কলকাতা, 8 এপ্রিল : সুস্থ হওয়ার পরও কি আবার নভেল কোরোনা ভাইরাস (SARC-COV-2)-এ কেউ আক্রান্ত হতে পারেন? চিনের মতো এ দেশেও কি এমন ঘটনা ঘটতে পারে? এই বিষয়ে যেমন আরও গবেষণার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমনই, এমন আশঙ্কা নেই বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা । তবে, বারবার সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। আর এই কারণেই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে 14 দিন হোম আইসোলেশনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "নভেল কোরোনা ভাইরাসে কোনও আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন। তবে, আবারও তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। ডেঙ্গির ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেরকম চারটি টাইপ রয়েছে। নভেল কোরোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত দুটি টাইপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রথমবার এক টাইপের ভাইরাসে যদি কেউ আক্রান্ত হন, দ্বিতীয়বার অন্য টাইপের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন তিনি "
আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমে কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস যদি ঢোকে, তাহলে সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে যদি একই ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে, তাহলে ওই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ খুব বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে না। উপসর্গহীনভাবে অথবা সামান্য উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। একথা জানিয়ে তপন বিশ্বাস বলেন, "একটু অলটারেশন করে যদি ওই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ করে, তা হলে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেবে। এবং এই সংক্রমণ প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বারও মারাত্মক আকারে দেখা দেবে।"
কলকাতার বেসরকারি একটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট, চিকিৎসক শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন, "নভেল কোরোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। নতুন করে আবার হয়তো কোনও ইনফেকশন পারসনের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট হয়েছে, সেটা থেকে হতে পারে।"
তিনি বলেন, "যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁরাও সাবধানতা অবলম্বন করবেন। তাঁদেরকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রথমবার সংক্রমণের জেরে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অবশ্যই এই অ্যান্টিবডি কিছুটা সুরক্ষা দেবে। তবে, পুরো সুরক্ষা নাও দিতে পারে। এই নভেল কোরোনা ভাইরাসেরও টাইপ দেখা গিয়েছে। তবে, এদেশে এখনও পর্যন্ত কোনটাইপের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, তার কোনও তথ্য নেই।"
কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চিকিৎসক মৌসুমী দত্ত বলেন, "কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটল। রোগী সুস্থ হওয়ার পরে আবার ওই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে কি না, এক্ষেত্রে সাধারণত দুটি বিষয় দেখা যায়। এক, কোনও ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। এদিকে, ওই ভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তন হতে পারে। জেনেটিক পরিবর্তন হওয়া ভাইরাসে ওই একই মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। দুই, প্রথমবার ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেই অ্যান্টিবডি পরবর্তী সময়ে ওই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়। তবে, কোনও কারণে ওই অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরকে যদি ওই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে আবার ওই একই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "তবে নভেল কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠার পরে আবার এই ভাইরাসে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন কি না, সেই বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।"
কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক বিভূতি সাহা বলেন, "আমাদের দেশে এই রোগটি তুলনায় এখনও নতুন। চিনে যেটা ঘটেছে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পরে আবার এই ভাইরাস দেখতে পাওয়া গিয়েছে। যেটা দেখা গিয়েছে, ওখানে বেশ কিছু মানুষকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল। এটা একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। কারণ, স্টেরয়েডে বডির ইমিউনিটি কমে যায়। ভাইরাস শরীরে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।"
তিনি আরও বলেন, "সুস্থ হওয়ার পরে চিনে আবার যাঁদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে, দেখা গিয়েছে, তাঁদের হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম রয়েছে, না হয় তাঁদেরকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে।" ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এই চিকিৎসক বলেন, "আমাদের এখানে স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এখানে দ্বিতীয় বার সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব কম। এই কারণে এখানে আশঙ্কা নেই বলেই আমরা মনে করছি। তবে, এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও দেখতে হবে।"
আপাতত, সুস্থ হওয়ার পরও অসচেতন হওয়া যাবে না । নিজের ও পরিবারের জন্য সর্বোপরি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজেদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ।