ঝাড়গ্রাম, 23 এপ্রিল: জীবনের বাইশ গজে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন সচিন তেন্ডুলকর ৷ 'গড অফ ক্রিকেট'-এর জন্মদিনে সম্মান জানিয়ে দেশলাই বাক্সে তাঁর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুললেন ঝাড়গ্রামের যুবক গোপাল দাস ৷ এক-দু'দিনে নয়, দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রমে 50টি দেশলাই বাক্সে মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ে সচিনের মুখ ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি ৷
35 বছরের গোপাল দাস ঝাড়গ্রাম শহরের উত্তর বামদা এলাকার বাসিন্দা ৷ গোপাল পেশায় একজন চিত্রকর ৷ তিনি নিজের উদ্যোগে একটি আঁকার স্কুলও চালান ৷ ছোট থেকেই সচিনের বড় ভক্ত গোপাল ও তাঁর দুই ভাই ৷ আর ভগবানের প্রতি ভক্তিটা এতটাই যে বিশ্বকাপে ভারতের হারের পর রেডিয়ো ভেঙে ফেলেছিলেন গোপালের দাদা চঞ্চল দাস ৷ গোপাল জানান, 1996 বিশ্বকাপে ইডেনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ভারতের হারের পর তাঁর দাদা রেডিয়ো ভেঙে ফেলেছিলেন ৷
গোপাল নিজেও ভালো ক্রিকেট খেলতেন ৷ ঝাড়গ্রাম জেলায় বহু ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলেছেন তিনি ৷ আর তাই ক্রিকেট ঈশ্বরকেই নিজের অনুপ্রেরণা করেছিলেন তিনি ৷ গোপাল দাস জানান, সচিনের স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, আপার কাট এবং পুল শট দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন ৷ তাই ক্রিকেটার হিসেবে বড় হতে না-পারলেও, নিজের ছবি আঁকার প্রতিভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সচিনকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছেন গোপাল দাস ৷ তার খেলার মধ্যেই নিজের আঁকার জীবনশক্তি খুঁজে পেতেন ৷
তাই অনুপ্রেরণা সচিন তেন্ডুলকরের 50 বছরের জন্মদিনে বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলেন গোপাল দাস ৷ সেই ইচ্ছে থেকেই মনস্থির করেন, সচিনের সম্মানে 50টি দেশলাই বাক্সে মাস্টারের মিনিয়েচার ফুটিয়ে তুলবেন ৷ সেই মতো 50 দিন আগে থেকে একটি করে দেশলাইয়ের বাক্সে পেনসিল স্কেচে সচিনের মিনিয়েচার ছবি আঁকা শুরু করেন গোপাল দাস ৷ 50 রকম ভঙ্গিমায় সচিনের ছবি এঁকেছেন তিনি ৷ তাঁর এই সৃষ্টিকে সচিনের হাতে তুলে দিতে চান গোপাল ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এই ছবিগুলি যদি ওনার হাতে তুলে দিতে পারতাম তাহলে, আমার জীবন ধন্য হত ৷’’
আরও পড়ুন: সচিনের বাউন্সারে ফেটেছিল নাক, ক্রিকেট-ঈশ্বরের জন্মদিনে স্মৃতি রোমন্থন বান্টুর
গোপাল আগেও দেশলাই বাক্সে মিনিয়েচার ছবি এঁকেছেন ৷ সেই তালিকায় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, চার্লি চ্যাপলিন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, মাস্টারদা সূর্য সেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অমর্ত্য সেনের ছবি এঁকেছেন তিনি ৷ কুমড়োর বীজ শুকিয়ে তার উপরে গান্ধীজির ছবি এঁকেছেন ৷ গাছের পাতার উপরে গোপাল ফুটিয়ে তুলেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মুখাবয়ব ৷ অবসর সময়ে হাতের সামনে যা পান, সেগুলিকেই ক্যানভাসে পরিণত করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: এ টু জেড... সচিনের জীবনের সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে ইংরেজি বর্ণমালার সবক'টি অক্ষর
গোপালের দাদা চঞ্চল দাস অবশ্য বলেন, "ভাই ছোট থেকে আঁকতে খুব ভালোবাসে । ও এত সুন্দর ছবি আঁকে এবং সেগুলি যখন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তখন আমার বন্ধুরা বলে ছবিগুলো খুব ভালো এঁকেছে তোর ভাই ৷ তখন খুব গর্ববোধ হয় আমার ৷ বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে বাবার হুবহু ছবি এঁকেছিল গোপাল ৷ বাবা তখন ওকে খুব বাহবা দিয়েছিলেন ৷ বলেছিল একদিন না একদিন তোকে মানুষ চিনবে ৷"