ETV Bharat / state

কলকাতায় সুস্থ হয়ে উঠল বিরল কাওয়াসাকি ও কোরোনায় আক্রান্ত শিশু, বিশ্বে প্রথম - কোরোনা ভাইরাস

জন্মের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছিল হুগলির বাসিন্দা এক শিশু। পরে বিরল কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় ও COVID-19-এ আক্রান্ত হয়। যদিও দুই ধরনের সংকটই কাটিয়ে উঠেছে সে। এই ঘটনা সারা বিশ্বে প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে।

corona
কোরোনা
author img

By

Published : Jun 1, 2020, 2:46 AM IST

কলকাতা, 1 জুন : বিরল অসুখ কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত চার মাস বয়সি এক শিশু COVID-19 সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছে যায়। অবশেষে, বিরল এই অসুখ এবং COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে হুগলির বাসিন্দা এই শিশুপুত্র এখন সুস্থ রয়েছে। এই শিশুর চিকিৎসা হয়েছে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। চার মাস বয়সি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে একই সঙ্গে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় ও COVID-19 সংক্রমণ এবং তার পরে সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা গোটা বিশ্বে এই প্রথম।

হুগলির বাসিন্দা এই শিশুর জন্ম হয়েছিল কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। জন্মের পর সুস্থ এই শিশুটি বাড়িও ফিরে যায়। এর পর জ্বর হয় তার। প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছিল শিশুটি। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তবে শিশুটির জ্বর কমছিল না। কান্নাকাটিও থামছিল না। এর পর 2 মে এই শিশুকে নিয়ে আসা হয় মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে।

কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিশিয়ান অ্যান্ড নিওনেটাল স্পেশালিস্ট চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য জানিয়েছেন, চার মাস বয়সি এই শিশুকে যখন এখানে নিয়ে আসা হয়, তখন তার হাই ফিভার ছিল, খুব কান্নাকাটি করছিল। কোনওভাবে শান্ত করা যাচ্ছিল না। শিশুটি ভরতি হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। শুরু করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। শিশুটির জ্বর কমছিল না। এই হাসপাতালে ভরতির পরের দিন দেখা যায়, শিশুটির গোটা শরীরে লাল রঙের র‍্যাশ বেরিয়েছে। তার চোখও লাল হয়ে গেছে। একটি চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছে। ঠোঁট, জিভও লাল হয়ে গেছে। শিশুটি কান্নাকাটি করছিল, তাকে খাওয়ানো যাচ্ছিল না, শান্ত করা যাচ্ছিল না। শিশুটি হাই ফিভার নিয়ে এসেছে, সেই কারণে তার সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এদিকে ৩-৪ দিন ধরে হাই ফিভার, তার সঙ্গে শরীরে র‍্যাশ রয়েছে, এই উপসর্গগুলি দেখে রেয়ার ডিস-অর্ডার কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়।

চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য বলেন, "আমাদের সন্দেহ হয়েছিল, এই শিশুটির কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ও হতে পারে। এর পরে ওর ইকো করে দেখা হয়। ইকোর রিপোর্টে দেখা গেল, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের ক্ষেত্রে হার্টে যে পরিবর্তনগুলি হয়, সেগুলি সব এই শিশুটির ক্ষেত্রে রয়েছে। এদিকে সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল, এই শিশুটি COVID-19 পজ়িটিভ। তখন দু'টি বিষয়ে আমরা এক সঙ্গে ডিল করছি, একদিকে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়, অন্যদিকে COVID-19। শিশুটির শারীরিক অবস্থাও প্রচণ্ড ক্রিটিকাল ছিল।" এর পরে কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখেন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসায় এই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তাকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (PICU)-এ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় এই শিশুকে কোনও COVID হাসপাতালে রেফারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, এই শিশুটি COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছে এবং মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে COVID-19 আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসোলেশন বেড নেই। সেই জন্য শিশুটিকে রেফার করা হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। তবে সেখানেও COVID-19-এ আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসোলেশন বেড ছিল না। যে কারণে এই শিশুকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ৭-৮ দিন পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই শিশুর আবার সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয় তার COVID-19 নেগেটিভ এসেছে। এর পরে দিন ১০-এর মাথায় এই শিশুকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। গত শুক্রবার মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ফের এই শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য।

