ঝাড়গ্রাম, 5 সেপ্টেম্বর : জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী আতঙ্ক দেখা দিয়েছে । কখনও বাড়িতে টাকা চাওয়ার হুকুম দিয়ে এসেছে চিঠি ৷ কখনও বা অন্ধকারে গুলি । এবার পর্যটকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মাওবাদী অধ্যুষিত বেলপাহাড়ি পরিদর্শনে এলেন রাজ্য পুলিশের DG বীরেন্দ্র কুমার । জঙ্গলমহলের পুলিশ সুপারদের সঙ্গে করলেন বৈঠক ।
গত কয়েকদিন ধরে জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রামে পুনরায় মাওবাদী আতঙ্ক ফিরে এসেছে । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে টাকা চাওয়ার হুমকি দিয়ে ঘরের দুয়ারে চিঠি দিয়ে গেছে মাওবাদীরা । কখনও বা রাতের অন্ধকারে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে । সম্প্রতি, এক কন্ট্রাক্টরকে কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে মাওবাদীরা । যদিও এই ঘটনাকে মাওবাদী তত্ত্বে মানতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন । এরই মধ্যে মাওবাদী গেরিলাদের মুখোমুখি পর্যটকেরা ৷ পর্যটকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল মাওবাদী গেরিলাদের বিরুদ্ধে । যদিও এই অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের থেকে 4 পর্যটক ঘুরতে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির ঢাঙ্গিকুসুম গ্রামে । সেখানেই মাওবাদীদের মুখোমুখি হন এই পর্যটকরা । পর্যটকদের অভিযোগ , তাঁদের মোবাইল কেড়ে নেয় ওই সশস্ত্র বাহিনীরা । যদিও এই সশস্ত্র বাহিনীর কাউকে চিনতে পারেননি পর্যটকেরা । কারণ সকলের মুখ ছিল ঢাকা ও তারা সশস্ত্র অবস্থায় ছিল । পর্যটকরা বলেন, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেনি ওই মাওবাদী গেরিলা স্কোয়াড । এরপর পর্যটকরা বাড়ি ফিরে এসে অভিযোগ দায়ের করেন খড়গপুর থানায় । কিন্তু পরবর্তীকালে খড়্গপুর থানা তাঁদের মোবাইল হারানোর অভিযোগ করতে বলে ৷ সেই মোতাবেক পর্যটকেরা মোবাইল হারিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ।
এদিকে পুলিশ প্রশাসন রাতারাতি নবান্নে রিপোর্ট করে ৷ সেই মতো রাজ্য পুলিশের DG বীরেন্দ্র কুমার আজ হাজির হন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির ঢাঙ্গিকুসুম গ্রামে । ঘটনাস্থান ঘুরে দেখেন তিনি ৷ সঙ্গে ছিলেন ঝাড়গ্রাম পুলিশ সুপার অমিত কুমার রাঠোর ও অন্য আধিকারিকরা । এলাকা পরিদর্শনের আগেই তিনি এক উচ্চ প্রশাসনিক বৈঠক সারেন আধিকারিকদের সঙ্গে । যদিও, এবিষয়ে DG সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে রাজি হননি । তিনি শুধু বলেন, " মূলত একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে এলাকা ঘুরে দেখতে এসেছি । "
অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম পুলিশ সুপার অমিত কুমার রাঠোর সাংবাদিকদের বলেন, " ঝাড়গ্রাম জেলার পরিস্থিতি ও পর্যালোচনা করতে রাজ্য DG এসেছেন ৷ এবিষয়ে একটি বৈঠকও হয় । " যদিও মাওবাদীদের পর্যটকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, " পর্যটকরা এই গ্রামে ঘুরতে এসেছিলেন । সেখানে একটি মোবাইল তাঁরা হারিয়ে ফেলেন । তবে তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের মোবাইল মাওবাদীরা কেড়ে নিয়েছে ।" এলাকায় মাওবাদী পোস্টার-ব্যানার প্রসঙ্গে অমিতবাবু বলেন, "বিষয়টি কোনও দুষ্টচক্র করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । "
প্রশ্ন উঠছে, যদি মাওবাদী গতিবিধি না থাকে তাহলে কেন এত জরুরি তলব । কেন DG -র পরিদর্শন ওই এলাকায় । যদি মাওবাদী গতিবিধির অবকাশ না হয় , পর্যটকদের মোবাইল কাড়ার ঘটনা না থাকে তাহলে কেন তড়িঘড়ি রাজ্য পুলিশের DG চলে এলেন বেলপাহাড়ি সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখতে । এই নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন । যদিও CRPF সূত্রে খবর, মাওবাদী গতিবিধি দেখা গিয়েছে এলাকায় । সীমান্ত এলাকায় শুরু হয়েছে নতুন করে মাওবাদী গতিবিধি । বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড সীমান্ত এলাকায় পুরোনো স্কোয়াডের সদস্যরা আবার নতুন করে গেরিলা স্কোয়াডকে তৈরি করেছে ৷ তৈরি হয়েছে 13 জনের একটি দল । যার নেতৃত্বে মাওবাদী নেত্রী জবা রয়েছে । সেই গেরিলা স্কোয়াডের সদস্যদের দেখা দিয়েছে আনাচে-কানাচে এই বর্ডার এলাকায় । যেহেতু ঝাড়খণ্ড বর্ডার এলাকা তাই বিগত দিনেও এদের গতিবিধি এই এলাকায় দেখা গেছে । সেই স্কোয়াডে দেখা গেছে কতগুলি নতুন মুখ । যদিও পর্যটকেরা তাদের চিনতে পারেননি মুখ ঢেকে থাকার জন্য , চেনাও সম্ভব না । স্থানীয়দের আশঙ্কা, জবা তার গেরিলা বাহিনীকে নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক ফিরিয়ে আনতে চাইছে । শুরু করতে চাইছে সেই পুরানো দিনের আতঙ্কের পরিবেশ ।