ETV Bharat / state

সাফ হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল, বাড়ছে অবৈধ খনন ; গতিপথ পালটাচ্ছে নদী - Rivers of North bengal

রয়েছে গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশিকা । তবুও অবাধে চলছে বালি ও পাথর তোলার কাজ । যার ফলে গতি পরিবর্তন করছে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি নদী । সমস্যায় পড়ছেন মানুষজন । ভেসে যাচ্ছে একাধিক গ্রাম । এর পাশাপাশি ভুটান থেকে বয়ে আসা নদীতেও গাছ কাটা, বালি তোলার ফলে বাড়ছে হড়পা বানের সংখ্যা । প্লাবিত হচ্ছে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্সের বেশকিছু এলাকা ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Jun 5, 2020, 3:16 PM IST

Updated : Jun 25, 2020, 12:18 PM IST

জলপাইগুড়ি, 5 জুন : বাঁচাতে হবে নদী । বন্ধ করতে হবে অবৈধ বালি খাদান বা পাথর খাদান । এই বিষয়টি মাথায় রেখেই মাস কয়েক আগে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল পাথর ও বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল । এই বিষয় পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকারও । কিন্তু কোথায় কী ? পালটায়নি বালি চুরির দৃশ্যটা । আর এর জেরেই গতিপথ পালটাচ্ছে তিস্তার মতো উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি নদী । যাতে একদিকে বাড়ছে হড়পা বানের সংখ্যা, অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন ।

কেন নদীপথ পরিবর্তন হচ্ছে বিষয়টি দেখতে গিয়ে অবৈধ বালি খাদান ও পাথর তোলার বিষয়টি উল্লেখ করেন পরিবেশবিদরা । বিষয়টি তাঁরা গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নজরে আনেন । এরপর এবিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । কিন্তু কিছুই পালটায়নি । একাধিক এলাকা জলের তলায় যাওয়ার পরও পরিবর্তন হয়নি ছবিটায় । এখন খুব তাড়াতাড়ি সরকার কড়া পদক্ষেপ না করলে সমস্যা চরমে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা ।

যেমন সিকিম থেকে নেমে আসা জলপাইগুড়ির শহর সংলগ্ন তিস্তা নদী সম্প্রতি তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে । জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকায় চলে এসেছে এটি । এর আগে বিগত দশ বছর ধরে তিস্তা নদী ময়নাগুড়ির বার্ণিশ এলাকা দিয়ে মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে যেত । কিন্তু রংধামালি এলাকায় তিস্তায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে । দীর্ঘ কয়েক বছর পর ফের শহর সংলগ্ন সারদা পল্লি এলাকা দিয়ে বইতে শুরু করেছে তিস্তা । এবছর সেটা বেশি করে লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এটা শুধুমাত্র পাথর ও বালি তোলার ফলেই হয়েছে বলে জানান জলপাইগুড়ি সায়েন্স নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউত ।

তিনি আরও জানান, আলিপুরদুয়ারের শীলতোর্সার নদী খাতেও পরিবর্তন হচ্ছে বালি পাথর তোলার জন্য । শীলতোর্সা মাঝে মধ্যেই জলদাপাড়া এলাকায় ঢুকে যাচ্ছে । যাতে করে প্রচুর গাছ জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে । আলিপুরদুয়ারের কালজানি, রায়ডাক নদীও একই ভাবে খাত পরিবর্তন করে বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভে ঢুকে যাচ্ছে । জলপাইগুড়ির জলঢাকা, ডায়না, বানারহাট, নাগরাকাটা, বিন্নাগুড়ি, চামুর্চির জলে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ, কালচিনি, বীরপাড়া, মাদারিহাট ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় । এই নদীগুলির পাশাপাশি ভুটান থেকে নেমে আসা বাসরা, কালজানি, সংকোশ, বিরবিটি, হাউরি, রেতি, সুকৃতি নদীগুলির জন্যও প্লাবিত হয় ডুয়ার্স । প্লাবিত হয় জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা । এক্ষেত্রে আগাম সতর্কবার্তাও পাওয়া যায় না ভুটান থেকে । ভুটানে কত পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তা জানতে পারি না আমরা । ফলে সমতলের মানুষকে সচেতন করা সম্ভব হয় না । তাই ভুটানে লাগাতার বৃষ্টি হলে হঠাৎ করে জল চলে আসছে ভুটানের পার্শ্ববর্তী জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন গ্রামে । কয়েক ঘণ্টার হড়পা বানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অনেক কিছুই । ভুটান থেকে নেমে আসা জলপাইগুড়ি জেলার হাতিনালা ঝোড়ার জল ঢুকে প্রতিবার প্লাবিত হয় ধুপগুড়ি ব্লকের বিন্নাগুড়ি, বানারহাটের সুভাষ নগর, শান্তিনগর, সুকান্তনগর এলাকা । প্লাবিত হয় বানারহাট এবং লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বেশ কিছু এলাকাও । ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোটো -বড় সেতু ও জাতীয় সড়ক । এমনকী যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।

