কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর: অ্যাসিড আক্রান্ত নাবালিকাকে আর্থিক সাহায্য দিতে দেরি কেন হচ্ছে ? বুধবার একটি মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশে করে প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের ৷ এ বিষয়ে তৎপরতার সঙ্গে আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে গাইডলাইন তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ পাশাপাশি, আক্রান্তকে 4 সপ্তাহের মধ্যে আর্থিক সাহায্যের টাকা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এই ধরনের বিষয়ে সরকারের উদাসীন মনোভাব, আসলে এই রাজ্যের সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবমাননা বলে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি শেখর ববি শরাফ ৷
2015 সালের মে মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের এক নাবালিকা এবং তার ভাইয়ের উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে ৷ যে ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য না-পেয়ে, আদালতের দ্বারস্থ হয় ভাই-বোন ৷ মামলা চলাকালীন নাবালিকার আক্রান্ত ভাই আর্থিক সাহায্য পেয়ে গিয়েছিল ৷ অভিযোগ তার নাবালিকা এখনও পর্যাপ্ত সাহায্য পায়নি ৷ এখনও পর্যন্ত মাত্র 3 লক্ষ টাকা পেয়েছে ওই নাবালিকা ৷
আজ এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী গোপাল কৃষ্ণ গোখলে একসময় বলেছিলেন, "বাংলা আজকে যা ভাবে, ভারতবর্ষ তা আগামিকাল ভাববে...৷" , 19 শতকের গোড়ার দিকে এই বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল ৷ কিন্তু, আজকের বাংলা এই বক্তব্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করছে ৷’’
উন্নয়ন এবং সুশাসনের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্য পিছিয়ে পড়ছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বিচারপতি ৷ তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘যে রাজ্য একসময় বেগম রোকেয়া, সরোজিনী নাইডুর মতো মহিলাদের প্রগতিশীল নারীবাদী বক্তৃতার জন্য সুপরিচিত ছিল ৷ সেই রাজ্য আজকে তার নারীবাদী শিকড় ভুলে গিয়েছে ৷ রাজ্যের উচিত তাঁর সমৃদ্ধ নারীবাদী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রী গোপালকৃষ্ণ গোখেলের বক্তব্য যেন আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে তা সুনিশ্চিত করা ৷’’
আরও পড়ুন: প্রেমের প্রস্তাব ফেরানোয় গৃহবধূর উপর অ্যাসিড হামলা যুবকের
মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে সওয়ালে জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিস অথরিটির প্রকল্প অনুযায়ী, অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রে 7-8 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পেতে পারেন আক্রান্তরা ৷ আর আক্রান্ত যদি নাবালিকা হয়, তাহলে আরও 50 শতাংশ বেশি সাহায্য পাবে ৷ আগামী 4 সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত নাবালিকাকে সাড়ে 7 লক্ষ টাকা সাহায্যে জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ রাজ্য 4 সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে টাকা জমা করবে এবং তার পর সেই টাকা তুলে দিতে হবে আক্রান্তকে ৷ পাশাপাশি 8 সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে রাজ্যকে গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি শেখর ববি শরাফ ৷