কলকাতা, 10 এপ্রিল: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে বাজাকদমতলা ঘাটে 2 মার্চ বারাণসীর কায়দায় গঙ্গা আরতি শুরু হয়েছে ৷ আর শুরু থেকেই একের পর এক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে গঙ্গা আরতিকে কেন্দ্র করে ৷ আর সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে সোমবার বাজাকদমতলা ঘাটে একটি বৈঠক হয় ৷ বৈঠকে সেনার পক্ষ থেকে হাজির ছিলেন উচ্চ পদাধিকারী আধিকারিকরা ৷ কলকাতা কর্পোরেশন, পরিবহণ দফতর, রেল-সহ কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও ৷ সেখানেই এ দিন পরিবহণ ও কর্পোরেশনের কর্তাদের তুলোধনা করলেন সেনা আধিকারিক ৷ আরতির ফলে তৈরি হওয়া নানান সমস্যা নিয়ে পৌর কমিশনারকে চিঠিও পাঠানো হবে বলে খবর কর্পোরেশন সূত্রে ৷
এ দিন বাজাকদমতলা ঘাটের বৈঠকে সেনা একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে দেয় রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের ৷ সেনার তরফে প্রশ্ন ছিল, কার উদ্যোগে এই গঙ্গা আরতি হচ্ছে ? এর উত্তরে পরিবহণ দফতরের কর্তারা কলকাতা কর্পোরেশনের উপর দোষ চাপান ৷ পালটা পরিবহণ দফতরের উপর দায় চাপান কর্পোরেশনের কর্তারা ৷ শেষে দু’পক্ষ বাধ্য হয়ে জানায়, যৌথ উদ্যোগে করা হয়েছিল ৷ দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, বাজাকদমতলা ঘাটের বাইরে যে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে, সেটা কাদের অধীনে রয়েছে ? পরিবহণ কর্তারা জানান সেটা সাঁতরাগাছিতে চলে যাবে ৷ সেই শুনে সেনার তরফে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের ভর্ৎসনা করা হয় ৷
গঙ্গা আরতিতে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে ৷ সেই প্রসঙ্গে সেনার তরফে বলা চাওয়া হয়, ‘‘যখন মা গঙ্গা সাক্ষাৎ রয়েছেন ৷ তাঁরই আরতি করুন ৷’’ সূত্রের খবর, মূলত গঙ্গারঘাটে মন্দির তৈরি করা নিয়ে পৌর কর্তাদের একহাত নেন সেনা কর্তারা ৷ সেনার তরফে প্রশ্ন করা হয়, বাকি অন্যান্য ধর্মের তরফে কিছু করতে চাইলে তখন কী হবে ? নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও রাজ্যের আধিকারিকদের নিশানা করে সেনা ৷ দরকারে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও প্রতিরক্ষা দফতরে জানানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেনা কর্তারা ৷
আজ সেনার প্রশ্নের কাছে পরিবহণ ও কর্পোরেশনের সকল আধিকারিক মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন ৷ বৈঠক শেষে শুরু হয় সেনার বাজাকদমতলা ঘাট পরিদর্শন ৷ সেনার নেতৃত্বে যৌথভাবে পরিদর্শন করে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকরাও ৷ আরতি দেখতে গঙ্গার ঘাটে ভিড় বাড়ছে রোজ সন্ধ্যায় ৷ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা আছে ? রেলকে প্রশ্ন করে সেনা ৷ রেলের তরফে কর্তারা জানান, সিগন্যাল গেট রয়েছে ৷ আর আরতির সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয় ৷ সেই সঙ্গে দূর থেকে হর্ন দেন চালক ৷
আরও পড়ুন: তিলোত্তমায় এবার বারোমাস গঙ্গা আরতি, উদ্বোধন করলেন মমতা
তখনই আরতির সময় হর্ন দেওয়া নিয়ে সমস্যার কথা জানান পৌর কর্তারা ৷ তখন রেলকে বিষয়টা দেখতে বলে সেনা ৷ রেলের আধিকারিকরা জানিয়ে দেন, দূর থেকে নিয়ম মাফিক হর্ন না দিলে দুর্ঘটনা ঘটবে ৷ সেনার তরফে রেলকে উদ্যোগ নিয়ে শৌচালয় বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন সেনা আধিকারিকরা ৷ সেনার তরফে সাফ জানানো হয়, গঙ্গা আরতি করতে আসা মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে ৷ রেল গেটের নিরাপত্তা দেখতে হবে ৷ দর্শনার্থীদের ভিড় সামলানোর পাশাপাশি তাঁদের জন্য শৌচালয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে ৷
উল্লেখ্য, গঙ্গা আরতি ফলে বাজাকদমতলায় মানুষের ঢল নামছে রোজ সন্ধ্যেয় ৷ ফলে রেলের গেট পেরিয়ে মানুষের চলাচলে রেল পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে ৷ যে দর্শনার্থীরা আসছেন তাঁদের গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এ দিনের বৈঠকে ৷ আজকের বৈঠক শুধুমাত্র আলোচনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ৷ এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানান, ভিড় বাড়ছে তাই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