ETV Bharat / state

নেতাজি নগর খুনের নেপথ্যে রং মিস্ত্রি? জোরদার হচ্ছে সন্দেহ

author img

By

Published : Jul 30, 2019, 11:04 PM IST

লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন গোয়েন্দারা । তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বলছে এই কাজ পাকা হাতের নয় । খুনের নেপথ্যে রয়েছে পরিচিত কেউ । তাই কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় ।

নেতাজি নগর

কলকাতা, ৩০ জুলাই : সম্ভাবনা মূলত তিনটে । লুটপাট, সম্পত্তি দখল নিয়ে গোপন পারিবারিক কলহ ও প্রোমোটারের কুদৃষ্টি । নেতাজি নগরে জোড়া খুনের ঘটনায় লালবাজারের হোমিসাইড শাখার দুঁদে গোয়েন্দাদের ডায়েরিতে উঠে এসেছে এই তিন সম্ভাবনার কথা । ইতিমধ্যেই সাতজনকে জেরা করা হয়েছে । পাওয়া গেছে বেশ কিছু তথ্য । সেই সূত্রগুলো জুড়ে প্রাথমিকভাবে প্রথম সম্ভাবনাটাই জোরদার হয়েছে পুলিশের কাছে । অর্থাৎ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন গোয়েন্দারা । তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বলছে এই কাজ পাকা হাতের নয় । খুনের নেপথ্যে রয়েছে পরিচিত কেউ । তাই কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে বাড়ি থেকে উদ্ধার বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ

আজ সকালে দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের অশোকা অ্যাভিনিউয়ের খুন হওয়া দিলীপ মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িটি পেয়েছিলেন পারিবারিক সূত্রে । তাঁর অন‍্য দুই ভাইয়ের ওই বাড়ির উপরে কোন দাবি ছিল কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয় । এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা পাননি । তবে শোনা যাচ্ছে, দিলীপবাবুর মা এই বাড়িটি তাঁর নামে উইল করে দিয়েছিলেন । এখানেই তৈরি হয়েছে একটি সন্দেহ । সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনও গোপন বিবাদ ছিল না তো? তার জেরেই এই খুনের ঘটনা নয় তো?

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ । কারণ, এই খুনের পারিপার্শ্বিকতা । স্থানীয়দের থেকে খবর পাওয়ার পর পুলিশ ওই দোতলা বাড়িতে পৌঁছে সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে উদ্ধার করে দিলীপবাবুর স্ত্রী স্বপ্নার দেহ । তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । পোস্টমর্টেমের প্রাথমিক রিপোর্ট না এলেও দুঁদে গোয়েন্দাদের জহুরে চোখ বলছে পেছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ । চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে । আর দিলীপবাবুর দেহ উদ্ধার হয় শোবার ঘরের খাটে । তাঁর মুখে বালিশের কভার দেওয়ার তোয়ালে গোঁজা ছিল । দিলীপবাবু যাতে চিৎকার করতে না পারেন সেই কারণেই এই কাজ করেছিল খুনি । তাঁর মুখের উপর রাখা ছিল একটি বালিশ । সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে । দোতলার দুটি শোবার ঘরে মোট 10 টি আলমারি । তার মধ্যে আটটি খোলা হয়েছিল চাবি দিয়ে । একটি কাঠের আলমারি জোর করে খোলা হয়েছিল । বন্ধ ছিল শুধু একটি লোহার আলমারি । পাশাপাশি স্বপ্নার গলার সোনার হারটি লোপাট হয়েছে । দিলীপবাবুর হাতের অত্যন্ত প্রিয় দামি ঘড়িটিও নেই । সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা সম্পত্তির কারণে খুন হলে লুটপাট হত না । তাই সেই মোটিভটির সম্ভাবনা ক্ষীণ ।

বছর চারেক ধরে দিলীপবাবুর বাড়িতে কাজ করছেন লতা । তার আগে এই বাড়িতে কাজ করতেন তারই মাসি । লতার বাড়ি সুন্দরবন এলাকায় । লতার মাসি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি যখন কাজ করতেন তখন এক প্রোমোটারের প্রচুর ফোন আসত দিলীপবাবুর কাছে । লতাও একই কথা জানিয়েছেন । কিন্তু, বাড়ি প্রোমোটিং করাতে আপত্তি ছিল দিলীপবাবুর । তবে কি বাড়ির দখল পাওয়ার জন্যই এই খুন?

