কলকাতা, 8 মার্চ: একদিকে জলকষ্টের অভিযোগে যেমন জেরবার হতে হয় পৌরনিগমকে । তেমনই অন্যদিকে লাগাতার জল অপচয় করার ছবিও উঠে আসে । তাই জল অপচয় ঠেকিয়ে জল কষ্ট কমানোর লক্ষে ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করার পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা পৌরনিগম (Kolkata Municipal Corporation)। আর সেই মতো উত্তর কলকাতার সিঁথি, কাশীপুর, বেলগছিয়া ও শ্যামবাজার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানীয় জলের পাইপ লাইনে বসানো হয় মিটার । 1 থেকে 6 নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত একটি জোন করে বসানো হয় এই মিটার । টাকা পয়সার টানাটানি থাকায় খানিকটা দেরি হয়েছিল ঠিকই তবে বছর 5 আগে এই কাজ শুরু হয় ৷ শেষ হয়েছে এই কিছু বছর হল । এরপরেই মিটারে শুরু হয় নজরদারি । লাগাতার নজরদারি চলে প্রতি লাইনে । কত জল কোন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে ও তার মধ্যে কত জল কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে । কত জল অতিরিক্ত ব্যবহার বা অপচয় হচ্ছে ।
এই বিষয়ে কলকাতা পৌরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের তথ্য বলছে, যে পরিমাণ জল এই সমস্ত এলাকায় প্রতিদিন দেওয়া হত তার কমপক্ষে 50 শতাংশ জল নষ্ট হত । সেই অপচয় কমিয়ে 13 শতাংশে নামানো সম্ভব হয়েছে এখন । এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ভিন দেশের একটি সংস্থা । কেআইআইপির প্রকল্প । সঙ্গে আছে পানীয় জল সরবরাহ বিভাগ । 2017 সালে কাজ শুরু করে উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকার কমবেশি 19 হাজার মিটার বসানো হয়েছিল । গোটা কাজটা করতে সময় লাগে প্রায় বছর আড়াই । এরপরে ধারাবাহিকভাবে আরও বছর আড়াই নজরদারি চালানো হয় । প্রতিদিন 16-18 মিলিয়ন গ্যালন জল কাশীপুর, বেলগাছিয়া, সিঁথি, চিড়িয়া মোড় ও শ্যামবাজার লাগোয়া আরজিকর এলাকায় দেওয়া হয় টালা থেকে । মিটারের উপর নজরদারি করে দেখা যায় 50 শতাংশেরও বেশি অপচয় হচ্ছে ।
এরপর ধীরে ধীরে জলের প্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয় । অপচয় কমতে থাকে । পাশাপশি পুরনো পাইপ লাইনের একাধিক ফাটল দিয়ে যে জল নষ্ট হচ্ছিল তাও চিহ্নিত করে আটকানো যায় । এখন সেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাত্র 2 মিলিয়ন গ্যালন জল অপচয় হয় । এবার দক্ষিণ কলকাতার 11 ও 12 নম্বর বরো এলাকায় অর্থাৎ গড়িয়া, যাদবপুর, পাটুলি, ও বৈষ্ণবঘাটায় এই মিটার বসানো শুরু হচ্ছে । এখানে অবশ্য অপচয় নয়, জলের চাপ কম কোন কোন এলাকায়, কোথায় প্রয়োজনের তুলনায় কম জল যাচ্ছে সেই সব চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে ।
এই বিষয়ে কলকাতা পৌরনিগমের এক আধিকারিক জানান, নিয়মমাফিক অপচয় যতটা ধরা হয় ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছানো গিয়েছে মিটার লাগানোয় । ফলে অতিরিক্ত অপচয় আর হচ্ছে না । কলকাতা জুড়ে কাজ শেষ হলে সেটা আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ হবে । জলের সঙ্কট থাকবে না । উদবৃত্ত হবে পানীয় জল ।
আরও পড়ুন : জলের অপচয় বন্ধ করতে বাড়িতে বসতে চলেছে ওয়াটার মিটার