয় ৷ তরাই ও ডুয়ার্সের 398টি মৌজা GTA-র অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায় GJM ৷ তাদের দাবি খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকার ৷ ওই কমিটি রিপোর্টে পাঁচটি মৌজা GTA-তে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে ৷ এরপর রাজ্য সরকার ভোটের তারিখ ঘোষণা করে ৷ বিভিন্ন দল নির্বাচন বয়কট করে ৷ প্রথমে নির্বাচন বয়কটের হুমকি দিলেও শেষপর্যন্ত ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় GJM । তারা 28টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে ৷ 29 জুলাই 17টি আসনে ভোটগ্রহণ হয় ৷ সবকটি আসনেই জেতেন GJM প্রার্থীরা ৷ 4 অগাস্ট GTA গঠন হয় ৷ GTA-র CEO (চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার) হন বিমল গুরুং ৷
2013
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে জেলা পরিষদের 825টি আসনের মধ্যে 531টি আসনে জেতে তৃণমূল ৷ আর বামেরা পায় 213টি আসন ৷ BJP জেলা পরিষদে একটিও আসন পায়নি ৷
2014
10 ফেব্রুয়ারি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধীর চৌধুরি ৷
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের জয়জয়কার ৷ 42টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেল 34টি আসন ৷ কংগ্রেস 4টি, বামেরা 2টি এবং BJP 2টি আসনে জেতে ৷
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে দুটি আসন পেলেও ভোটের হার বাড়ে BJP-র ৷ 2009 সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছিল 6.1 শতাংশ ভোট ৷ আর পরের লোকসভা নির্বাচনেই তা বেড়ে হয় 17 শতাংশ ৷
2015
রাহুল সিনহার জায়গায় BJP-র রাজ্য সভাপতি হলেন দিলীপ ঘোষ ৷
বিমান বসুর জায়গায় CPI(M)-র রাজ্য সম্পাদক হলেন সূর্যকান্ত মিশ্র
2016
বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগে নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রকাশ্যে ৷ ওই স্টিং অপারেশনে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে টাকা নিতে দেখা যায় ৷ যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে হইচই শুরু হয় ৷
বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট করল কংগ্রেস ও বামেরা ৷ আর একাই লড়ল তৃণমূল ৷ জোটের বাধা উড়িয়ে 211 আসন জিতে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় এল ৷ দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
তৃণমূলে যোগ প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইঞার ৷ 2016 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রতীকে জেতেন ৷ তারপর তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছিলেন ৷ অবশেষে সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ তারপরও অবশ্য অনেকদিন তিনি দাবি করেন, কংগ্রেসেই রয়েছেন ৷ বিধায়ক পদও ছাড়েননি ৷ শেষপর্যন্ত 2017 সালে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পর কংগ্রেস বিধায়ক হিসেবে পদত্যাগ করেন ৷
2017
তৃণমূলের একসময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দলবদল ৷ 3 নভেম্বর BJP-তে যোগ দিলেন মুকুল রায় ৷ অবশ্য তার অনেক আগে থেকে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল ৷ সারদা এবং নারদকাণ্ডে তাঁর নাম জড়ানোর পর থেকেই তৃণমূলে মুকুল ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছিলেন ৷
2018
পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে জেলা পরিষদে 792টি আসন পায় তৃণমূল ৷ বামেরা জেলা পরিষদে মাত্র একটি আসন পায় ৷ BJP পায় 23টি আসন ৷
অধীরের জায়গায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হলেন সোমেন মিত্র ৷ 22 সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেন তিনি ৷
2019
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোর টক্কর BJP-র ৷ 42টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেল 22টি আসন ৷ আর BJP পায় 18টি আসন ৷ বাকি দুটি আসন জেতে কংগ্রেস ৷
BJP-তে যোগ দিলেন মমতার একসময়ের বিশ্বস্ত সৈনিক শোভন চট্টোপাধ্যায় ৷ 14 অগাস্ট দিল্লিতে BJP-র সদর দপ্তরে তিনি ও বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায় BJP-তে যোগ দেন ৷ তবে নতুন দলের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর মনোমালিন্য প্রকাশ্যে এসেছে ৷