কলকাতা, 28 মার্চ : তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের ভুলে তিন মাস জেল খাটলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের পিন্টু মালি নামে এক ব্যক্তি । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক সোমবার ওই ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেছেন । অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার অসীম কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত (Calcutta High Court order to take action against a police officer) ৷ পাশাপাশি, দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে 8 এপ্রিলের মধ্যে এই ঘটনার চার্জশিট ও তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি রিপোর্টও জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট ৷ ওই রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ।
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় হাইকোর্টে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন ওই তদন্তকারী অফিসার । গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত বিচারপতি দেবাংশু বসাক দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন । কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে হাইকোর্টকে । পাশাপাশি, ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থেকেও কেন চার্জশিটে নাম রয়েছে পিন্টু মালির তা ওই রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে ।
আদালত সূত্রে খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত অভিমুখে যাবার সময় ফেনসিডিল-সহ গ্রেফতার হন শামীম হোসেন (বাবু) নামে এক ব্যাক্তি । ঘটনার তদন্তে নেমে 7 জানুয়ারি পাতিরাম থানার পুলিশ পিন্টু মালিকের বাড়িতে চড়াও হয় । অভিযোগ, পিন্টু ফেনসিডিল পাচার এর সঙ্গে যুক্ত । ওইদিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । পুলিশ 28 ফেব্রুয়ারি চার্জশিট পেশ করে । চার্জশিটে পিন্টু মালির নাম রাখা হয় । ওই ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানায় । এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবার আদালতে হাজির হন তদন্তকারী অফিসার অসীম কুমার ঘোষ । বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, শামীমের বয়ানে বা সাক্ষীদের বয়ানেও পিন্টু মালির নামের উল্লেখ নেই । তাহলে কেন তাকে গ্রেফতার করা হল ? কেন চার্জশিটে তার নাম এল ? সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধন আদালতের কাছে স্বীকার করেন এটা সম্পূর্ণভাবে তদন্তকারী অফিসারেরা গাফিলতি ।
আরও পড়ুন : গণনা কেন্দ্রের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা, আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের ভোটের ফল ঘোষণার অনুমতি হাইকোর্টের
এরপর বিচারপতি বসাক বলেন, "একজনের ভুলের জন্য এক ব্যক্তিকে তিন মাস জেল খাটতে হবে !" এরপর তদন্তকারী অফিসারকে তিনি প্রশ্ন করেন, "3 মাস আগে যখন আপনি ফেনসিডিল উদ্ধার করেছিলেন তখন শামীমের পোশাক কী ছিল ?" তদন্তকারী অফিসার অসীম কুমার ঘোষ আদালতকে জানান, তার পরনে কালো-সাদা ট্রাউজার আর গেঞ্জি ছিল ৷ এরপর বিচারপতি ভর্ৎসনা করে বলেন, "3 মাস আগে কী রঙের জামা পরেছিল সেটা মনে রাখতে পারলেন, আর চার্জশিটে একজন নির্দোষের নাম লেখার সময় আপনার ভুল কী করে হল ?"
তাঁর আরও সংযোজন, "এই ধরনের তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । আবেদনকারীর জন্য ক্ষতিপূরণ এই তদন্তকারী অফিসারেরা কাছ থেকে নেওয়া উচিত ।" এদিন আবেদনকারীর আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, "খবর নিয়ে দেখুন পিন্টু মালির সঙ্গে পুলিশের কোনও আর্থিক লেনদেন রয়েছে কিনা ! যাতে সহমত না হওয়ায় তার নাম জড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ । আপনি খবর নিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন আদালতকে জানান, আবেদনকারীর সঙ্গে পুলিশের কোনও গোপন টাকার লেনদেন ছিল কিনা ।" 8 এপ্রিল ফের শুনানি এই মামলার ।