জলপাইগুড়ি, 14 জুলাই: ভুটান থেকে নেমে আসা নদীগুলির হরপা বানে প্রতিবছরই ভাসে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা । কিন্তু ভুটানে কত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা জানার কোনও উপায় নেই। অর্থাৎ ভুটানে রেইন গেজ মিটার নেই । ফলে আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না বলেই সমস্যা চরমে ওঠে । বর্ষাকাল এলেই ভুটানের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনের । উদ্ধারকাজে নামতে হয় পুলিশ, প্রশাসনকেও ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে ভুটান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে ৷ বিষয়টি নিয়ে তিনিও চিন্তিত ৷
প্রতি বছরই বর্ষাকালে ভুটানের জলে প্লাবিত হয় উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা । আগাম সতর্কবার্তা দিতে না পারার দরুণ ভুটান পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির জেরে প্রায়শই ভুটান থেকে নেমে আসা নদীগুলির জলস্ফীতি বেড়ে গিয়ে প্লাবিত হয় ভুটান সংলগ্ন ভারতের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা । আলিপুরদুয়ার জেলার বাসরা, কালজানি, সংকোশ, বিরবিটি, হাউরি, রেতি, সুকৃতি, পানা নদীর জলে আলিপুরদুয়ার জেলার জঁয়গা, কালচিনি, বীরপাড়া, মাদারিহাট ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় । এই সমস্যার সমাধানের জন্য জয়েন্ট অ্যাকশান কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ভুটান সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও তিনি জেলা প্রশাসনকে নিতে বলা হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচিব পর্যায়ে ভুটান সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন । বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিবকে ভুটান সরকারের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, যাতে ভুটান থেকে আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যায় এবং তৈরি থাকতে পারে এই রাজ্যের প্রশাসনও ।
অতীতেও দেখা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার জলঢাকা, ডায়না, বানারহাট, নাগরাকাটা, বিন্নাগুড়ি, চামুর্চি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয় । ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলির জলে প্লাবিত ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকা তার একটাই কারণ ভুটানে কত পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তা ভারত জানতে পারছে না । ফলে সমতলের মানুষদের সচেতন করতে পারছে না প্রশাসন । তাই ভুটানে লাগাতার বৃষ্টি হলে হঠাৎ করে জল চলে আসছে ভুটানের পার্শ্ববর্তী এই রাজ্যের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন গ্রামে । কয়েক ঘণ্টার হড়পা বানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অনেক কিছুই ।
আরও পড়ুন: অতি বৃষ্টিতে ভাসছে পাহাড়, বিপর্যস্ত জনজীবন
বৃহস্পতিবারও পানা নদীর খরস্রোতা জল ঢুকে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ৷ যার ফলে নামানো হয় সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনাকেও । গতকাল হড়পা বানে উদ্ধার কাজে সিভিল ডিফেন্স কর্মীকে উৎসাহিত করতে কালচিনির বিডিও প্রশান্ত বর্মনকেও কোমর জলে নামতে হয় । ভুটানের থেকে নেমে আসা নদীগুলির স্রোতের তেজ এত থাকে যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক হয় । ভুটান থেকে নেমে আসা জলে জলপাইগুড়ি জেলার হাতিনালা ঝোড়ার জল ঢুকে প্রতিবার প্লাবিত হয় ধূপগুড়ি ব্লকের বিন্নাগুড়ি, বানারহাটের সুভাষ নগর, শান্তিনগর, সুকান্তনগর । ক্ষতিগ্রস্থ হয় ছোট-বড় সেতু, জাতীয় সড়কের রাস্তা ।
উত্তরবঙ্গ ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন যা বর্তমানে সেচ দফতরের নর্থ ইস্ট সেচ বিভাগ হয়েছে তার চিফ ইঞ্জিনিয়র কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন,"ভুটানে কোনও রেইনগেজ মিটার নেই ফলে আমরা কোনও পূর্বাভাস পাই না । এমনকি জিটিএ এলাকাতেও কোনও রেইনগেজ মিটার নেই ফলে পাহাড়ে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে সেটাও আমরা জানতে পারি না । গত বছর দুর্গাপুজোর বিসর্জনের দিন মাল নদীর হড়পা বানে কয়েকজন মারাও যান ৷ আমরা চেষ্টা করছি যাতে সমস্যা মেটানো যায় । তবে ভুটানের সঙ্গে এখনও কোনও কিছু আলোচনা এগোয়নি ।" জলপাইগুড়ির বাসিন্দা স্বপন তলাপাত্র জানান, ভুটানের জলে প্রতিবছর জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার ভাসে । ভুটান থেকে আগাম সতর্কবার্তা না আসার ফলে এলাকা বানভাসী হয় ৷