জলপাইগুড়ি, 28 জুলাই : জলপাইগুড়ি জেলায় কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তদের কোরোনা হাসপাতালে আনার মতো পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই। ফলে, বিপাকে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ । প্রায়দিনই গড়ে 40-50 জন করে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জেলাজুড়ে ৷ কোরোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে আনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। এই পরিস্থিতিতে রোগীরা যদি নিজেরাই হাসপাতালে চলে আসেন তাহলে ভালো হয়, বলছেন সদর হাসপাতালের সুপার।
কোরোনায় আক্রান্তদের আনার জন্য জলপাইগুড়ির প্রতিটি ব্লকে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল । বর্তমানে তা বাড়ানো হয়েছে । জেলায় 28টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলি মূলত গর্ভবতী ও শিশুদের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব বা হাসপাতালে আনা ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় । প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে মায়েদের নিয়ে আসার কাজ করে থাকে। এই অ্যাম্বুলেন্সকে এখন কোরোনা রোগীদের আনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে নিশ্চয়যান গর্ভবতীদের হাসপাতালে আনা ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকে।
জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, "আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই ৷ ফলে, কোরোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে আনতে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি । প্রতিদিন কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । আমরা রোগীদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য গাড়ি বাইরে থেকে ভাড়া করে নিচ্ছি । কিন্তু কোরোনায় আক্রান্তদের আনার মতো অ্যাম্বুলেন্স আমরা পাচ্ছি না।"
অন্য়দিকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ গয়ারাম নস্কর বলেন, "অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা নিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলাশাসককে জানিয়েছেন। তবে, অ্যাম্বুলেন্স দিলেই হল না। এই সকল রোগীকে আনার ক্ষেত্রে ড্রাইভার ও তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট সহজে পাওয়া যায় না। যাঁরা কোরোনা পজ়িটিভ হয়েছেন তাঁরা তো বাড়িতেই রয়েছেন । তাঁরা যদি নিজেরাই হাসপাতালে চলে আসেন তাহলে বাদবাকি ব্যবস্থা আমরা করে দেব ৷ প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স অনেক চেষ্টা করেও পাইনি । তাই আমরা 102-এর অ্যাম্বুলেন্সের উপরই নির্ভর করে আছি। এবং অনেকেই নিজেরাই হাসপাতালে চলে আসছেন ।"
জলপাইগুড়ি জেলায় অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে প্রায় 218 টি । জেলায় বেসরকারি নিশ্চয়যান আছে 140 টি। সরকারি 28 টি (102), অন্যান্য 50টি( পুলিশ, পঞ্চায়েত সমিতি, পৌরসভা, সাংসদ কোটায় দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স ) । বর্তমানে কোরোনা রোগীদের আনার জন্য জলপাইগুড়ি জেলায় রাখা হয়েছে 8টি অ্যাম্বুলেন্স। জেলা সদরে 2 টি, জেলার প্রত্যেক ব্লকে 1টি করে । প্রত্যেক অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে 12 ঘণ্টা করে শিফট দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ও তাঁর সহযোগীকে PPE কিট দেওয়া হয়েছে।
অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অপারেটর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, " আমাদের সংগঠনে 105 টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছে না। এটা ভুল কথা। আমাদের কাছে কেউ অ্যাম্বুলেন্স চায়নি। আমরা কোরোনা রোগীদের বাড়ি পৌঁছানোর কাজটা করেই আসছি। কেউ আমাদের বলেনি, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আমাদের জেলাশাসক ডেকে দু'টো অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা দেব। কিন্তু, লিখিত আমাদের দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে পরিষেবা আমরা দিচ্ছি এবং আগামীদিনে সরকারের পাশে আছি। কিন্তু আমাদের কেউ আজ পর্যন্ত ডেকে বা লিখিতভাবে কিছুই জানায়নি। আমাদের জেলার জলপাইগুড়ি সদরে 43টি, ময়নাগুড়িতে 14টি, মালবাজারে 14টি, ধুপগুড়িতে 12টি, রাজগঞ্জে 6টি, বেলাকোবায় 4 টি, মেটেলিতে 4 টি ও নাগরাকাটায় 8 টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স দেব।"
অ্যাম্বুলেন্স চালক মহম্মদ আলি জানান, " আমাদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স চাওয়াই হয়নি। সরকারিভাবে কেউ জানায়নি। আমরা পরিষেবা দেওয়ার জন্য আছি। আমাদের যদি একটু নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়। PPE কিট দেওয়া হলে আমরা কাজ করব। কিন্তু আমাদের যদি কিছু হয় তাহলে সরকার থেকে একটা সাহায্য করলে ভালো হয়। "