জলপাইগুড়ি, 8 জুন: বিল দেয়নি । তাই বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছে । তাতে কী, থোড়াই কেয়ার ৷ বাড়িতে মিটারের গায়ে হলুদ কার্ড আর হলুদ পতাকা লাগালেই বিদ্যুৎ সংযোগ চলে আসবে । তার জন্য অবশ্য গুনতে হবে 500 টাকা । পরিবর্তে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কোনও টাকা দিতে হবে না । শর্ত একাটাই দ্য গ্রেটার কোচবিহারের পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে ৷ শুনতে অবাক হলেও এটাই বাস্তব । সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইভাবেই বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের একাংশ । বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কর্মীরা এলাকায় পদক্ষেপ নিতে গেলেই হেনস্থা হচ্ছেন বলে অভিযোগ ।
এই শর্তেই বছরের পর বছর দ্য গ্রেটার কোচবিহারের পিপলস অ্যাসোসিয়েশন হলুদ পতাকা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল না-দিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন প্রায় 450টি পরিবার । গ্রেটার কোচবিহার পিপুলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেই দেওয়া হচ্ছে গ্রেটারের পতাকা । আর তাতেই কেল্লাফতে ৷ কোনও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কর্মীকে সেই সকল বাড়িতে মিটার রিডিং নিতে দেওয়া হচ্ছে না ।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের অভিযোগ, হুমকির ভয়ে কখনও বা মিটার রিডিং নিলেও বিলও দিচ্ছেন না কোম্পানির কর্মীরা । এদিকে এইভাবে চলার ফলে বকেয়া বিদ্যুতের বিল দাড়িয়েছে প্রায় 50-60 লক্ষ টাকা । ফলে সমস্যার পরেছেন বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিরা । বিল না দিয়েই বছরের পর বছর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের পান্ডাপাড়া মণ্ডলঘাট, মালকানি এলাকার 450টি পরিবার । যারা কী না নিজেদের গ্রেটার কোচবিহারের সমর্থক বলে দাবি করেন । আবার অনেকে বিল না দেওয়ার জন্য গ্রেটারের সমর্থক হয়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মীদের । তাই বিল না দেওয়ার জন্য বাড়িতে মিটারের গায়ে হলুদ পতাকা লাগিয়ে দিচ্ছেন ।
এই প্রসঙ্গেই গ্রাহক হিমদিনী কর্মকার বলেন, "বাড়িতে হলুদ পতাকা লাগানো থাকলে বিল নেয় না । আমরা বিদ্যুতের বিল দিই না । বিল আসেও না । একবারে আমাদের অনেক বিল এসেছিল । লাইন কেটে দিয়েছিল ৷ তারপর গ্রেটারের লোকেরা এসে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে হলুদ পতাকা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে ।" আরও এক গ্রাহক সুরজিৎ সুত্রধর জানান, তাঁর বাড়িতে মিটারের সঙ্গে হলুদ পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে । একবছর ধরে বিল দিতে হয়নি । একটা কার্ড দেখিয়েই জানান, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কেউ এলে সেই কার্ড ও পতাকা দেখাতে । তবেই হবে ৷ ইতিপূর্বে একবার বিদ্যুতের বিল না দেওযার ফলে বিদ্যুৎ কেটে দিয়েছিল বিদ্যুৎ কোম্পানির লোক । এরপর গ্রেটারের লোকেরা এসে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গিয়েছে । তারজন্য অবশ্য 500 টাকা দিতে হয়েছে । তবে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার পর অবশ্য তাঁকে বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে না ৷
এই প্রসঙ্গেই বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির জলপাইগুড়ির রিজিওনাল ম্যানেজার সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, "গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নাম করে কিছু মানুষ বিদ্যুতের বিল দিচ্ছেন না । তাতে করে আমাদের সমস্যা হচ্ছে । আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি । প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে । যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে তাদের বিদ্যুতের বিল দিতেই হবে । আমরা এবার কড়া পদক্ষেপ নেব ।"
আরও পড়ুন : মমতার রাজত্বে সন্ত্রাস চলছে, দিনহাটায় মৃত বিজেপি নেতার বাড়িতে এসে তোপ সুশীল মোদির
বিদ্যুৎ কোম্পানির আরও এক কর্মী বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, "গ্রেটারের ঝান্ডা ঝুলিয়ে সমস্যা করছে । মিটারের রিডিং যখন নিতে যাচ্ছে তাদের বাড়ি ঢুকতে পারছে না । গ্রাহকরা গালিগালাজ করছে । আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে । আমরা কাজ করতে পারছি না । সঠিক রিডিং নিতে পারছি না । বিল দেবে না এটাই তাদের দাবি ।"
আরও পড়ুন : 'দম থাকলে সিকিউরিটি ছাড়া বের হন', সুকান্তর হুঁশিয়ারির পালটা দিলেন উদয়নও
এদিকে দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বংশী বদন বর্মন বলেন, "আমাদের একটাই দাবি কোচবিহার রাজ্য কিভাবে পশ্চিমবঙ্গের জেলা হল । আমরা কোচবিহার রাজ্যের নাগরিক । আমাদের আগে সরকার জানাক । তার আগে আমরা বিদ্যুতের বিল দেব না ।"