কলকাতা , 16 মে : কোরোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে ধসে যাওয়া অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা যথেষ্টই । যদিও এ দেশের সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মনোযোগী নয় । বামপন্থীদের দেখানো বিকল্প পথেই অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে দেশে ।আজ এমনই বললেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ অসীম দাশগুপ্ত ৷
দেশের এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ও আর্থিক বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা । উদ্বিগ্ন প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ অসীম দাশগুপ্তও৷ তিনি জানান , কোরোনার সংক্রমণকে প্রতিহত করতে হবে । প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা সুনিশ্চিত করতে হবে । সামগ্রিকভাবে বিপজ্জনকভাবে দেশের আর্থিক অধোগতি হচ্ছে । আর্থিক অধোগতি থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে । আর্থিক হাল ফেরাতে হবে দেশের ।
প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে কুড়ি লাখ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ৷গত চারদিন ধরে এই প্যাকেজ নিয়ে বিস্তারিত বলছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেন ," সাধারণ মানুষের জীবিকা সুনিশ্চিত করার কথা প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী কেউ বলেননি । দেশের 80 শতাংশ মানুষ শ্রমজীবী অর্থাৎ তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতে হয় জীবিকা বহাল রাখার জন্য । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের ফলে গৃহবন্দী মানুষ । সঞ্চিত অর্থ নেই , আয় নেই । বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে হবে প্রত্যেকটা মানুষকে । সেই সঙ্গে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরাও । দেশের প্রত্যেককে মাথাপিছু এবং পরিবারপিছু 10 কেজি করে চাল এবং গম দিতে হবে । সারা বছর যে পরিমাণ চাল , গম দিতে হবে তা অবশ্যই আছে দেশের খাদ্য ভাণ্ডারে । এই ভাণ্ডারে যে পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য রয়েছে তার থেকে অনেক কম পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য লাগবে দেশের মানুষের । এরপর যোগান আরও বৃদ্ধি পাবে । যোগানে বাধা নেই। 12 মাসে অনুমিত 2.34 লাখ কোটি টাকা প্রয়োজন খাদ্যশস্যের জন্য । শুধু তো খাদ্যশস্য নয়, ন্যূনতম অর্থ পৌঁছতে হবে মানুষের হাতে । বামপন্থীরা দাবি করেছিল মাসে মাত্র 7500 টাকা পরিবারপিছু দেওয়া হোক । এর জন্যে মোট খরচ হবে 8.74 লাখ কোটি টাকা । জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে 67 হাজার কোটি টাকা ধরা রয়েছে । যা চূড়ান্ত বঞ্চনার সমান । অতিরিক্ত 1.34 কোটি টাকা স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ করতে হবে ।"
অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে যে ঘোষণা করেছেন , তা নিয়ে তিনি বলেন , ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে দেশের অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য পেশ করলেন , তা বিজ্ঞানসম্মত নয় । ব্যাঙ্কে কর্মী সংখ্যা অপ্রতুল । ব্যাঙ্ক থেকে অনেক জটিলতার সীমা পেরিয়ে ক্ষুদ্র শিল্পের ঋণ দেওয়া হয় । ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখতে পাবেন না ৷
অন্যদিকে , ক্ষুদ্রসেচ সহ ভূ-জলের জন্য বাড়তি দুই কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী । তিনি আরও বলেন , ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ভাষণে কর্মসংস্থানের কথা বলা নেই । বিকল্প ভাবে চাহিদার অভাব মেটাতে জাতীয় আয়ের নয় শতাংশের মতো। ঘাটতি বাজেট দিয়ে বাকিটা মেটানো সম্ভব । এর ফলে মূল্যবৃদ্ধি আদেও হবে না । কারণ চাহিদার অভাব রয়েছে । অবিক্রিত দ্রব্য পড়ে আছে বাজারে । উৎপাদন আরও জোরদার হবে ।’’ সবকটির যোগফল মিলিয়ে প্রায় কুড়ি লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে বলে জানিয়েছেন অসীম দাশগুপ্ত ।