ETV Bharat / state

টোটোদের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন শিক্ষার আলো, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন মিশা ঘোষাল - President's Award for Teachers

আদিম এই জনগোষ্ঠীর প্রতি একটা আত্মিক টান অনুভব করেন ৷ সেই টান থেকেই এত বছর ধরে ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করা ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে টোটোপাড়ার এই স্কুলকে বিশেষ স্কুলের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাবেন ৷ জানালেন শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল ৷

Misha Ghoshal
মিশা ঘোষাল
author img

By

Published : Aug 23, 2020, 9:12 AM IST

জলপাইগুড়ি, 23 অগাস্ট : টোটো ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট আদিম জনজাতি ৷ ভারত-ভুটান সীমান্তে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় টোটোদের বাস ৷ এই আদিম জনজাতির মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য 5 সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল ৷ জানালেন, আদিম প্রজাতি, গাছ পালা, পশুপাখির টানেই এতগুলো বছর সেখানে কাটিয়ে দিয়েছেন ৷ আদিম এই জনগোষ্ঠীর প্রতি একটা আত্মিক টান অনুভব করেন ৷ সেখানকার ভাষাকেও রপ্ত করেছেন ৷ যার ফলে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে টোটোপাড়ার স্কুলকে বিশেষ স্কুলের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাবেন ৷

মাত্র আট বছর বয়সে মা-কে হারিয়েছিলেন । মায়ের আদর তেমন পাননি । ছোটোবেলা থেকেই সংঘর্ষ করে বড় হয়েছেন ৷ দিনহাটায় বাড়ি ৷ আলিপুরদুয়ার গার্লস স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেছেন । কলেজ লেডি ব্র্যাবোর্ন থেকে । 1997 সালে চাকরিতে যোগ দেন ৷ প্রথমে কোচবিহারের বাসন্তিহাট কুমুদিনী হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন । পরে মালদার সুজাপুর গার্লস হাইস্কুলে বদলি হয়ে যান । মালদা থেকে 2008 সালে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার টোটো পাড়ার ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন ৷ সেই থেকে কাজ করছেন ওই স্কুলে ৷

মিশা ঘোষাল, টোটোদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন

বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা 250 ৷ 7 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আর 4 জন পার্শ্ব শিক্ষক । অঙ্কের ও বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় । সেক্ষেত্রে লাগাম মিশা দেবীকেই ধরতে হয় ৷ পিছিয়ে পরা এই জনজাতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য টোটো ভাষাকে রপ্ত করেছেন তিনি ৷ যার ফলে টোটোদের সঙ্গে ভাব বিনিময় ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে সুবিধা হয় তাঁর ৷ এটাই সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় । 2018 সালে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তর থেকে শিক্ষারত্ন সম্মান পান মিশা ঘোষাল । বলেন, "আমি চাইলেই বদলি হয়ে অন্য কোনও স্কুলে চাকরি করতে পারতাম । কিন্তু ওদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, এই ভাবনা থেকেই আমি ওখানে রয়ে গেছি ৷ একাত্ম হয়ে গেছি ৷ ওখানে সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছিল । আমার ওপর ভরসা করতে শুরু করেছিল । দায়িত্ব বাড়ে ৷ তাই নিজের ছোট্ট ছেলেকে শিলিগুড়িতে রেখে শিক্ষকতা করেছি ।" মিশা দেবী আরও বলেন, "আমি টোটো ভাষাটা শিখে নিয়েছি । তাদের গান, নাচ রপ্ত করেছি । স্কুলের অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে তাদের গান গাই । এই প্রাচীন জনজাতির সংসস্কৃতিতে ধরে রাখতেই হবে । আজ আমি খুব খুশি যে এই এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি । আরও দায়িত্ব আমার বেড়ে গেল ৷ আরও কাজ করতে হবে ওদের জন্য ৷ স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকটা শুরু করেছি ৷ আমি রাষ্ট্রপতিকে বলব এই স্কুলকে বিশেষ স্কুলের মর্যাদা দেওয়া হোক । যেখানে লাইব্রেরি থাকবে । ল্যাবরেটরি থাকবে । সমস্ত বিষয়ের শিক্ষক থাকবে । "

রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, "আমার খুব ভালো লাগছে যে আমাকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে । দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল ।" পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো জনজাতি টোটোদের নিয়ে গবেষণা করছেন মিশা দেবী । ইতিমধ্যেই "টোটো কিশোরী কন্যা" নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি । উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি চেয়েছেন ৷

জলপাইগুড়ি, 23 অগাস্ট : টোটো ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট আদিম জনজাতি ৷ ভারত-ভুটান সীমান্তে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় টোটোদের বাস ৷ এই আদিম জনজাতির মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য 5 সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল ৷ জানালেন, আদিম প্রজাতি, গাছ পালা, পশুপাখির টানেই এতগুলো বছর সেখানে কাটিয়ে দিয়েছেন ৷ আদিম এই জনগোষ্ঠীর প্রতি একটা আত্মিক টান অনুভব করেন ৷ সেখানকার ভাষাকেও রপ্ত করেছেন ৷ যার ফলে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে টোটোপাড়ার স্কুলকে বিশেষ স্কুলের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাবেন ৷

মাত্র আট বছর বয়সে মা-কে হারিয়েছিলেন । মায়ের আদর তেমন পাননি । ছোটোবেলা থেকেই সংঘর্ষ করে বড় হয়েছেন ৷ দিনহাটায় বাড়ি ৷ আলিপুরদুয়ার গার্লস স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেছেন । কলেজ লেডি ব্র্যাবোর্ন থেকে । 1997 সালে চাকরিতে যোগ দেন ৷ প্রথমে কোচবিহারের বাসন্তিহাট কুমুদিনী হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন । পরে মালদার সুজাপুর গার্লস হাইস্কুলে বদলি হয়ে যান । মালদা থেকে 2008 সালে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার টোটো পাড়ার ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন ৷ সেই থেকে কাজ করছেন ওই স্কুলে ৷

মিশা ঘোষাল, টোটোদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন

বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা 250 ৷ 7 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আর 4 জন পার্শ্ব শিক্ষক । অঙ্কের ও বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় । সেক্ষেত্রে লাগাম মিশা দেবীকেই ধরতে হয় ৷ পিছিয়ে পরা এই জনজাতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য টোটো ভাষাকে রপ্ত করেছেন তিনি ৷ যার ফলে টোটোদের সঙ্গে ভাব বিনিময় ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে সুবিধা হয় তাঁর ৷ এটাই সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় । 2018 সালে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তর থেকে শিক্ষারত্ন সম্মান পান মিশা ঘোষাল । বলেন, "আমি চাইলেই বদলি হয়ে অন্য কোনও স্কুলে চাকরি করতে পারতাম । কিন্তু ওদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, এই ভাবনা থেকেই আমি ওখানে রয়ে গেছি ৷ একাত্ম হয়ে গেছি ৷ ওখানে সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছিল । আমার ওপর ভরসা করতে শুরু করেছিল । দায়িত্ব বাড়ে ৷ তাই নিজের ছোট্ট ছেলেকে শিলিগুড়িতে রেখে শিক্ষকতা করেছি ।" মিশা দেবী আরও বলেন, "আমি টোটো ভাষাটা শিখে নিয়েছি । তাদের গান, নাচ রপ্ত করেছি । স্কুলের অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে তাদের গান গাই । এই প্রাচীন জনজাতির সংসস্কৃতিতে ধরে রাখতেই হবে । আজ আমি খুব খুশি যে এই এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি । আরও দায়িত্ব আমার বেড়ে গেল ৷ আরও কাজ করতে হবে ওদের জন্য ৷ স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকটা শুরু করেছি ৷ আমি রাষ্ট্রপতিকে বলব এই স্কুলকে বিশেষ স্কুলের মর্যাদা দেওয়া হোক । যেখানে লাইব্রেরি থাকবে । ল্যাবরেটরি থাকবে । সমস্ত বিষয়ের শিক্ষক থাকবে । "

রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, "আমার খুব ভালো লাগছে যে আমাকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে । দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল ।" পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো জনজাতি টোটোদের নিয়ে গবেষণা করছেন মিশা দেবী । ইতিমধ্যেই "টোটো কিশোরী কন্যা" নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি । উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি চেয়েছেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.