কলকাতা, 14 জুলাই: রাজ্যসভার ভোটে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন বিজেপির ডামি প্রার্থী রথীন্দ্রনাথ বোস। যার জেরে ভোটাভুটির আর কোনও প্রয়োজন রইল না বলেই খবর বিধানসভা সচিবালয় সূত্রে ৷ সেইসঙ্গে, তৃণমূলের ডেরেক, সুখেন্দু শেখর, দোলা সেন বা বিজেপির অনন্ত মহারাজের রাজ্যসভায় যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷
শনিবার ছিল রাজ্যসভার ভোটে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর এদিনই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বোস। যার জেরে, এদিনই নিশ্চিত হয়ে গেল রাজ্য বিধানসভায় আর নতুন করে ভোটাভুটির কোনও প্রয়োজন থাকছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের ছয় প্রার্থী যথাক্রমে ডেরেক ও'ব্রায়েন, সুখেন্দু শেখর রায়, দোলা সেন, সামিরুল ইসলাম, প্রকাশ চিক বরাইক এবং সাকেত গোখলের রাজ্যসভায় যাওয়া নিশ্চিত। একইভাবে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া এই মুহূর্তে সময়ের অপেক্ষা বিজেপি প্রার্থী অনন্ত মহারাজ ওরফে নগেন রায়ের।
শুক্রবার ছিল মনোনয়ন পরীক্ষা অর্থাৎ স্ক্রুটিনির শেষ দিন। ওইদিন বিধানসভার তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের ছয় প্রার্থী এবং বিজেপির দুই প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আচমকা কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন রথীন বোস ? আসলে ডামি প্রার্থী দেওয়া রাজনৈতিক কৌশল মাত্র ৷ বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ এই বিজেপি নেতা রথীন্দ্রনাথ বোসের মনোনয়ন মূলত সেই রাজনৈতিক কৌশলের জেরেই দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস সত্ত্বেও দারুণ ফল করেছে বিজেপি, দাবি শাহের; পালটা দিলেন ডেরেক-অভিষেক
বিজেপির দাবি, যদি অনন্ত মহারাজের মনোনয়ন ত্রুটিমুক্ত থাকে, এবং সবদিক থেকে পরিস্থিতি ঠিক থাকে তবে শেষ মুহূর্তে রথীন বোস তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। কার্যত তাই হয়েছে ৷ শেষ পর্যন্ত রথীন্দ্রনাথ বোস তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন এদিন। বিধানসভা সূত্রে খবর, এরপর আর 24 জুলাই ভোটাভুটির আর কোনও প্রয়োজন থাকছে না ৷ রাজ্যসভার ভোটে জয়ী সাত প্রার্থীকেই রাজ্য বিধানসভা থেকে জয়ের সংশাপত্র তুলে দেওয়া হবে বলে খবর। এদিন এই নিয়ে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্য মনোজ টিগ্গা বলেন, "আমরা আগেই স্পষ্ট করেছিলাম যেহেতু দু'জন প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা নেই। তাই একজনই প্রার্থী দেওয়া হবে। রথীনবাবুর মনোনয়ন ছিল দলীয় কৌশল মাত্র।" কিন্তু অনন্ত মহারাজের স্ক্রুটিনিতে সমস্যা না থাকায়, এদিন প্রার্থী পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রথীন বোস।
প্রসঙ্গত, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অনন্ত মহারাজকে এবার রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। গত বৃহস্পতিবার তিনি বিধানসভায় এসে তার মনোনয়ন জমা দেন। একই দিনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির নেতা তথা বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বোস। তবে বিজেপির এই দুই মনোনয়ন ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল ৷ কেন হঠাৎ করে দ্বিতীয় মনোনয়নের প্রয়োজন হল ? তখনই দলের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, যদি মনোনয়নের কোনও সমস্যা হয়, সে কারণেই রথীনবাবুকে মনোনয়ন দিতে বলা হয়েছে। রথীন্দ্রনাথ বোস নিজে জানিয়েছিলেন, দল তাঁকে মনোনয়ন জমা দিতে বলেছে ৷ তাই তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে দল তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বললে তিনি তা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন রথীন বোস। সেই মতো দলের নির্দেশেই নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন তিনি ৷ ফলে 43 বছর পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ হচ্ছেন অনন্ত মহারাজ।
এর আগে 1980 সালে বিজেপি গঠিত হলেও এতদিন পর্যন্ত এমন বিধায়ক সংখ্যা ছিল না যার কারণে বিজেপি এ রাজ্য থেকে কাউকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারে। এবার সেটাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। একই সঙ্গে পুণরায় রাজ্যসভায় যাচ্ছেন ডেরেক ও ব্রায়েন, সুখেন শেখর রায় আর দোলা সেন। একইভাবে নবনির্বাচিত সাংসদ হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন সামিরুল ইসলাম, সাকেত গোখলে এবং প্রকাশ চিক বড়াইক।