কলকাতা, 21 সেপ্টেম্বর: অন্তসত্ত্বার শারীরিক অবস্থা এতটাই জটিল হয়ে গিয়েছিল যে, প্রসব করানোর জন্য তাঁকে ডেলিভারি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার মতো সময় চিকিৎসকদের হাতে ছিল না । এমনকী ওই অন্তসত্ত্বা কোরোনা আক্রান্ত কি না তাও পরীক্ষা করে দেখার মতো সময় ছিল না । এই ধরনের পরিস্থিতির মাঝে ঝুঁকি নিয়ে ওই অন্তঃসত্ত্বা এবং তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচাতে হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগেই জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হয় । পরে ওই অন্তঃসত্ত্বার কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে । সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা ।
ওই অন্তসত্ত্বার স্বামী BSF জওয়ান । সল্টলেকের BSF ক্যাম্পে বর্তমানে তাঁর পোস্টিং রয়েছে । তাঁরা ওড়িশার বাসিন্দা । প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় শনিবার বিকেলে তাঁকে সল্টলেকের বেসরকারি ওই হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় । চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, জরুরি ভিত্তিতে দ্রুততার সঙ্গে এই অন্তঃসত্ত্বার প্রসব করাতে হবে। না হলে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। তাই ইমারজেন্সি বিভাগেই দ্রুততার সঙ্গে ওই অন্তসত্ত্বার অস্ত্রোপচার করা হয় । পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাতের ওজন 3.4 কেজি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মা ও সন্তান ভালো আছেন । সেই সঙ্গে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় ওই বেসরকারি হাসপাতালেই প্রসূতির কোরোনা চিকিৎসা চলছে । এবং সদ্যোজাতকে পাঠানো হয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ।
সল্টলেকের বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড নেই । সেই কারণে সদ্যোজাতকে প্রথমে সল্টলেকের ওই হাসপাতাল থেকে তাদেরই মুকুন্দপুরে অবস্থিত ইউনিটে পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছিল । তবে মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালেও জায়গা না থাকায় স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। স্বাস্থ্যভবন থেকে তখন ওই সদ্যোজাতকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় ।
বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক রেনু সিং বলেন, "মায়ের শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে । সদ্যোজাতও ভালো আছে। এই কারণে আমি খুব খুশি।" তিনি বলেন, "এই অন্তঃসত্ত্বাকে যখন আমাদের হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝা যায় তাঁর গর্ভে বড় আকারের সন্তান রয়েছে। অস্ত্রোপচারের সময় ওই অন্তঃসত্ত্বা যে কোরোনা আক্রান্ত তা নিয়ে আমরা অবগত ছিলাম না । কারণ জরুরি ভিত্তিতে এই অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল ৷ সেই সময় মায়ের অবস্থা এমন ছিল যে কোনও মুহূর্তে তিনি প্রসব করে ফেলবেন। এই কারণে তাঁকে ডেলিভারি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না। যে কারণে আমরা তাঁর প্রসব ইমারজেন্সি বিভাগেই করিয়েছি ।"
বেসরকারি ওই হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য বলেন, "3.4 কেজি ওজনের পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা । তাই পরিস্থিতি কঠিন ছিল। তবে সদ্যোজাত এখন ভালো আছে।"