কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ও ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ৷ মঙ্গলবার সকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, যে সব পড়ুয়ার সেমিস্টার শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের 24 ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়ার কথা জানানো হোক ৷ এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সুদীপ রাহা দাবি করেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্র সংসদ নেই ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি 26 সেপ্টেম্বর ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সওয়ালকারী আইনজীবী সৌম্য মজুমদারকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, "যাদের সেমেস্টার শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁরা যাতে হস্টেল ছেড়ে চলে যান সেই বিষয়টি দেখতে হবে ৷ রুমে রুমে গিয়ে তাঁদের খুঁজে 24 ঘণ্টার মধ্যে বের করে দিন ৷" আইনজীবী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা চলছে ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে ৷
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দেয়, আগামী শুনানিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গাইড লাইন ফ্রেম করে আদালতকে সহযোগিতা করবে ৷ রাজ্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র ইউনিয়ন-সহ অন্য সব পক্ষকে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুরের ঘটনায় ছাত্র সংসদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য জানতে চাইল হাইকোর্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়, আপাতত ইউজিসি তহবিল বন্ধ রয়েছে ৷ রাজ্য শুধু অধ্যাপকদের বেতন দেয় ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মের জন্য রাজ্য ইউজিসির কাছ থেকে 270 কোটি টাকা চেয়েছে ৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, "একদিকে বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ইউনিয়ন নেই ৷ অন্যদিকে, ইউনিয়নের নাম করে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে !" প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ইউনিয়ন না-থাকে, তাহলে পড়ুয়ারা মামলায় যুক্ত হয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন ৷ 26 সেপ্টেম্বর সেই হলফনামা জমা নেবে আদালত ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংসদ থাকা প্রসঙ্গে এদিন সরকার পক্ষের আইনজীবী অর্ক নাগ সাংবাদিকদের বলেন, "আদালত বিশ্ববিদ্যালয়কে হলফনামা জমা দিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে ৷ ছাত্ররা জানিয়েছেন, ছাত্র সংসদ নেই ৷ এরপর প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে ছাত্র সংসদের নামে সাংবাদিক বৈঠক করছেন কেন ? বিজ্ঞান ও আর্টস বিভাগের ছাত্রপ্রতিনিধিরা ওয়াকলতনামা দাখিল করেছেন ৷ বিচারপতি তা গ্রহণ করেছেন ৷"
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা মামলাকারী সুদীপ রাহা বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্র সংসদ নেই ৷ কারণ ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছিল 2019 সালে ৷" তাঁর দাবি, ইউনিয়নের নামে ফেস্ট হচ্ছে, টাকা তোলা হচ্ছে, ইউনিয়নের নামে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিক বৈঠক করা হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুরের তদন্তে অসহযোগিতা করছেন ধৃত জয়দীপ ঘোষ, আদালতে দাবি পুলিশের
মামলাকারী তথা আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন সেখানে কোনও অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিই নেই ৷ এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কোনও নির্বাচন হয়নি ৷ অবিলম্বে বিষয়টি রাজ্যকে দেখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউজিসির নিয়ম চালু করা নিয়ে মামলা করেছিলেন আইনজীবী ৷