জলপাইগুড়ি, 1 ডিসেম্বর : স্কুলের পঠনপাঠনের মাঝেই নমাজের আজানের সময় ৷ কিন্তু, এর জন্য পড়ুয়াদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তাই বন্ধ রাখা হল আজানের জন্য ব্যবহার হওয়া মাইক ৷ এমনই ছবি উঠে এল জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি গমিরাপাড়ায় ৷ প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ স্কুল ৷ নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস শুরু হলেও পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ প্রায় 2 বছর ৷ এই পরিস্থিতিতে কোনও পডুয়া যাতে পড়াশোনা বন্ধ না করে দেয় সেই ব্যবস্থা নিল জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri News) বেরুবাড়ি গমিরাপাড়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ আশেপাশের গ্রামে গিয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷
বেরুবাড়ি মসজিদের বাগানে গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ আর নমাজের আজানের কারণে যাতে পড়ুয়াদের সমস্যা না হয় ৷ সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেরুবাড়ি গমিরাপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জেন নজরুল ইসলাম ৷ মাইক বন্ধ রেখেই নমাজের আজান দেওয়া হচ্ছে ৷ তিনি জানান, ‘‘অনেক দিন থেকে বাচ্চারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ৷ স্কুলে যেতে পারছে না । তারা দীর্ঘদিন স্কুলে যায় না ৷ আজ শিক্ষক শিক্ষিকারা যেভাবে আমাদের গ্রামে এসে পড়াচ্ছেন, এটা ভাল উদ্যোগ ৷ বাচ্চারাও পড়াশোনা করতে এসেছে ৷ আজ আজানের সময় মসজিদের মাইক বাজানো হয়নি ৷ কারণ, বাচ্চাগুলো তো আমাদেরই ৷ এই বাচ্চাদের যদি আমরা অসুবিধা করি, তাহলে পড়াশোনায় তাদের সমস্যা হবে ৷ তাই আমরা আজ মাইক বন্ধ রেখেছি ৷’’
আরও পড়ুন : Model School in Gaighata : সীমান্তে মডেল স্কুল, একটাও স্কুলছুট নেই, বললেন প্রধান শিক্ষক
মসজিদ কমিটির এই ব্যবহারে খুশি ক্লাস নিতে আসা শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ৷ বেরুবাড়ি গমিরাপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় কুমার রায় বলেন, মসজিদ কমিটি তাঁদের বাগান পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে ৷ পাশাপাশি নমাজের মাইকে পড়াশোনায় যাতে সমস্যা না হয়, সেই দিকটিকে বিচার করে মাইকও বন্ধ রেখেছে মসজিদ কমিটি ৷ আর গ্রামে গ্রামে ঘুরে ক্লাস নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের তাদের গ্রামে গিয়ে পড়াচ্ছি ৷ যাতে করে তারা স্কুল ছুট না হয়ে যায় ৷ এ ছাড়া নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলে আসে সেটাও প্রচার করা হচ্ছে ৷’’
আরও পড়ুন : Covid Effect On Schools : স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে দুয়ারে প্রধান শিক্ষক
পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছতে পেরে খুশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ৷ এ নিয়ে শিক্ষিকা শ্বেতা সরকার জানান, ‘‘আগে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমরা গরমে স্কুলের মাঠে পড়াতাম ৷ কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে আমরা ভাল ছিলাম না ৷ ওরা আজ স্কুলের পোশাক পরে এসেছে ৷ অনলাইনে সবার কাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি ৷ আজ গ্রামে এসে পড়ানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা বাচ্চাদের কাছ থেকে পড়ানোর সুযোগ পাচ্ছি ৷’’
মোটের উপর মসজিদ কমিটির এই সহযোগিতায় বেরুবাড়ি গ্রামের বহু পড়ুয়া স্কুল ছুট হওয়ার থেকে বেঁচে গিয়েছে ৷ আর তাদের এই সহযোগিতার জন্য মসজিদ কমিটিকে ধন্যবাদও জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