তিনি বলেন, "শিশুটি এখন ভালো আছে। ওর ওজন বেড়েছে, আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাসছে-খেলছে। এই শিশুটির আবার ইকো করে দেখা হয়। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের কারণে এই শিশুটির হার্টের যে আর্টারিগুলো ফুলে গেছিল, সৌভাগ্যবশত সেগুলি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।"

মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, চিকিৎসক ভাস্বতী আচার্য বলেন, "চার মাসের এই শিশুটি কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছিল। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19 এখন একটি নোন অ্যাসোসিয়েশন। যেটা আমরা গত ২-৩ মাস ধরে জানতে পেরেছি পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ থেকে। এই সময় কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এর একটি অ্যাসোসিয়েশন দেখা যাচ্ছে। ছোটো, বড় যে কোনও বয়সি শিশুর ক্ষেত্রেই কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা যাচ্ছে। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় উইথ শক সিনড্রোমও দেখা যাচ্ছে। কোনও কোনও শিশুর ক্ষেত্রে COVID-19 ধরা পড়ছে। তাদের বাঁচানোর জন্য অনেকের ক্ষেত্রে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। কোনও কোনও শিশুকে বাঁচানো যাচ্ছে না।"

চার মাস বয়সি এই শিশুর ক্ষেত্রে প্রথমে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসা শুরু করা হয়। দেখা যায়, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর এই শিশুটির ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। একথা জানিয়ে চিকিৎসক ভাস্বতী আচার্য বলেন, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা গেছে চার বছর এবং এর থেকে বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে। এ দেশ থেকে লাস্ট রিপোর্টেড কেস দেখা গেছে আমাদের এখানে এই শিশুটির চিকিৎসা শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে। ওই শিশুটির বয়স সাড়ে ৭ বছর। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় ছিল, সঙ্গে COVID-19-ও ছিল। ওই শিশুর ক্ষেত্রে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। আমরা বলতে পারি, এখনও পর্যন্ত চার মাস বয়সি কোনও শিশু যে COVID-19 এবং কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হয়েছে, এর পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, এই ঘটনা এই দেশ এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আমাদের এখানে এই প্রথম। এবং, চার মাস বয়সি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে এই ঘটনা গোটা বিশ্বে এই প্রথম।"

এই চিকিৎসক আরও বলেন, "গত ২ মাসে রিপোর্টেড কেস হিসাবে দেখা গেছে গোটা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত চার মাস বয়সি কোনও শিশু একই সঙ্গে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছে, এই ঘটনা একটি মাত্র হয়েছে। যেটা আমাদের এই হাসপাতালে। এর আগে অ্যামেরিকার ছয় মাসের একটি শিশু রিপোর্টেড হয়েছিল।"

এদিকে, ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক-এর অনলাইন এডিশনে চার মাস বয়সি এই শিশুর ঘটনাটি চলতি মাসে প্রকাশিত হয়েছে।

কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় আসলে কী? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়, এই অসুখটি এক ধরনের ভাস্কুলাইটিস। শরীরে যে বিভিন্ন রক্তবাহী নালি রয়েছে, প্রধানত আর্টারি, তার মধ্যে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলা হয় কাওয়াসাকি। এটা রেয়ার ডিস-অর্ডার। এই অসুখ প্রধানত হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। হৃদযন্ত্রের মধ্যে যে রক্তবাহী নালি রয়েছে, যেগুলি হৃদযন্ত্র থেকে বের হয়, সেই করোনারি আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গেলে করোনারি আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ। ফলে, আর্টারিগুলির মধ্যে প্রদাহ শুরু হয়। আর্টারিগুলি ফুলে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে, হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এখন সারা বছর এই অসুখে দুই-একজন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি চিহ্নিত হচ্ছে বলে সংখ্যাটা এখন বেশি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের বিভিন্ন সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে কোনও শিশু। তবে এ রাজ‍্যে বসন্ত এবং শরৎকালে এই অসুখে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। সাধারণত, ছয় মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখ দেখা দেয়। তবে ছয় মাসের কম অথবা পাঁচ বছরের বেশি বয়স, এমন শিশুদের ক্ষেত্রেও এখন কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা যাচ্ছে।