তদন্তের কাটাকুটি খেলায় সেই সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম । কারণ, খুনের পর এই বাড়ির ও জমির মালিকানা নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে । সাধারণভাবে কোনও প্রোমোটার সেই জটিলতা তৈরি করতে চাইবে না । যদিও কোন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা ।

খুনের পর বাড়িটির অবস্থা দেখে, তদন্তকারীদের জোড়ালো মনে হচ্ছে, লুটপাটের উদ্দেশ্যই এই খুন । জানা গেছে, দিন চারেক আগে বাড়ির ছাদ সারাই এবং ডাইনিং রুমের রঙের কাজ শেষ হয়েছে । এই ধরনের মিস্ত্রিদের সঙ্গে দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল । কারণ, একটা সময় দিলীপবাবু রুফ ট্রিটমেন্টের কাজ করতেন । ৪-৫ বছর আগেও তাঁর ভারত ওয়াটার প্রুফিং কম্পানিটির রমরমা ছিল । সম্প্রতি, অবশ্য এই কম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে । কিছুদিন আগেই স্ট্রোক হয় দিলীপবাবুর । তারপর তিনি সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না । বছর খানেক ধরে দীপক জানা ওরফে বাবাই নামে 22 বছরের এক যুবক মুখোপাধ্যায় পরিবারের দোকানের জিনিসপত্র কেনাকাটার কাজ করত । পরিচালিকা লতা সকাল সাড়ে 10 টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই বাড়িতে থাকতেন । সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি অন্য একটি জায়গায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন । সাড়ে আটটার পর একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করেন । পুলিশ লতার বয়ানে কোন অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত । দীপকের বয়ানেও সেভাবে অসঙ্গতি নেই । বাড়ির তলায় অনেকে ভাড়ায় দোকান চালালেও, কেউই এই দম্পতিকে ভাড়া দিত না । ব্যতিক্রম সুদিন নামে এক যুবক । তাঁর রঙের দোকান রয়েছে এই বাড়ির নিচে । ওই যুবকের সঙ্গে এই দম্পতির ঘনিষ্ঠতা ছিল । এমনকি ব্যাঙ্কের টাকা তুলতেও সুদিনকেই সঙ্গে নিয়ে যেতেন দিলীপ । তাঁকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, দিন কয়েক আগেই 50 হাজার টাকা তুলেছিলেন দিলীপ ।


অন্যদিকে, ছাদ সারাই ও রঙের কাজের জন্য এক পরিচিত ব্যক্তিকে বরাত দিয়েছিলেন দিলীপ । তিনি এক এক দিন এক এক লেবার নিয়ে কাজ করতেন ৷ বিভিন্ন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মাসুদের সঙ্গে যথেষ্ট খোলামেলাভাবে মিশতেন দীলিপবাবু । তাদের সামনেই আলমারি থেকে বের করা হত টাকা । এদিকে, সিঁড়ির তলায় থাকা কলিং বেল টিপলে দীলিপবাবু নিজে দেখে তবেই দরজার চাবি খুলতেন স্বপ্না । সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের অনুমান, এই খুনে রয়েছে পরিচিত কেউ । রং এবং ছাদসারাইয়ের কাজ করা কাউকে এখনও পর্যন্ত জেরা করেনি পুলিশ । তবে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ইঙ্গিত করছে, এই ঘটনার পেছনে থাকতে পারে কোনও মিস্ত্রি । টাকার লোভেই এই খুন ।

কলকাতা, ৩০ জুলাই : সম্ভাবনা মূলত তিনটে । লুটপাট, সম্পত্তি দখল নিয়ে গোপন পারিবারিক কলহ ও প্রোমোটারের কুদৃষ্টি । নেতাজি নগরে জোড়া খুনের ঘটনায় লালবাজারের হোমিসাইড শাখার দুঁদে গোয়েন্দাদের ডায়েরিতে উঠে এসেছে এই তিন সম্ভাবনার কথা । ইতিমধ্যেই সাতজনকে জেরা করা হয়েছে । পাওয়া গেছে বেশ কিছু তথ্য । সেই সূত্রগুলো জুড়ে প্রাথমিকভাবে প্রথম সম্ভাবনাটাই জোরদার হয়েছে পুলিশের কাছে । অর্থাৎ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন গোয়েন্দারা । তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বলছে এই কাজ পাকা হাতের নয় । খুনের নেপথ্যে রয়েছে পরিচিত কেউ । তাই কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে বাড়ি থেকে উদ্ধার বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ

আজ সকালে দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের অশোকা অ্যাভিনিউয়ের খুন হওয়া দিলীপ মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িটি পেয়েছিলেন পারিবারিক সূত্রে । তাঁর অন‍্য দুই ভাইয়ের ওই বাড়ির উপরে কোন দাবি ছিল কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয় । এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা পাননি । তবে শোনা যাচ্ছে, দিলীপবাবুর মা এই বাড়িটি তাঁর নামে উইল করে দিয়েছিলেন । এখানেই তৈরি হয়েছে একটি সন্দেহ । সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনও গোপন বিবাদ ছিল না তো? তার জেরেই এই খুনের ঘটনা নয় তো?

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ । কারণ, এই খুনের পারিপার্শ্বিকতা । স্থানীয়দের থেকে খবর পাওয়ার পর পুলিশ ওই দোতলা বাড়িতে পৌঁছে সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে উদ্ধার করে দিলীপবাবুর স্ত্রী স্বপ্নার দেহ । তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । পোস্টমর্টেমের প্রাথমিক রিপোর্ট না এলেও দুঁদে গোয়েন্দাদের জহুরে চোখ বলছে পেছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ । চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে । আর দিলীপবাবুর দেহ উদ্ধার হয় শোবার ঘরের খাটে । তাঁর মুখে বালিশের কভার দেওয়ার তোয়ালে গোঁজা ছিল । দিলীপবাবু যাতে চিৎকার করতে না পারেন সেই কারণেই এই কাজ করেছিল খুনি । তাঁর মুখের উপর রাখা ছিল একটি বালিশ । সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে । দোতলার দুটি শোবার ঘরে মোট 10 টি আলমারি । তার মধ্যে আটটি খোলা হয়েছিল চাবি দিয়ে । একটি কাঠের আলমারি জোর করে খোলা হয়েছিল । বন্ধ ছিল শুধু একটি লোহার আলমারি । পাশাপাশি স্বপ্নার গলার সোনার হারটি লোপাট হয়েছে । দিলীপবাবুর হাতের অত্যন্ত প্রিয় দামি ঘড়িটিও নেই । সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা সম্পত্তির কারণে খুন হলে লুটপাট হত না । তাই সেই মোটিভটির সম্ভাবনা ক্ষীণ ।

বছর চারেক ধরে দিলীপবাবুর বাড়িতে কাজ করছেন লতা । তার আগে এই বাড়িতে কাজ করতেন তারই মাসি । লতার বাড়ি সুন্দরবন এলাকায় । লতার মাসি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি যখন কাজ করতেন তখন এক প্রোমোটারের প্রচুর ফোন আসত দিলীপবাবুর কাছে । লতাও একই কথা জানিয়েছেন । কিন্তু, বাড়ি প্রোমোটিং করাতে আপত্তি ছিল দিলীপবাবুর । তবে কি বাড়ির দখল পাওয়ার জন্যই এই খুন?

তদন্তের কাটাকুটি খেলায় সেই সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম । কারণ, খুনের পর এই বাড়ির ও জমির মালিকানা নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে । সাধারণভাবে কোনও প্রোমোটার সেই জটিলতা তৈরি করতে চাইবে না । যদিও কোন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা ।

খুনের পর বাড়িটির অবস্থা দেখে, তদন্তকারীদের জোড়ালো মনে হচ্ছে, লুটপাটের উদ্দেশ্যই এই খুন । জানা গেছে, দিন চারেক আগে বাড়ির ছাদ সারাই এবং ডাইনিং রুমের রঙের কাজ শেষ হয়েছে । এই ধরনের মিস্ত্রিদের সঙ্গে দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল । কারণ, একটা সময় দিলীপবাবু রুফ ট্রিটমেন্টের কাজ করতেন । ৪-৫ বছর আগেও তাঁর ভারত ওয়াটার প্রুফিং কম্পানিটির রমরমা ছিল । সম্প্রতি, অবশ্য এই কম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে । কিছুদিন আগেই স্ট্রোক হয় দিলীপবাবুর । তারপর তিনি সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না । বছর খানেক ধরে দীপক জানা ওরফে বাবাই নামে 22 বছরের এক যুবক মুখোপাধ্যায় পরিবারের দোকানের জিনিসপত্র কেনাকাটার কাজ করত । পরিচালিকা লতা সকাল সাড়ে 10 টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই বাড়িতে থাকতেন । সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি অন্য একটি জায়গায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন । সাড়ে আটটার পর একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করেন । পুলিশ লতার বয়ানে কোন অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত । দীপকের বয়ানেও সেভাবে অসঙ্গতি নেই । বাড়ির তলায় অনেকে ভাড়ায় দোকান চালালেও, কেউই এই দম্পতিকে ভাড়া দিত না । ব্যতিক্রম সুদিন নামে এক যুবক । তাঁর রঙের দোকান রয়েছে এই বাড়ির নিচে । ওই যুবকের সঙ্গে এই দম্পতির ঘনিষ্ঠতা ছিল । এমনকি ব্যাঙ্কের টাকা তুলতেও সুদিনকেই সঙ্গে নিয়ে যেতেন দিলীপ । তাঁকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, দিন কয়েক আগেই 50 হাজার টাকা তুলেছিলেন দিলীপ ।


