কলকাতা, 3 অক্টোবর : হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ সঙ্গে সঙ্গে CPR (কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন) করা হয় । তারপরও আশা একপ্রকার ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা ৷ তবে শেষ পর্যন্ত দুবার ভেন্টিলেশনে রাখার পর ধীরে ধীরে সুস্থ মাত্র 50 দিনের শিশু ৷ আজ তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে ৷
COVID-19-এ আক্রান্ত শিশুটির শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম শুরু হয়েছিল। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা আনকমন। COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ায় তার শরীরের এই ধরনের জটিল অবস্থা হয়েছিল ৷ এত ছোটো এক শিশুর দেহে এই ঘটনাটি বিরল বলছেন চিকিৎকরা ৷ এবং বিশ্বে এটি প্রথম বলে দাবি করছেন চিকিৎসকরা ৷ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে এই শিশুর সুস্থ হয়ে ওঠার এই ঘটনা ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশড করার জন্য চেষ্টাও করা হচ্ছে ৷
দুর্গাপুরে জন্মের পরে তার কোনও সমস্যা ছিল না ৷ কিন্তু, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার 4-5 দিন পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয় সে ৷ দুর্গাপুরের নার্সিংহোমে তার চিকিৎসা চলে ৷ কিন্তু জ্বর না কমায় তাকে কলকাতার আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ।
চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "আমাদের এখানে এই শিশুকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তার হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল। শিশুটি অ্যানিমিক ছিল এবং তার শরীরে ছিল অদ্ভুত রকমের র্যাশ। প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম, সাধারণ কোনও সংক্রমণ। কিন্তু এই শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে ।"
পরের দিনই শিশুটির COVID-19 রিপোর্টে পজ়িটিভ আসে । দেখা যায়, শিশুটির হার্ট কাজ করছে প্রায় 30 শতাংশ । হার্টের চারিদিকে জল জমেছে। চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "এই সব কিছু মিলিয়ে বোঝা যায় COVID-19-এর কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম হচ্ছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে COVID-19-এর কারণে সাইটোকাইন স্টর্ম কমন । কিন্তু ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে এটা আনকমন।"
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, "একটা সময় শিশুটির হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দেয় ৷ আমরা সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এর পরে ধীরে ধীরে ওষুধগুলি কাজ করতে শুরু করে। পাঁচ দিনের মাথায় ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট থেকে বাইরে আনা হয় এই শিশুটিকে । প্রথম দিকে আমরা মনে করেছিলাম সে প্রায় সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আবার 2-3 দিন পর থেকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । আবার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে বোঝা যায়, এই শিশুর হার্ট ফেলিওরের দিকে এগোচ্ছে। তখন আবার ওষুধ চালু করতে হয়। এর পাশাপাশি তাকে আবার ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হয়। কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় ।"
শিশুটি অবশেষে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে, যার জেরে চিকিৎসক এবং পরিজনরা খুশি । চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "এই শিশুর যে অবস্থা হয়েছিল, এত কম বয়সে কারুর কোথাও এমন হয়েছে বলে শোনা যায়নি ।" তাই শিশুটির অসুস্থতা এবং তাকে সুস্থ করে তোলার এই বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে যাতে পাবলিশড করা যায়, তার চেষ্টা চলছে ৷