কলকাতা, 1 জুন : বিরল অসুখ কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত চার মাস বয়সি এক শিশু COVID-19 সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছে যায়। অবশেষে, বিরল এই অসুখ এবং COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে হুগলির বাসিন্দা এই শিশুপুত্র এখন সুস্থ রয়েছে। এই শিশুর চিকিৎসা হয়েছে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। চার মাস বয়সি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে একই সঙ্গে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় ও COVID-19 সংক্রমণ এবং তার পরে সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা গোটা বিশ্বে এই প্রথম।

হুগলির বাসিন্দা এই শিশুর জন্ম হয়েছিল কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। জন্মের পর সুস্থ এই শিশুটি বাড়িও ফিরে যায়। এর পর জ্বর হয় তার। প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছিল শিশুটি। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তবে শিশুটির জ্বর কমছিল না। কান্নাকাটিও থামছিল না। এর পর 2 মে এই শিশুকে নিয়ে আসা হয় মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে।

কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিশিয়ান অ্যান্ড নিওনেটাল স্পেশালিস্ট চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য জানিয়েছেন, চার মাস বয়সি এই শিশুকে যখন এখানে নিয়ে আসা হয়, তখন তার হাই ফিভার ছিল, খুব কান্নাকাটি করছিল। কোনওভাবে শান্ত করা যাচ্ছিল না। শিশুটি ভরতি হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। শুরু করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। শিশুটির জ্বর কমছিল না। এই হাসপাতালে ভরতির পরের দিন দেখা যায়, শিশুটির গোটা শরীরে লাল রঙের র‍্যাশ বেরিয়েছে। তার চোখও লাল হয়ে গেছে। একটি চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছে। ঠোঁট, জিভও লাল হয়ে গেছে। শিশুটি কান্নাকাটি করছিল, তাকে খাওয়ানো যাচ্ছিল না, শান্ত করা যাচ্ছিল না। শিশুটি হাই ফিভার নিয়ে এসেছে, সেই কারণে তার সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এদিকে ৩-৪ দিন ধরে হাই ফিভার, তার সঙ্গে শরীরে র‍্যাশ রয়েছে, এই উপসর্গগুলি দেখে রেয়ার ডিস-অর্ডার কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়।

চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য বলেন, "আমাদের সন্দেহ হয়েছিল, এই শিশুটির কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ও হতে পারে। এর পরে ওর ইকো করে দেখা হয়। ইকোর রিপোর্টে দেখা গেল, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের ক্ষেত্রে হার্টে যে পরিবর্তনগুলি হয়, সেগুলি সব এই শিশুটির ক্ষেত্রে রয়েছে। এদিকে সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল, এই শিশুটি COVID-19 পজ়িটিভ। তখন দু'টি বিষয়ে আমরা এক সঙ্গে ডিল করছি, একদিকে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়, অন্যদিকে COVID-19। শিশুটির শারীরিক অবস্থাও প্রচণ্ড ক্রিটিকাল ছিল।" এর পরে কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখেন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসায় এই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তাকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (PICU)-এ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় এই শিশুকে কোনও COVID হাসপাতালে রেফারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, এই শিশুটি COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছে এবং মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে COVID-19 আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসোলেশন বেড নেই। সেই জন্য শিশুটিকে রেফার করা হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। তবে সেখানেও COVID-19-এ আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসোলেশন বেড ছিল না। যে কারণে এই শিশুকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ৭-৮ দিন পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই শিশুর আবার সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয় তার COVID-19 নেগেটিভ এসেছে। এর পরে দিন ১০-এর মাথায় এই শিশুকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। গত শুক্রবার মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ফের এই শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসক সৌম্যব্রত আচার্য।

