কলকাতা, 19 জুন : 10 জুন ৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী থেকে গ্রেফতার হয় এক চিনা নাগরিক ৷ নাম হান জুনেই ৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা ইংরাজিতে স্নাতক ৷ তার বিরুদ্ধে ভারত থেকে চিনে তথ্য পাচারের অভিযোগ ওঠে ৷ ভারতে ঢোকার উদ্দেশ্য সাইবার হানা চালানোর প্রস্তুতি ৷ এমনটাই দাবি করছে তদন্তকারীরা ৷ সন্দেহ চিনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে হান ৷ তদন্ত যত এগোচ্ছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে ৷ ক্রমে জটিল হচ্ছে তদন্ত প্রক্রিয়া ৷ এখন উপায় হানের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও আইফোন ৷ দুটোই উদ্ধার করা হয়েছে ৷ কিন্তু, সমস্যা একটাই ৷ ল্যাপটপ ও আইফোনের লক ভাঙতে পারেননি তদন্তকারীরা ৷ দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কেন এখনও হানের ব্যবহারিত ল্যাপটপ ও ফোন খুলতে পারলেন না তদন্তকারীরা? এতে কি তদন্তের সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে ? এরকম নানা প্রশ্ন উঠছে ৷ এইসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন প্রাক্তন এনএসজি(NSG) কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী ৷
তিনি জানাচ্ছেন, এমন কোনও পাসওয়ার্ড নেই যা এনএসজি বা এনআইএ ভাঙতে পারে না ৷ তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয় না ৷ এই বিষয়ে দীপাঞ্জন চক্রবর্তী পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "এমন কোনও পাসওয়ার্ড নেই, যা এনএসজি (NSG) বা এনআইএ (NIA) ভাঙতে পারে না । কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে হবে । তা হল, সাধারণ অপরাধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা দুটো এক বিষয় নয় । সাধারণ অপরাধের তদন্ত চলাকালীন যদি তদন্ত সম্পর্কিত কোনও কথা বাইরে বেরিয়ে যায়, তবে তা তদন্তের পক্ষে ক্ষতি । পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও যদি দিনের পর দিনের তদন্ত প্রক্রিয়া বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা সাবধান হয়ে যেতে পারে । আর তাতে তদন্ত প্রক্রিয়া নষ্ট হতে পারে । যেহেতু এটা ভারত-চিন দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তার মতো বিষয় । ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তদন্তের গতিপ্রকৃতি যেন বাইরে না আসে ৷ সেক্ষেত্রে কোনও জাতীয় নিরাপত্তা তা এনএসজি হোক বা এনআইএ, কারও সাংবাদিক বৈঠক করা উচিত নয় ৷ তাতে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।" তবে জানা যাচ্ছে হানের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও আইফোনটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন তদন্তকারীরা ।
এদিকে, আরও একটা তথ্য উঠে আসছে ৷ হানকে জেরা করে হাওলার যোগ পাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা । তদন্তে উঠে এসেছে, বিটকয়েনের মাধ্যমে সে এবং তার সাগরেদ চিনে টাকা পাঠাত। সে বিশেষ সফটওয়্যারও ব্যবহার করত । অভিযোগ, সেই সফটওয়ারগুলি চিনের ৷ সেদিকেও লক্ষ্য রয়েছে তদন্তকারীদের । হাওলার মাধ্যমে কীভাবে কী হত সেই বিষয়ে সেরকম পাকা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না ৷ জেরায় সেভাবে মুখ খুলতে চাইছে না হান ৷ যদিও, গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান হাওলার টাকার মাধ্যমেই গুরুগ্রামে হান একটি হোটেল কিনেছিল । তাছাড়া নেপাল,বাংলাদেশ, ভুটান হয়ে হাওলার মাধ্যমে চিনে টাকার লেনদেন চলত ৷ 18 জুন তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে লখনউ এসটিএফ (Lucknow STF) ৷ এর আগে তার ব্যবসার অংশীদার সান জিয়াংকে লখনউ এসটিএফ গ্রেফতার করে ৷
আরও পড়ুন, ইন্দো-বাংলা সীমান্তে ধৃত চিনা নাগরিকের ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত
ধৃত হান ইংরেজিতে পারদর্শী ৷ সে চিনের চুন শি গং চেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার চিনের সেনাবাহিনী পরিচালনা করে ৷ এটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে ৷ চিনে সাধারণত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার হয় না ৷ এমনকি বাইরে থেকে যাওয়া পর্যটকদের সঙ্গেও চিনারা ইংরেজিতে কথা বলতে চান না ৷ সেখানে হানের ইংরেজি শিক্ষা সন্দেহজনক বলে মনে করছে পুলিশ ৷ তবে কি চরবৃত্তির জন্যই তার ইংরেজি শিক্ষা ? ভাবছে পুলিশও ৷
চিনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা হানকে জেরা করার সময় জানা যায়, এর আগেও সে একাধিকবার ভারতে এসেছে ৷ হরিয়ানার গুরুগ্রামে তার একটি হোটেলও আছে ৷ তার অংশীদার সান জিয়াং হোটেলটি দেখাশোনা করত ৷ প্রসঙ্গত, এর সঙ্গে হাওলার যোগ পাওয়া যাচ্ছে ৷ হুবেইয়ে থাকাকালীন সান হানকে 10 থেকে 15টি ভারতীয় সিমকার্ড পাঠায় ৷ তারপরেই সানকে গ্রেফতার করে লখনউ এসটিএফ ৷ হানের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জারি হয় ব্লু কর্নার নোটিস ৷
হান জুনেইকে জেরা করে মারাত্মক তথ্য পেয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও লখনউ এসটিএফ ৷ 10-15টি নয়, ভুয়ো নথিপত্র দেখিয়ে হান জুনেই অন্তত 1300 ভারতীয় সিমকার্ড চিনে পাচার করেছে ৷ এক্ষেত্রে সে ব্যবহার করেছে একাধিক ব্যক্তিকে ৷ জেরায় হান স্বীকার করেছে, এই সিমকার্ডগুলি তারা ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে ব্যবহার করত ৷ এই সমস্ত সিমকার্ড থেকে তারা ভারতীয় ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ফোন করে তাদের ফোন হ্যাক করত ৷ তারপর তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করত ৷ কিন্তু শুধুই কি গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েবের জন্য এত সিমকার্ড চিনে পাচার করা হয়েছিল ?
আরও পড়ুন, বাড়ছে রহস্য, ধৃত চিনা নাগরিককে 18 জুন হেফাজতে নিচ্ছে লখনউ এসটিএফ
এরকম অনেক প্রশ্ন উঠছে ৷ সেক্ষেত্রে হানের ল্যাপটপ ও আইফোনের তথ্য প্রশ্নের উত্তর কিছুটা দিতে পারে ৷ তবে তদন্তের স্বার্থে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৷ ল্যাপটপ ও আইফোন থেকে কী তথ্য পাওয়া গিয়েছে বা আদৌ কোনও তথ্য পাওয়া গিয়েছে কি না সেই বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি ৷ তবে প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর মতে, তদন্তের স্বার্থে সবকিছু প্রকাশ করা যায় না ৷ তা না হলে অপরাধীরা সাবধান হয়ে যেতে পারে ৷