ইম্ফল, 22 জানুয়ারি: বিজেপি শাসিত মণিপুুরের এনডিএ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছেন জেডি(ইউ) বিধায়ক ৷ বুধবার দুপুরে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করছে নীতীশ কুমারের দল ? এরপর বিকেলে এই খবর ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন জেডি(ইউ)-র জাতীয় মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন প্রসাদ ৷
এদিকে দল-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে মণিপুরে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সভাপতি কেএসএইচ বীরেন সিংকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করে জনতা দল (ইউনাইটেড) । ভিডিয়ো বার্তায় জেডি(ইউ)-র জাতীয় মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন সাফ জানান, সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি মিথ্যা রটনা ৷ জেডি(ইউ), এনডিএ জোটের সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে ৷
এদিকে এনডিএ জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার বিষয়টি মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় ভাল্লাকে চিঠিতে জানিয়েছেন স্বয়ং রাজ্যের জেডি(ইউ) সভাপতি কেএসএইচ বীরেন সিং ৷ এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ধন্দ তৈরি হয় ।
রাজ্যপাল লেখা চিঠি এবং বিভ্রান্তি
রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে জেডি(ইউ) সভাপতি কেএসএইচ বীরেন সিং জানিয়েছিলেন, "এতদ্বারা আবারও জানানো হচ্ছে, মণিপুরের জেডি(ইউ) শাখা বিজেপি শাসিত সরকারকে সমর্থন করছে না ৷ পাশাপাশি আমাদের একমাত্র বিধায়ক মহম্মদ আবদুল নাসিরকে বিধানসভায় বিরোধী বিধায়ক হিসেবেই ধরা হোক ৷" এই চিঠিতে সভাপতির স্বাক্ষর রয়েছে ৷
কেন্দ্রে বিজেপি সরকারে এনডিএ জোটের সদস্য নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) ৷ সেই দল বিজেপি পরিচালিচ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছে বলে খবর ছড়ায় । দলের এক শীর্ষনেতা জানান, জেডি(ইউ) মণিপুরের সরকারের থেকে সমর্থন আগেই তুলে নিয়েছে ৷ এই চিঠিতে সেই বিষয়টিই আরও একবার জানানো হয়েছে মাত্র ৷ তিনি বলেন, "গত বিধানসভা অধিবেশনেও তো লিলং-এর বিধায়ক নাসির বিরোধী আসনেই বসেছিলেন ৷" দলের অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আবদুল নাসির বীরেন সিং সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেননি ৷ তিনি খুব শীঘ্রই দিল্লি যাবেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন ৷
জেডি(ইউ)-র দাবি
বিকেলে জনতা দল (ইউনাইটেড) মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন প্রসাদ সংবাদমাধ্যমে এই খবরকে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেন ৷ তিনি বলেন, "এই খবর ভুয়ো। সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ৷ দল এই ঘটনা জানতে পেরেছে এবং মণিপুরে জেডি(ইউ) সভাপতিকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে ৷ আমরা এনডিএ-কে সমর্থন জানিয়েছি ৷ ভবিষ্যতেও মণিপুরে এনডিএ সরকারে আমাদের সমর্থন চালিয়ে যাব ৷"
এমন ঘটনা কেন ঘটল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাতীয় মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন প্রসাদ বলেন, "জেডি(ইউ)-এর মণিপুর শাখার সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও যোগাযোগ ছিল না ৷ তিনি নিজের সিদ্ধান্তে চিঠি লিখেছেন ৷ তাঁর এই কাজ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে ৷ তাই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে এবং পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়েছে ৷"
জটিলতা কোথায় ?
2022 সালের মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে 60টি আসনের মধ্যে 6টি আসনে জয়ী হয়েছিল জনতা দল (ইউনাইটেড) ৷ কিন্তু কয়েক মাস পর অগস্টে বিহারে এনডিএ সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেন নীতীশ ৷ কংগ্রেস, আরজেডিকে সঙ্গে নিয়ে বিহারে তৈরি হয় মহাজোটের সরকার ৷ এই সময় মণিপুরেও একই ঘটনা ঘটে ৷ বিজেপি শাসিত সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেয় জেডি(ইউ) ৷ তখন ছ'জনের মধ্য়ে পাঁচজন বিধায়ক দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ৷ সংখ্যার দিক থেকে সমস্যা না থাকায় মণিপুর বিধানসভার অধ্যক্ষ থোকচোম সত্যব্রত এই দলবদলকে মান্যতা দেন ৷
এরপর 2023 সালের জানুয়ারি মাসে ফের শিবির বদল করেন নীতীশ কুমার ৷ বিহারে বহুচর্চিত মহাজোট ভেঙে আবারও বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ৷ নয়া এনডিএ সরকার তৈরি হয় বিহারে ৷ এই প্রসঙ্গে মণিপুরের এক জেডি(ইউ) নেতার দাবি, তাঁরা সে সময় তৎকালীন রাজ্যপাল লক্ষ্মী প্রসাদ আচার্যকে জানিয়েছেন, জেডি(ইউ) রাজ্য সরকারকে ইস্যু ভিত্তিক সমর্থন করবে ৷ এর আগে 2024 সালের 18 নভেম্বর মণিপুরের এনডিএ সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল ন্যাশনাল পিপল'স পার্টি (এনপিপি) ৷ কনরাড সাংমার দলের সাতজন বিধায়ক ছিলেন মণিপুরের জোট সরকারে ৷
নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) যদি সমর্থন প্রত্যাহার করত
জেডি(ইউ) সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনাটি বাস্তবায়িত হলেও মণিপুর সরকারের উপর গুরুত্বপূর্ণ কোনও প্রভাব ফেলত না ৷ 60 সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় 37টি আসনই বিজেপির দখলে অর্থাৎ কেন্দ্রের শাসকদল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ৷ এছাড়া সরকারের সঙ্গে নাগা পিপল'স ফ্রন্টের (এনপিএফ) পাঁচ জন বিধায়ক এবং তিনজন নির্দল সদস্যের সমর্থন রয়েছে ৷ শুধু একটি মাত্র আসন রয়েছে জেডি(ইউ)-এর এবং দিনের শেষে জেডি(ইউ) বিধায়কের এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসার খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে নীতীশ কুমারের দল ৷