এবিষয়ে রাজা রাউতের অভিযোগ, "ভারত ও ভুটানের আন্তরিকতার অভাব আছে । দুই দেশের সরকারের আলোচনায় বসে সমস্যা মিটছে না । ভুটানে খনন হচ্ছে অবৈধভাবে, সেখানে মারাত্মক ভাবে গাছ কাটা হচ্ছে । গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নদী থেকে বালি পাথর তোলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে । কোথায় কীভাবে তোলা হবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । তা স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ভাবে দেখতে হবে বলা আছে । যেখানে বালি পাথর তোলা উচিত নয় সেখানে বেশি করে তোলা হচ্ছে । নদীর খাত পরিবর্তন হচ্ছে । ফলে মানুষের জীবন জীবিকার সমস্যা হচ্ছে । নদীর যে প্রাকৃতিক প্রবাহমানতা, তা নষ্ট হচ্ছে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই নদী কিন্তু বন্যার কারণ হয়ে যাচ্ছে ।"

এদিকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, "১৯৯৮ সালে নদী থেকে বালি পাথর উত্তোলন হলে কী কী ক্ষতি হয় তা সমীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি হয়েছিল । আমরা তিন বছর কাজ করে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছিলাম । তাতে দেখা গেছে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়াসহ অনেক সমস্যা হয় । এরপর নদীর কোন জায়গা থেকে বালি পাথর তোলা যাবে আর কোথায় যাবে না তার নির্দেশিকা দেওয়া হয় কিন্তু এখন মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে । কিছু মাফিয়া এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে নদীর বেডে গিয়ে দেখাশোনা করাও সম্ভব হচ্ছে না ।

গতিপথ পালটাচ্ছে নদী, দেখুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

তিনি আরও বলেন, "গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নদী থেকে বালি- পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । এখন যা উত্তোলন হচ্ছে সব অবৈধভাবে হচ্ছে । এরফলে নদীর গতিপথ পরিবির্তন হবে । যদি নির্দিষ্টভাবে নদীর কোন জায়গা থেকে বালি পাথর তোলা যাবে তা ঠিক করে দেওয়া হয় তাহলে ভালো হত । কিন্তু নদীতে যেভাবে মেশিন লাগিয়ে বালি পাথর তোলা হচ্ছে তাতে বন্যা হতে পারে । পাড় ভাঙতে পারে । ভুটানে বৃষ্টিপাত মাপার স্টেশন তেমন নেই । যা আছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যা ভারতের থেকে বসানো হয়েছে । তবে সেই সতর্ক বার্তা CWC, IMD- তে দেওয়া হয় । তৃণমূল স্তরে আসে না । ফলে সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষ পায় না । যার ফলে ভুটান থেকে নেমে আসা নদীর হড়পা বানে ডুয়ার্স প্লাবিত হয় । এখন দরকার ভুটানে গাছ লাগানো । আর এটা একদিনে হবে না । প্রায় 40 থেকে 50 বছর লাগবে এই সমস্যার সমাধান হতে । কারণ ভুটানে অনেক রাস্তাঘাট, বাড়িঘর বানানো হচ্ছে ফলে গাছ কাটা চলছে । আর তা নেমে আসছে ভারতের দিকে । প্রতিবছর দুই দেশের সরকার এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করলেও তা সমস্যার কোনও সমাধান হয় না । আমিও এর আগে এই কমিটির সদস্য ছিলাম । ভুটান সমস্যার কথা মেনেও নিয়েছে যে বৃষ্টির তারা আগাম কোনও সতর্কবার্তা দিতে পারে না । প্রতিবছর বর্ষাকাল হলেই এটা নিয়ে আলোচনা হয় । তারপর সব থিতিয়ে যায় ।"

