কলকাতা, 21 মার্চ: ফের কোভিড-19-এর দৈনিক সংক্রমণ 400 পেরিয়ে গেল এ রাজ্যে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে 18 বছরের উপরে প্রাপ্তবয়স্ক সব মানুষকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । এর পাশাপাশি কোভিড-19-এর সেকেন্ড ওয়েভ রুখে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হচ্ছে ।
কোভিড-19-এর সংক্রমণ ফের যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার জেরে চিন্তা বাড়ছে চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশে । দিন কয়েক আগে এ রাজ্যে কোভিড-19-এর দৈনিক সংক্রমণ 200-র নীচে নেমে গিয়েছিল । তবে ফের বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ । রবিবার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় এ রাজ্যে কোভিড-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন 422 জন । গতকাল এই সংখ্যা ছিল 383 । কোভিড-19-এর দৈনিক সংক্রমণ ফের 400 পেরিয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে ।
এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "18 বছরের উপরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের তরফে আমরা দাবি তুলেছি।"
তিনি বলেন, "দেশে দৈনিক সংক্রমণ আবার এখন প্রায় 45 হাজারে পৌঁছে গিয়েছে । প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার এটাই সময়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কোভিড-19-এর সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এটা খুব চিন্তার বিষয় । অবিলম্বে 25 থেকে 45 বছর বয়সিদের ভ্যাকসিনেশন জরুরি ।"
চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "কোভিড-19-এর যে স্ট্রেইনের সংক্রমণ এখন দেখা যাচ্ছে, তাতে সিভিয়ারিটি বেশি, খুব দ্রুত আক্রান্তকে কাবু করে ফেলছে।"
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন,"সবাইকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ রুখে দেওয়া সম্ভব হবে, বিষয়টি এমন নয় । কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক সকলকে ভ্যাকসিন দিলে যেটা হবে, কোভিড-19-এর সংক্রমণের সিভিয়ারিটি কমে যাবে । এর ফলে যদি তাঁরা সংক্রমিত হন তা হলে গুরুতর অসুস্থ হবেন না । কোভিড-19-এর ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতি বয়স্কদের এবং যাঁদের কোমরবিডিটি আছে তাঁদের ক্ষেত্রে হয় । ফলে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে কোভিড-19-এ মৃত্যু হার কমানো সম্ভব হবে ।"
তিনি বলেন, "কোভিড-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া তখনই সম্ভব হতে পারে যখন হার্ড ইমিউনিটি হবে । এটা হতে গেলে 65-70 শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন অথবা, সংক্রমণের মাধ্যমে ইমিউনিটি গেইন করতে হবে কিন্তু এর জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না । সেকেন্ড ওয়েভ রুখে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি ।"
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন,"কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যতটা জানা যাচ্ছে, তাতে 100 শতাংশ গ্যারান্টি দেবে এই ভ্যাকসিন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই । এখনও পর্যন্ত 60-70 শতাংশ ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন কার্যকর । ফলে, ভ্যকসিন দেওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত 40 শতাংশের মতো ক্ষেত্রে কাজ হবে না । তার উপর, কতদিন কাজ করবে এই ভ্যাকসিন, তার-ও কোনও তথ্য নেই। এই দিক থেকে প্রশ্ন এখনও রয়ে গিয়েছে।"
তিনি বলেন,"তবে, যতটুকুই কাজ করুক, বেশির ভাগ মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হলে, কিছুটা হলেও হয়তো কাজ হত । কিন্তু, আমাদের দেশে এমন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই যেখানে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক মানুষকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে ।"
আরও পড়ুন : করোনার ধাক্কায় মধ্যবিত্ত থেকে গরিব হয়েছেন 32 মিলিয়ন ভারতীয়
চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "শুধুমাত্র ভ্যাকসিন দিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ রুখে দেওয়া সম্ভব নয় । আমাদের হাতে যে অস্ত্র রয়েছে অর্থাৎ, সকলে যাতে মাস্ক পরেন, ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স মেইনটেইন করেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজড করেন। এ সব মানা হচ্ছে না । সেকেন্ড ওয়েভ রুখতে হলে এই সব বিষয়ের উপরে সরকারকে জোর দিতে হবে ।"