কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে তার প্রাপ্য অর্থ দিতে বাধ্য ৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এক্ষেত্রে অজুহাত হতে পারে না ৷ মোদি সরকারের থেকে বকেয়া টাকা না-পাওয়া প্রসঙ্গে একথা জানালেন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Allegation of corruption against a state government cannot be an excuse for the Union government) ৷
শনিবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলির পাওনা টাকা মিটিয়ে দেবে বিজেপি সরকার ৷ এই টাকা নিয়ে বারে বারে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা বলেন, "তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আমরা দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দিয়েছি ৷ কিন্তু সেই কারণে যাঁরা কাজ করছেন, কেন্দ্র তাঁদের টাকা বন্ধ করে দেবে, এটা হতে পারে না ৷ মনরেগা আইনের (Mahatma Gandhi National Rural Employment Generation Act) অধীনে 15 দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারের কাছে আসবে ৷ সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প ৷ এই টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ কেন্দ্রীয় প্রজেক্টের সব টাকাই বন্ধ করেছে বিজেপি সরকার ৷" এতেই থামেননি স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী ৷ তাঁর মতে, মানুষই ঠিক করবে দুর্নীতিতে আসলে কে জড়িত ৷
আরও পড়ুন: পণ্য করের হারে কাটছাঁট, দাম কমছে একাধিক সামগ্রীর
এক্ষেত্রে চন্দ্রিমা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কর আদায়ের প্রসঙ্গ টানেন ৷ তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে করের হিসেব বুঝে নেয় ৷ সেই সময় তাদের মনে থাকে না যে যেখান থেকে কর আদায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ৷ তাই ঠিক এক যুক্তিতে, যখন কেন্দ্র থেকে সরকারের কাছে বরাদ্দ অর্থ আসার কথা, তখন তারা দুর্নীতিকে ইস্যু করছে কেন ? এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয় ৷"
এই মুহূর্তে রাজ্যে শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৷ সিবিআই, ইডি হেফাজতে বহু প্রাক্তন মন্ত্রী, তৃণমূল নেতা ৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রাক্তন শিক্ষা ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষা দফতরের প্রায় সব তাবড় আধিকারিকরা এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে ৷ এছাড়া কয়লাপাচার কাণ্ড, গরুপাচার কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই-ইডি ৷ জেল হেফাজতে রয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ৷ একসময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় শাসকদলের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন ৷ বীরভূমের প্রাক্তন জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল ৷
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলা সফরে ঘুরছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর প্রায় প্রতিটি সভার মঞ্চ থেকে তিনি কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে প্রাপ্য বরাদ্দ না-দেওয়া নিয়ে আক্রমণ করেছেন ৷ কেন্দ্রের কাছ থেকে একশো দিনের টাকা, জিএসটির টাকা বাকি রয়েছে অভিযোগ করেছেন ৷ তাঁর আরও অভিযোগ, মোদি সরকার এভাবে বাংলাকে কোণঠাসা করতে চাইছে ৷
তবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের এই বিবৃতির বিরোধিতা করেছে রাজ্য বিজেপির মুখ্যপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ৷ তিনি বলেন, "কেন্দ্রের কাছ থেকে আসা টাকাটা জনসাধারণের জন্য ৷ তারা যে অর্থ পাঠাচ্ছে, তা যেন ঠিকঠাক কাজে লাগানো হয়, সেটা নিশ্চিত করা কেন্দ্রের কর্তব্য ৷ তাই কোথাও সেই টাকার অপব্যবহার হলে, কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে ৷"
আরও পড়ুন: 'একশো দিনের টাকা দিচ্ছে না, কেন্দ্রীয় সরকার জীবনটাই অনলাইন করতে বলছে', মেদিনীপুরে তোপ মমতার