তবে, সম্প্রতি জানা গেছে, তিস্তাসহ ১১ টি নদী থেকে বালি, পাথর তোলা হচ্ছে এই অভিযোগ করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । তার ভিত্তিতে বালি-পাথর তোলায় স্থগিতাদেশ জারি করা হয় । তবে, এলাকাবাসীর দাবি, সেসবই নির্দেশিকা হিসেবেই থেকে যায় । আদতে অবৈধভাবে এসব কাজ চলছেই । এবং ভুগছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের এই সব এলাকার মানুষজন ।

জলপাইগুড়ি, 5 জুন : বাঁচাতে হবে নদী । বন্ধ করতে হবে অবৈধ বালি খাদান বা পাথর খাদান । এই বিষয়টি মাথায় রেখেই মাস কয়েক আগে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল পাথর ও বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল । এই বিষয় পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকারও । কিন্তু কোথায় কী ? পালটায়নি বালি চুরির দৃশ্যটা । আর এর জেরেই গতিপথ পালটাচ্ছে তিস্তার মতো উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি নদী । যাতে একদিকে বাড়ছে হড়পা বানের সংখ্যা, অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন ।

কেন নদীপথ পরিবর্তন হচ্ছে বিষয়টি দেখতে গিয়ে অবৈধ বালি খাদান ও পাথর তোলার বিষয়টি উল্লেখ করেন পরিবেশবিদরা । বিষয়টি তাঁরা গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নজরে আনেন । এরপর এবিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । কিন্তু কিছুই পালটায়নি । একাধিক এলাকা জলের তলায় যাওয়ার পরও পরিবর্তন হয়নি ছবিটায় । এখন খুব তাড়াতাড়ি সরকার কড়া পদক্ষেপ না করলে সমস্যা চরমে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা ।

যেমন সিকিম থেকে নেমে আসা জলপাইগুড়ির শহর সংলগ্ন তিস্তা নদী সম্প্রতি তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে । জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকায় চলে এসেছে এটি । এর আগে বিগত দশ বছর ধরে তিস্তা নদী ময়নাগুড়ির বার্ণিশ এলাকা দিয়ে মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে যেত । কিন্তু রংধামালি এলাকায় তিস্তায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে । দীর্ঘ কয়েক বছর পর ফের শহর সংলগ্ন সারদা পল্লি এলাকা দিয়ে বইতে শুরু করেছে তিস্তা । এবছর সেটা বেশি করে লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এটা শুধুমাত্র পাথর ও বালি তোলার ফলেই হয়েছে বলে জানান জলপাইগুড়ি সায়েন্স নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউত ।

তিনি আরও জানান, আলিপুরদুয়ারের শীলতোর্সার নদী খাতেও পরিবর্তন হচ্ছে বালি পাথর তোলার জন্য । শীলতোর্সা মাঝে মধ্যেই জলদাপাড়া এলাকায় ঢুকে যাচ্ছে । যাতে করে প্রচুর গাছ জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে । আলিপুরদুয়ারের কালজানি, রায়ডাক নদীও একই ভাবে খাত পরিবর্তন করে বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভে ঢুকে যাচ্ছে । জলপাইগুড়ির জলঢাকা, ডায়না, বানারহাট, নাগরাকাটা, বিন্নাগুড়ি, চামুর্চির জলে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ, কালচিনি, বীরপাড়া, মাদারিহাট ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয় । এই নদীগুলির পাশাপাশি ভুটান থেকে নেমে আসা বাসরা, কালজানি, সংকোশ, বিরবিটি, হাউরি, রেতি, সুকৃতি নদীগুলির জন্যও প্লাবিত হয় ডুয়ার্স । প্লাবিত হয় জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা । এক্ষেত্রে আগাম সতর্কবার্তাও পাওয়া যায় না ভুটান থেকে । ভুটানে কত পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তা জানতে পারি না আমরা । ফলে সমতলের মানুষকে সচেতন করা সম্ভব হয় না । তাই ভুটানে লাগাতার বৃষ্টি হলে হঠাৎ করে জল চলে আসছে ভুটানের পার্শ্ববর্তী জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন গ্রামে । কয়েক ঘণ্টার হড়পা বানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অনেক কিছুই । ভুটান থেকে নেমে আসা জলপাইগুড়ি জেলার হাতিনালা ঝোড়ার জল ঢুকে প্রতিবার প্লাবিত হয় ধুপগুড়ি ব্লকের বিন্নাগুড়ি, বানারহাটের সুভাষ নগর, শান্তিনগর, সুকান্তনগর এলাকা । প্লাবিত হয় বানারহাট এবং লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বেশ কিছু এলাকাও । ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোটো -বড় সেতু ও জাতীয় সড়ক । এমনকী যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।

