কলকাতা, 21 জুলাই: জনস্রোতের ঠিকানার নাম আজ ধর্মতলা । দু'বছর পর ধর্মতলা ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে ফিরছে তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাইয়ের শহিদ তর্পণের অনুষ্ঠান । আর এই মঞ্চ থেকে শুধু বাংলা নয়, জাতীয় ক্ষেত্রে দলের গতিমুখ কী হতে চলেছে, তা বাতলে দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (21 July TMC Sahid Diwas meeting may hit record as lakhs gathering in Dharmatala) ।
এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশ । করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠে একটা অর্থনৈতিক দোলাচলের মধ্যে দিয়ে চলছে দেশ তথা রাজ্য । একই সঙ্গে অসহিষ্ণুতা, বিভাজনের মতো বিপদ উঁকি মারছে দেশে । দেশের শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নাকি দেশের ইতিহাস বদলে দিতে চাইছে । বিরোধী শক্তিকে দমন করতে ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করছে ।
এসব কিছুর বিরুদ্ধেই আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন । জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এ রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করা জরুরি । একই সঙ্গে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে একুশে জুলাই তাৎপর্যপূর্ণ । মূলত সেই কারণে আজকের এই মেগা সমাবেশের দিকে চোখ থাকবে গোটা দেশের ।
আরও পড়ুন: প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ হাইকোর্টের, অশান্তি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী
গতকাল বিকেলে ধর্মতলায় এসে একুশের গতিবিধি ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । একইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে যেভাবে দেখতে চায়, দল নিজেকে সেভাবেই পরিবর্তন করবে । তবে এই বদলের রূপরেখা কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী স্বয়ং । খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজন পোষণ, সিন্ডিকেট যোগ, তোলাবাজি-সহ যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, এগুলি থেকে দলকে শুদ্ধিকরণের পথ কী হবে, তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনতে চায় জনতা । আর তাই এদিনের মেগা সমাবেশে তাৎপর্য অনেকটাই বেশি ।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল । কিন্তু সমস্যা হল একাধিক রাজ্যে দলের ইউনিট খুললেও আক্ষরিক অর্থে সে সব জাগায় তৃণমূলের শক্তি কতটা বৃদ্ধি হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে ।
গোয়া, অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়-সহ যে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পদার্পণ করেছে সেখানে দলের ভূমিকা কী হবে বা কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে তারা লড়াই করবে- আজ একুশের মঞ্চ থেকে তার নির্দেশ দেবেন মমতা । শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আজ অন্য রাজ্য থেকেও দলের নেতৃত্বরা উপস্থিত থাকবেন ধর্মতলায় ৷
আজ এই শহিদ মঞ্চ থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে দলনেত্রীর ভাবনা কী, তাও জানা যেতে পারে ৷ উল্লেখ্য গত ক'দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এসে জমা হয়েছে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সেন্ট্রাল কলকাতা ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র এবং বড় বাজারের একাধিক ধর্মশালায় । গতকাল বিকেল পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তার প্রায় কয়েক গুণ বেশি মানুষ আজ ট্রেন বা বাসের মাধ্যমে ধর্মতলা আসবেন । সকাল ছ'টা থেকে একের পর এক মিছিল শিয়ালদা, হাওড়া, শ্যামবাজার এবং হাজরা মোড় থেকে ধর্মতলা অভিমুখে রওনা হচ্ছে । ঘড়ির কাঁটায় সকাল 7:30 টা ৷ এর মধ্যে ধর্মতলায় প্রায় হাজার তিরিশেক মানুষের ভিড় ৷ বেলা যত বাড়বে, ততই বাড়বে জনসমাগম । তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য অনুযায়ী, আজ ধর্মতলায় রেকর্ড জমায়েত হবে । খোলা চোখে জনসমুদ্র দেখবে বাংলার মানুষ ।
আরও পড়ুন: শহিদ দিবসের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে ধর্মতলায় মমতা