অন্যদিকে, ছাদ সারাই ও রঙের কাজের জন্য এক পরিচিত ব্যক্তিকে বরাত দিয়েছিলেন দিলীপ । তিনি এক এক দিন এক এক লেবার নিয়ে কাজ করতেন ৷ বিভিন্ন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মাসুদের সঙ্গে যথেষ্ট খোলামেলাভাবে মিশতেন দীলিপবাবু । তাদের সামনেই আলমারি থেকে বের করা হত টাকা । এদিকে, সিঁড়ির তলায় থাকা কলিং বেল টিপলে দীলিপবাবু নিজে দেখে তবেই দরজার চাবি খুলতেন স্বপ্না । সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের অনুমান, এই খুনে রয়েছে পরিচিত কেউ । রং এবং ছাদসারাইয়ের কাজ করা কাউকে এখনও পর্যন্ত জেরা করেনি পুলিশ । তবে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ইঙ্গিত করছে, এই ঘটনার পেছনে থাকতে পারে কোনও মিস্ত্রি । টাকার লোভেই এই খুন ।

Intro:কলকাতা, ৩০ জুলাই: সম্ভাবনা মূলত তিনটে। লুটপাট, সম্পত্তি দখল নিয়ে গোপন পারিবারিক কলহ, প্রোমোটারের কুদৃষ্টি। নেতাজি নগরে জোড়া খুনের ঘটনায় লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গুদে গোয়েন্দাদের ডায়েরিতে উঠে এসেছে এই তিন সম্ভাবনার কথা। ইতিমধ্যেই সাতজনকে জেরা করা হয়েছে। পাওয়া গেছে বেশ কিছু তথ্য। সেই সূত্রগুলো জুড়ে প্রাথমিক ভাবে প্রথম সম্ভাবনাটাই জোরদার করছে পুলিশের কাছে। অর্থাৎ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বলছে এই কাজ পাকা হাতের নয়। খুনের নেপথ্যে রয়েছে পরিচিত কেউ। তাই কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।


Body:আজ সকালে দক্ষিণ কলকাতার নেতাজীনগরের অশোকা এভিনিউয়ের খুন হওয়া দিলীপ মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িটি পেয়েছিলেন পারিবারিক সূত্রে। তার অন‍্য দুই ভাইয়ের ওই বাড়িতে কোন দাবি ছিল কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত তদন্তকারীরা পায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে দিলীপবাবুর মা এই বাড়িটি তার নামে উইল করে দিয়েছিলেন। এখানেই তৈরি হয়েছে একটি সন্দেহ। সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনও গোপন বিবাদ ছিল না তো? তার জেরেই এই খুনের ঘটনা নয় তো?

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ, এই খুনের পারিপার্শ্বিকতা। স্থানীয়দের থেকে খবর পাওয়ার পর পুলিশ ওই দোতলা বাড়িতে পৌঁছে সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে উদ্ধার করে দীলিপবাবুর স্ত্রী স্বপ্না দেবীর দেহ। তার নাকে রক্তের দাগ ছিল। পোস্টমর্টেমের প্রাথমিক রিপোর্ট না এলেও দুঁদে গোয়েন্দাদের জহুরে চোখ বলছে পেছন থেকে তার গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত সেটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ। চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। আর দীলিপবাবুর দেহ উদ্ধার হয় শোবার ঘরের খাটে। তার মুখে বালিশের কভার দেওয়ার তোয়ালে গোঁজা ছিল। দিলীপবাবু যাতে চিৎকার করতে না পারেন সেই কারণেই এই কাজ করেছিল খুনি। তার মুখের ওপর রাখা ছিল একটি বালিশ। সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে। দোতলার দুটি শোবার ঘরে মোট 10 টি আলমারি। তার মধ্যে আটটি খোলা হয়েছিল চাবি দিয়ে। একটি কাঠের আলমারি জোর করে খোলা। বন্ধ ছিল শুধু একটি লোহার আলমারি। পাশাপাশি স্বপ্না দেবীর গলার সোনার হারটি লোপাট হয়েছে। দীলিপ বাবুর হাতের অত্যন্ত প্রিয় দামি ঘড়িটিও নেই। সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা সম্পত্তির কারণে খুন হলে লুটপাট হত না। তাই সেই মোটিভটির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বছর চারেক ধরে দীলিপ বাবুর বাড়িতে কাজ করছেন লতা। তার আগে এই বাড়িতে কাজ করতেন তারই মাসি। লতার বাড়ি সুন্দরবন এলাকায়। লতার মাসি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি যখন কাজ করতেন তখন এক প্রোমোটারের প্রচুর ফোন আসতো দীলিপ বাবুর ফোনে। লতাও জানিয়েছেন ফোন করত এক প্রোমোটার। কিন্তু বাড়ি প্রমোটিং করাতে আপত্তি ছিল দিলীপবাবুর। তবে কি বাড়ি দখল পাওয়ার জন্যই এই খুন?

