কলকাতা, 28 নভেম্বর: ন’বছর পর ফের কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করতে চলেছে বিজেপি ৷ আগামিকাল, বুধবার সেই সভার মূলবক্তা গেরুয়া শিবিরের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ 2014 সালেও তিনিই ছিলেন বিজেপির সভার মূল আকর্ষণ ৷ তবে তিনি তখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হননি ৷ সেই সময় অমিত শাহ ছিলেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি ৷
সেই সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইস্যুতে আক্রমণ করেছিলেন অমিত শাহ-সহ বিজেপির অন্য নেতারা ৷ পরবর্তী ন’বছরে বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে যেমন পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব বাড়িয়েছে, তেমনই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে কয়েকগুন ৷ শিক্ষা থেকে রেশন, বালি থেকে কয়লা, একাধিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলের নেতাদের ৷ গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে ৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থও নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে ৷
আর এই দুর্নীতি এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় ও প্রকল্প থেকে যোগ্যদের বঞ্চিত করে রাখার অভিযোগকে সামনে রেখেই বুধবারের সভা আয়োজন করেছে বঙ্গ বিজেপি ৷ বুধবার সভাস্থলে সেই বঞ্চিতদের হাজির করা হবে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে বিজেপি ৷ তাই সভাস্থলে এই নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাও থাকছে ৷ গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামিকাল মঞ্চের উপরে বড় বড় বাক্স রাখা থাকবে । যাঁরা বিভিন্নভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা সেই সব বিষয় বিস্তারিত লিখে ওই বক্সে জমা দেবেন ।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে মঞ্চ থেকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন দুই সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা-সহ অন্য নেতারা এই ইস্যুতেই সরব হবেন ৷ ইতিমধ্যে এই সভার প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে প্রস্তুতি সভা সেরে ফেলেছে বিজেপি ৷ থিম সংও তৈরি করা হয়েছে ৷ গানটি লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন বিজেপির কালচারাল সেলের সভাপতি রুদ্রনীল ঘোষ ।
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে প্রতি বছর সভা করে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কারণ, 1991 সালে 13 জন যুব কংগ্রেস কর্মী আন্দোলন চলাকালীন নিহত হয়েছিলেন ৷ সেই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাই তৃণমূল নেত্রী হিসেবেও তিনি ওই জায়গায় প্রতি বছর সভা করেন ৷ সেখানে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয় ৷ বিজেপিও তাই মরিয়া বুধবারের সভায় ভিড়ের নিরিখে তৃণমূলকে টেক্কা দিতে ৷
সেই কাজে তারা সফল হতে পারে কি না, সেই উত্তর তো আগামিকালই স্পষ্ট হবে ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেহেতু এই সভার মূলবক্তা, তাই ভিড়ের কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে ৷ ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গিয়েছে ৷ গতি রবিবার খুঁটিপুজোর মাধ্যমে মঞ্চ গড়ার কাজ শুরু হয় ৷ সমস্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বিজেপির বিভিন্ন নেতারা বিভিন্ন সময় এসে তদারকি করে যাচ্ছেন ৷
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, দুপুর 1টা 45 থেকে 3টে 15, দেড় ঘণ্টা মঞ্চে থাকার কথা অমিত শাহের ৷ মনে করা হচ্ছে, ওই দেড় ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই ভাষণ দেবেন অমিত শাহ ৷ আর সেই ভাষণে তিনি সারা বাংলার গেরুয়া শিবিরকে কী বার্তা দেন, কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান, সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে ৷
তাছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে বীরভূমের সিউড়ি থেকে বঙ্গ বিজেপিকে লোকসভা নির্বাচনের জন্য 35 আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি ৷ এখন নভেম্বর ৷ লোকসভা নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকমাস ৷ তার আগে ভোট নিয়ে তিনি কী বার্তা দেন, সিএএ ইস্যুতে কোনও কথা বলেন কি না, সেদিকেও তাকিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থক থেকে রাজনৈতিক মহল ৷
আরও পড়ুন: