কলকাতা, 26 এপ্রিল : শেষ হল সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ । কলকাতাসহ পাঁচ জেলার মোট 34টি আসনের রায় ইভিএমে বন্দি হল । ভোট ছিল কলকাতার চারটি আসনে । ভবানীপুর । রাসবিহারী । বালিগঞ্জ । কলকাতা বন্দর । চারটি কেন্দ্রই বঙ্গ রাজনীতিতে, আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে ভোটের রাজনীতিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।
ভবানীপুর খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হোম গ্রাউন্ড । মমতার পাড়ার ভোট কেমন হয়, সেদিকে নজর ছিল গোটা বাংলার তথা দেশের । নজর ছিল বন্দর এলাকার দিকেও । বিগত নির্বাচনগুলিতে বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন অশান্তির খবর লেগেই থাকত এই এলাকায় । কিন্তু এবার তা একেবারেই নেই । শাসক-বিরোধী কারও সেভাবে কোনও অভিযোগ নেই । মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই মিটল কলকাতার রায়ের প্রথম পর্ব ।
আজ শেষবেলায় ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতার পায়ে এবার প্লাস্টার । হেঁটে ভোট দিতে যাওয়ার উপায় ছিল না । তাই কমিশনের তরফে তাঁর বুথে প্রবেশের জন্য করা হয়েছিল বিশেষ ব়্যাম্পের ব্যবস্থা । সেই ব়্যাম্পের উপর দিয়েই হুইল চেয়ারে বসে মিত্র ইনস্টিটিউশনের বুথে ঢুকে ভোট দিলেন ।
ভোট দিয়ে বেরোনোর পথে মমতার শরীরী ভাষা ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী । হাত উঁচিয়ে ভিক্ট্রি সাইন দেখালেন । সকলের নজর ছিল আজ মিত্র ইনস্টিটিউশনের দিকে । কখন মুখ্যমন্ত্রী ভোট দিতে আসবেন, সেইদিকেই তাকিয়ে ছিলেন সকলে ।
এই ভবানীপুরই মমতাকে বাংলার বিধায়ক করেছে । কিন্তু আজ তিনি নিজের হোমগ্রাউন্ড ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে ময়দানে নেমেছেন । বিশ্বস্ত শোভনদেবের উপর ছেড়ে গিয়েছেন নিজের পাড়ার দায়িত্ব । লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, উনিশ সাল থেকে গেরুয়া হাওয়া ঢুকতে শুরু করে দিয়েছিল মমতা-গড়ে । সেই গেরুয়া হাওয়ায় আরও গতি দিতে পদ্মশিবির এবার ভরসা রেখেছে মমতার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রুদ্রনীলের উপর । বিজেপির ভরসার মান রাখলেন রুদ্রও । দিনভর বুথে বুথে ঘুরে ভোটের তদারকি করলেন । এখন দেখার রুদ্র তেজের কতটা প্রভাব পড়ে ইভিএমে ।
আরও পড়ুন : ভোটের অ্যালবাম : ভোট সপ্তমীতে কালি পড়ল যাঁদের আঙুলে
ভবানীপুরের দিকে নজর তো ছিলই । পাশাপাশি, জেলাগুলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অল্পবিস্তর বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে । কোথাও অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার । আবার কোথাও মাস্কের আড়ালে টাকা বিলির অভিযোগ । ভোটারদের প্রভাবিত করতে খাবার বিলোনোর অভিযোগও এল ।
শাসক শিবিরের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী নিয়াজ়উদ্দিন সেখ নাকি মাস্ক বিলির নাম করে টাকাও বিলি করছেন । যদিও টাকা বিলির অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস । কংগ্রেস প্রার্থীর দাবি, জেলায় করোনা বাড়ছে । মানুষ যাতে করোনা থেকে গা বাঁচিয়ে সুরক্ষিতভাবে ভোট দিতে পারেন তাই মাস্ক বিলির বন্দোবস্ত ।
অন্যদিকে খাবার দিয়ে নাকি তৃণমূল ভোটারদের প্রভাবিত করছে । এমন অভিযোগও এসেছে । দ্বিতীয় ঘটনাটিও মুর্শিদাবাদেই । পাহাড়পুরে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস থেকে নাকি পাউরুটি আর কলা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছিল । এক্ষেত্রেও কংগ্রেস প্রার্থীর মতোই নিজস্ব যুক্তি রয়েছে তৃণমূলের । তৃণমূল বলছে, গ্রামবাংলায় ভোট মানেই উৎসবের আমেজ । আর সেই কারণেই নাকি খাবার বিলি । এমনই বিক্ষিপ্ত অভিযোগ এসেছে জেলাগুলি থেকে ।
আরও পড়ুন : হুইল চেয়ারে বসেই ভোট মমতার, দেখালেন ভি চিহ্ন
শীতলকুচির ঘটনাই হোক অথবা রাজ্যে করোনার বাড়বাড়ন্তই হোক... চতুর্থ দফার ভোটের পর থেকে সেভাবে কোনও অশান্তির খবর নেই । এমনকি কোথাও লাঠিচার্জও নেই । মোটের উপর নির্বিঘ্নেই কাটল ভোটসপ্তমী । বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়ল 75.06 শতাংশ । সবথেকে কম ভোট পড়ল কলকাতায়, 59.91 শতাংশ ।
কলকাতায় বিগত কিছুদিন ধরে করোনার দৈনিক সংক্রমণ তিন হাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছে । বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, করোনার এই বাড়বাড়ন্তের কারণেই অনেক মানুষ বুথমুখী হচ্ছেন না । মালদা, মুর্শিদাবাদে অন্যান্যবারের ভোটে যে ধরনের তপ্ত পরিবেশ থাকে, আজ যেন তা একেবারেই উধাও । বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ছাড়া জেলাগুলিতেও ভোটগ্রহণ একেবারে শান্তিপূর্ণ ।