তিনি বলেন, "শিশুটি এখন ভালো আছে। ওর ওজন বেড়েছে, আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাসছে-খেলছে। এই শিশুটির আবার ইকো করে দেখা হয়। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের কারণে এই শিশুটির হার্টের যে আর্টারিগুলো ফুলে গেছিল, সৌভাগ্যবশত সেগুলি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।"

মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, চিকিৎসক ভাস্বতী আচার্য বলেন, "চার মাসের এই শিশুটি কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছিল। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19 এখন একটি নোন অ্যাসোসিয়েশন। যেটা আমরা গত ২-৩ মাস ধরে জানতে পেরেছি পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ থেকে। এই সময় কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এর একটি অ্যাসোসিয়েশন দেখা যাচ্ছে। ছোটো, বড় যে কোনও বয়সি শিশুর ক্ষেত্রেই কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা যাচ্ছে। কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় উইথ শক সিনড্রোমও দেখা যাচ্ছে। কোনও কোনও শিশুর ক্ষেত্রে COVID-19 ধরা পড়ছে। তাদের বাঁচানোর জন্য অনেকের ক্ষেত্রে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। কোনও কোনও শিশুকে বাঁচানো যাচ্ছে না।"

চার মাস বয়সি এই শিশুর ক্ষেত্রে প্রথমে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসা শুরু করা হয়। দেখা যায়, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ের চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর এই শিশুটির ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। একথা জানিয়ে চিকিৎসক ভাস্বতী আচার্য বলেন, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা গেছে চার বছর এবং এর থেকে বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে। এ দেশ থেকে লাস্ট রিপোর্টেড কেস দেখা গেছে আমাদের এখানে এই শিশুটির চিকিৎসা শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে। ওই শিশুটির বয়স সাড়ে ৭ বছর। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় ছিল, সঙ্গে COVID-19-ও ছিল। ওই শিশুর ক্ষেত্রে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। আমরা বলতে পারি, এখনও পর্যন্ত চার মাস বয়সি কোনও শিশু যে COVID-19 এবং কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হয়েছে, এর পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, এই ঘটনা এই দেশ এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আমাদের এখানে এই প্রথম। এবং, চার মাস বয়সি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে এই ঘটনা গোটা বিশ্বে এই প্রথম।"

এই চিকিৎসক আরও বলেন, "গত ২ মাসে রিপোর্টেড কেস হিসাবে দেখা গেছে গোটা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত চার মাস বয়সি কোনও শিশু একই সঙ্গে কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় এবং COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছে, এই ঘটনা একটি মাত্র হয়েছে। যেটা আমাদের এই হাসপাতালে। এর আগে অ্যামেরিকার ছয় মাসের একটি শিশু রিপোর্টেড হয়েছিল।"

এদিকে, ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক-এর অনলাইন এডিশনে চার মাস বয়সি এই শিশুর ঘটনাটি চলতি মাসে প্রকাশিত হয়েছে।

কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় আসলে কী? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়, এই অসুখটি এক ধরনের ভাস্কুলাইটিস। শরীরে যে বিভিন্ন রক্তবাহী নালি রয়েছে, প্রধানত আর্টারি, তার মধ্যে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলা হয় কাওয়াসাকি। এটা রেয়ার ডিস-অর্ডার। এই অসুখ প্রধানত হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। হৃদযন্ত্রের মধ্যে যে রক্তবাহী নালি রয়েছে, যেগুলি হৃদযন্ত্র থেকে বের হয়, সেই করোনারি আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গেলে করোনারি আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ। ফলে, আর্টারিগুলির মধ্যে প্রদাহ শুরু হয়। আর্টারিগুলি ফুলে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে, হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এখন সারা বছর এই অসুখে দুই-একজন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি চিহ্নিত হচ্ছে বলে সংখ্যাটা এখন বেশি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের বিভিন্ন সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে কোনও শিশু। তবে এ রাজ‍্যে বসন্ত এবং শরৎকালে এই অসুখে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। সাধারণত, ছয় মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখ দেখা দেয়। তবে ছয় মাসের কম অথবা পাঁচ বছরের বেশি বয়স, এমন শিশুদের ক্ষেত্রেও এখন কাওয়াসাকি ডিজ়িজ় দেখা যাচ্ছে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.