এবিষয়ে রাজা রাউতের অভিযোগ, "ভারত ও ভুটানের আন্তরিকতার অভাব আছে । দুই দেশের সরকারের আলোচনায় বসে সমস্যা মিটছে না । ভুটানে খনন হচ্ছে অবৈধভাবে, সেখানে মারাত্মক ভাবে গাছ কাটা হচ্ছে । গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নদী থেকে বালি পাথর তোলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে । কোথায় কীভাবে তোলা হবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । তা স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ভাবে দেখতে হবে বলা আছে । যেখানে বালি পাথর তোলা উচিত নয় সেখানে বেশি করে তোলা হচ্ছে । নদীর খাত পরিবর্তন হচ্ছে । ফলে মানুষের জীবন জীবিকার সমস্যা হচ্ছে । নদীর যে প্রাকৃতিক প্রবাহমানতা, তা নষ্ট হচ্ছে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই নদী কিন্তু বন্যার কারণ হয়ে যাচ্ছে ।"

এদিকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, "১৯৯৮ সালে নদী থেকে বালি পাথর উত্তোলন হলে কী কী ক্ষতি হয় তা সমীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি হয়েছিল । আমরা তিন বছর কাজ করে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছিলাম । তাতে দেখা গেছে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়াসহ অনেক সমস্যা হয় । এরপর নদীর কোন জায়গা থেকে বালি পাথর তোলা যাবে আর কোথায় যাবে না তার নির্দেশিকা দেওয়া হয় কিন্তু এখন মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে । কিছু মাফিয়া এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে নদীর বেডে গিয়ে দেখাশোনা করাও সম্ভব হচ্ছে না ।

গতিপথ পালটাচ্ছে নদী, দেখুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

তিনি আরও বলেন, "গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নদী থেকে বালি- পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । এখন যা উত্তোলন হচ্ছে সব অবৈধভাবে হচ্ছে । এরফলে নদীর গতিপথ পরিবির্তন হবে । যদি নির্দিষ্টভাবে নদীর কোন জায়গা থেকে বালি পাথর তোলা যাবে তা ঠিক করে দেওয়া হয় তাহলে ভালো হত । কিন্তু নদীতে যেভাবে মেশিন লাগিয়ে বালি পাথর তোলা হচ্ছে তাতে বন্যা হতে পারে । পাড় ভাঙতে পারে । ভুটানে বৃষ্টিপাত মাপার স্টেশন তেমন নেই । যা আছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যা ভারতের থেকে বসানো হয়েছে । তবে সেই সতর্ক বার্তা CWC, IMD- তে দেওয়া হয় । তৃণমূল স্তরে আসে না । ফলে সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষ পায় না । যার ফলে ভুটান থেকে নেমে আসা নদীর হড়পা বানে ডুয়ার্স প্লাবিত হয় । এখন দরকার ভুটানে গাছ লাগানো । আর এটা একদিনে হবে না । প্রায় 40 থেকে 50 বছর লাগবে এই সমস্যার সমাধান হতে । কারণ ভুটানে অনেক রাস্তাঘাট, বাড়িঘর বানানো হচ্ছে ফলে গাছ কাটা চলছে । আর তা নেমে আসছে ভারতের দিকে । প্রতিবছর দুই দেশের সরকার এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করলেও তা সমস্যার কোনও সমাধান হয় না । আমিও এর আগে এই কমিটির সদস্য ছিলাম । ভুটান সমস্যার কথা মেনেও নিয়েছে যে বৃষ্টির তারা আগাম কোনও সতর্কবার্তা দিতে পারে না । প্রতিবছর বর্ষাকাল হলেই এটা নিয়ে আলোচনা হয় । তারপর সব থিতিয়ে যায় ।"

তবে, সম্প্রতি জানা গেছে, তিস্তাসহ ১১ টি নদী থেকে বালি, পাথর তোলা হচ্ছে এই অভিযোগ করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । তার ভিত্তিতে বালি-পাথর তোলায় স্থগিতাদেশ জারি করা হয় । তবে, এলাকাবাসীর দাবি, সেসবই নির্দেশিকা হিসেবেই থেকে যায় । আদতে অবৈধভাবে এসব কাজ চলছেই । এবং ভুগছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের এই সব এলাকার মানুষজন ।

Last Updated : Jun 25, 2020, 12:18 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.