কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: কাটাছেঁড়া ছাড়াই 6 বছরের বালকের জটিল অস্ত্রোপচার (Complicated Eye Surgery) করলেন চিকিৎসকরা ৷ চোখের গুরুতর অসুখে আক্রান্ত হয়েছিল বাঁকুড়ার খুদে বাসিন্দা রুদ্রাঞ্জন সিনহা ৷ দুর্গাপুরের হাসপাতাল তাকে সুস্থ করতে পারেনি ৷ অবশেষে কলকাতার (Kolkata) একটি বেসরকারি হাসপাতালে (Private Hospital) অস্ত্রোপচার হল রুদ্রাঞ্জনের ৷ বর্তমানে সে সম্পূর্ণ সুস্থ ৷
বাঁকুড়ার জিরাবাদের বাসিন্দা রুদ্রাঞ্জন চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিল ৷ ওষুধ খেয়ে তার জ্বর কমে গেলেও চোখ ক্রমশ ফুলতে শুরু করে ৷ সঙ্গে ছিল চোখ ব্যথা এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা ৷ এমনকী, চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছিল তার ৷ স্থানীয় চিকিৎসকের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ না-হওয়ায় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় রুদ্রাঞ্জনকে ৷ সেটা ছিল ডিসেম্বরের 10 তারিখ ৷ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের শল্যচিকিৎসক শান্তনু পাঁজার অধীনে চিকিৎসা শুরু হয়ে ছোট্ট রুদ্রাঞ্জনের ৷ সিটি স্ক্যানে জানা যায়, ওই বালক 'সাইনুসাইটিস উইথ রাইট সাইডেড অরবাইটাল সেলুলাইটিস' (Sinusitis with Right Sided Orbital Cellulitis)-এ আক্রান্ত ৷
আরও পড়ুন: মহিলার পেটে প্রায় সাড়ে 6 কেজি টিউমার, এসএসকেএমে সফল অস্ত্রোপচার
তথ্য বলছে, প্রবল সাইনুসাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটে 1 শতাংশেরও কম ৷ এ এক বিরল এবং গুরুতর অবস্থা ৷ অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের করা অস্ত্রোপচারই সেরে ওঠার একমাত্র উপায় ৷ তাহলেই রোগীর দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো সম্ভব ৷ সাধারণত, কোনও ধরনের সংক্রমণ থেকে এই সমস্যা হয় ৷ এর লক্ষণগুলি হল, নাকের ভিতর বাধা অনুভব করা, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্য়া এবং চোখের আশপাশ, গাল, নাক বা কপাল ফুলে যাওয়া ৷ সাধারণত, ঠান্ডা লেগে, অথবা ফ্লু ভাইরাস আপার এয়ারওয়ে থেকে সাইনাসগুলিতে ছড়িয়ে পড়লে এই ধরনের সমস্যা হয় ৷
গত 12 ডিসেম্বর ডা. পাঁজা ও তাঁর দল রুদ্রাঞ্জনের অস্ত্রোপচার করেন ৷ এক্ষেত্রে তাঁরা 'এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি উইথ অরবিটাল ডিকম্প্রেশন' পদ্ধতি কাজে লাগান এবং আই সকেট ও সাইনাসে জমে থাকা সংক্রমিত পদার্থগুলি বের করে আনেন ৷ এই ব্যবস্থাপনায় রোগীর শরীরে কাটাছেঁড়া করতে হয় না ৷ বিশেষ ধরনের এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সারা হয় ৷ প্রথমে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে সাইনাসগুলিতে ঢোকা হয় এবং সংক্রমিত অংশ পরিষ্কার করা হয় ৷ তারপর চোখের মণি আর সাইনাস ছিদ্রের মধ্যেকার দেওয়াল সরিয়ে পেরিঅরবিটাল (Periorbital) নামক সংক্রমিত অংশ কাটা হয় এবং চোখের মণির উপাদানগুলি ঘেঁটে দেখা হয় ৷ চোখের মণির ভিতরের পুঁজ ও অন্য়ান্য দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়া হয় ৷
অস্ত্রোপচারের 48 ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে রুদ্রাঞ্জন ৷ তার চোখ ফোলার সমস্যা মিটে যায়, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং আলাদা আলাদা রং চেনার ক্ষমতা ফিরে আসে ৷ হাসপাতালে থাকাকালীন রুদ্রাঞ্জনের অতিরিক্ত দেখভালে ছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক মৌলিক ও তাঁর দলের সদস্যরা ৷
ডা. কৌশিক মৌলিক জানান, "সাইনাস থেকে ইনফেকশন বাচ্চাটির চোখে ছড়িয়ে গিয়েছিল ৷ তার আই সকেটে পুঁজ জমে গিয়েছিল ৷ রুদ্রাঞ্জন অত্যন্ত অসুস্থ ছিল ৷ চোখের মণির নড়াচড়া কমে গিয়েছিল এবং দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ লোপ পাচ্ছিল ৷ এটি সাইনাস ইনফেকশনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জটিলতাগুলির মধ্যে একটি ৷ সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে বাচ্চাটির দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ চলে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল ৷"