তদন্তের কাটাকুটি খেলায় সেই সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম। কারণ, খুনের পর এই বাড়ির ও জমির মালিকানা নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে। সাধারণভাবে কোনও প্রোমোটার সেই জটিলতা তৈরি করতে চাইবে না। যদিও কোন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

খুনের পর বাড়িটির অবস্থা দেখে, তদন্তকারীদের জোড়ালো মনে হচ্ছে, লুটপাটের উদ্দেশ্যই এই খুন। জানা গেছে, দিন চারেক আগে বাড়ির ছাদ সারাই এবং ডাইনিং রুমের রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই ধরনের মিস্ত্রীদের সঙ্গে দীলিপ বাবুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কারণ, একটা সময় দীলিপবাবু রুফ ট্রিটমেন্টের কাজ করতেন। ৪-৫ বছর আগেও তাঁর ভারত ওয়াটার প্রুফিং কোম্পানিটির রমরমা ছিল। সম্প্রতি অবশ্য এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই স্ট্রোক হয় দীলিপ বাবুর। তারপর তিনি সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না। গত বছর খানেক ধরে দীপক জানা ওরফে বাবাই নামে 22 বছরের এক যুবক মুখোপাধ্যায় পরিবারের দোকানের জিনিসপত্র কেনা কাটার কাজ করতো। পরিচালিকা লতা সকাল সাড়ে 10 টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই বাড়িতে থাকতেন। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি অন্য একটি জায়গায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। সাড়ে আটটার পর একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করেন। পুলিশ লতার বয়ানে কোন অসঙ্গতি খুঁজে পাইনি এখনো পর্যন্ত। দীপকের বয়ানেও সেভাবে অসঙ্গতি নেই। বাড়ির তলায় অনেকে ভাড়ায় দোকান চালালেও, কে বি প্রাই এই দম্পতিকে ভাড়া দিত না। ব্যতিক্রম সুদিন নামে এক যুবক। তাঁর রঙের দোকান রয়েছে এই বাড়ির নিচে। ওই যুবকের সঙ্গে এই দম্পতির ঘনিষ্ঠতা যথেষ্টই। এমনকি ব্যাংকের টাকা তুলতেও সুদিন কেই সঙ্গে নিয়ে যেতেন দিলীপ। তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, দিন কয়েক আগেই 50 হাজার টাকা তুলেছিলেন দিলীপ।


Conclusion:অন্যদিকে, ছাদ সারাই এবং রংয়ের কাজের জন্য এক পরিচিত ব্যক্তিকে বরাত দিয়ে ছিলেন দিলীপ। তিনি এক এক দিন এক এক লেবার নিয়ে কাজ করতেন। বিভিন্ন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মাসুদের সঙ্গে যথেষ্ট খোলামেলাভাবে মিশতেন দীলিপবাবু। তাদের সামনেই আলমারি থেকে বের করা হতো টাকা। এদিকে, সিঁড়ির তলায় থাকা কলিং বেল টিপলে দীলিপবাবু নিজে দেখে তবেই দরজার চাবি খুলতেন স্বপ্না। সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের ধারণা, এই খুনে রয়েছে পরিচিত কেউ। রং এবং ছাদসারাইয়ের কাজ করা কাউকে এখনো পর্যন্ত জেরা করেনি পুলিশ। তবে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ইঙ্গিত করছে, এই ঘটনার পেছনে থাকতে পারে কোন মিস্ত্রি। টাকার লোভেই এই খুন।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.