কলকাতা, 24 নভেম্বর : গমের মারণ ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ আটকাতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার বাংলাদেশ সীমানা সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলে 2017 সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে গম চাষের উপর ৷ সিদ্ধান্ত হয় যে আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে 5 কিলোমিটার পরিসীমার মধ্যে এই গম চাষ করা যাবে না তিন বছর । পরে রাজ্য সরকার একই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে ওই অঞ্চলে । মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া এই দুই জেলা মিলিয়ে 8000 একরের উপর কৃষিজমি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসে ।
কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ । যদিও এখনই ওই অঞ্চলে পুনরায় গম চাষ শুরু করার পক্ষপাতী নয় রাজ্যের কৃষি দপ্তর । শুরু করার বিপক্ষে কৃষি বিজ্ঞানীরাও । রাজ্য কৃষি দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ অধিকর্তার মতে, এই মুহূর্তে পুনরায় গম চাষ শুরু হলে মারণ গমের ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ আবার বাড়তে পারে । তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক সীমানা সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া দু'টি জেলায় অবাধে চলে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি কৃষকদের মধ্যে বীজ বিনিময় । 2017 সালে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ বাড়ার মূলে কারণ, ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশি গম বীজের রোপন । যে ছত্রাকের মাধ্যমে গমের এই ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পরে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে তার উৎস বাংলাদেশ । তাই যতক্ষণ না আমার এই বীজ বিনিময় আটকানো সুনিশ্চিত করতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত পুনরায় এই অঞ্চলে গম চাষের অনুমতি দিতে চাইছি না ৷ " এছাড়াও দু'পাশে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গবাদি পশুও এই রোগের বাহক । গমের ব্লাস্ট রোগ ছত্রাকের কারণে ঘটে এবং এই ছত্রাক গবাদি পশুগুলির মাধ্যমে সহজেই ভ্রমণ করতে পারে ।
1985 সালে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রথম প্রকাশ দেখা যায় ব্রাজিলে ৷ ওই বছরে এই রোগ ব্রাজিলের প্রায় পুরো গম উৎপাদনকে ধ্বংস করে ফেলেছিল । 2016 সালে সেই ছত্রাক এশিয়ায় প্রবেশ করে বাংলাদেশ হয়ে ৷ সেই বছর এই ছত্রাকের প্রকোপে বাংলাদেশের ছয় জেলার প্রায় 20,000 হেক্টর জমির ফসল পোড়াতে হয়েছিল । বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে 4,096 কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে, যার মধ্যে 2,227 কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ৷
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । একাধিকবার ফোন করা সত্ত্বেও উনি ফোন ধরেননি ।
সারা ভারত কৃষক সভার নেতা অমিয় পাত্র বলেন, "রাজ্য জুড়ে বাংলাদেশ বর্ডার সংলগ্ন 1 লাখ 91 হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । ফের যদি চাষ নিষিদ্ধ হয়, তাহলে গমের সংকট বৃদ্ধি পাবে । রাজ্য সরকারের উচিৎ বিকল্প ভাবে গম চাষ বাড়ানো । না হলে উৎপাদন ব্যহত হবে ৷ "
এ বিষয়ে কৃষিবিজ্ঞানী তাপস রায় জানান, ল্যাটিন অ্যামেরিকার মারাত্মক রোগ একসময় ঢুকে গেছিল এই রাজ্যে । বলেন,"রাজ্যজুড়ে কৃষি বিভাগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হুইট ব্লাষ্ট । নদিয়া, মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় এই সমস্যা মারাত্মক । তাই, গমের পরিবর্তে ডাল বা তৈলবীজ চাষ করার বিকল্প বন্দোবস্ত করা হয়েছে রাজ্যের কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ।" তিনি জানান, হুইট ব্লাস্ট লাইট ডিজিজ় নামক এই মারাত্মক রোগ আগে এশিয়াতে ছিল না । ব্রাজিল-সহ ল্যাটিন অ্যামেরিকার অন্য দেশে এতদিন এই রোগের উপস্থিতি ছিল । সম্প্রতি বাংলাদেশে এই রোগটি এসেছে । এই রোগে নদিয়া ও মুর্শিয়াবাদে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ "