জলপাইগুড়ি, 4 জুলাই: ভরা বর্ষায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ ভোটের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যজুড়ে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে ৷ এর সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নানা বিতর্ক ৷ তবে এই সবকিছুকে ছাপিয়ে এখন প্রধান বিরোধী পক্ষ আবহাওয়া ৷
হ্যাঁ, আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী পাঁচদিন উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে ৷ লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতে হড়পা বানের সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস ৷ ইতিমধ্যে তিস্তা নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছে ৷ আরও বৃষ্টি হলে তিস্তা ছাড়াও উত্তরের বহু নদী খরস্রোতা হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নেবে ৷ এই অবস্থায় মানুষ কী করে ভোট দেবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ৷
ভোটের আগে বৃষ্টি ও হড়পাবান দুইয়ের বেড়াজালে ঘুম উড়েছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলা প্রশাসনের ৷ পাহাড়ে বৃষ্টির জলে সমতলের তিস্তা ও জলঢাকা, কালজানি নদীতে জল ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং প্রতিবছর এই সময় বানভাসি হয় এলাকা ৷ তিস্তা নদীর মাঝে বাহির চরে ভোটার রয়েছেন 900 জন ৷
আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টিতে হড়পা বানের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে, ভ্যাপসা গরম দক্ষিণে
নদীতে জল বেড়ে গেলে ভোটদানে ব্যাপক সমস্যা হবে ৷ অন্যদিকে আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে হবে ট্রেকিং করে ৷ ফলে সেখানে ভোটকর্মীদের সময়মতো পৌঁছে দেওয়া চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে ৷ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ তারপর থেকে দু'দিন কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে ৷
জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস থেকে জারি করা সতর্কতায় চিন্তার ভাঁজ জেলা প্রশাসনের ৷ এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি সিকিম ও ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা হড়পা বানের সতর্কতাও জারি করা হয়েছে ৷
জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, 8 জুলাইয়ের আগে ভারী ও বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৷ বন্যা কবলিত জেলা বলেই পরিচিত জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা ৷ আগামী পাঁচ দিন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে হড়পা বানের সতর্কতা রয়েছে ৷ 5, 6, ও 7 জুলাই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৷ সেই কারণে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস ৷
আরও পড়ুন: ভোট পূর্ববর্তী সংঘর্ষ ডুয়ার্সেও, রাজনৈতিক হানাহানিতে আহত 20
জলপাইগুড়ি জেলায় ডুয়ার্সের নাগরাকাটা, বানারহাট, মালবাজার, ক্রান্তির চাপাডাঙ্গা, ময়নাগুড়ির বাসুসুবা, পদমতি, মোতিয়ার চর এলাকায় প্রতিবছর তিস্তা নদীর জল ঢুকে বানভাসি হয় ৷ অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি, জঁয়গা, আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন এলাকা, ফালাকাটা, কুমারগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ প্রতিবছর জলে ভাসে ৷
অন্যদিকে আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ে বেশ কিছু বুথ রয়েছে, যেখানে কোনও গাড়ি যায় না ৷ কয়েক কিলোমিটার ট্রেনিং করেই ভোট নিতে যেতে হবে ভোট কর্মীদের ৷ পাহাড়ে পথে ধসের একটা সম্ভাবনা থেকেই যায় ৷ প্রত্যন্ত এলাকায় ভোটকর্মীদের আগে থেকেই পাঠানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কালচিনির ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মন ৷ আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে নৌকা, সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের প্রস্তুত রেখেছেন পাশাপাশি এনডিআরএফ কর্মীদের সতর্ক করে রেখেছেন ৷
আরও পড়ুন: দিল্লি গিয়ে 355 ধারার সুপারিশ করুন, রাজ্যপালকে পরামর্শ শুভেন্দুর
তিস্তা নদীর পাড়ের বাসিন্দা উত্তম রায়, হারাধন রায় জানান, তাঁরা তিস্তা নদীর পাশে বসবাস করেন ৷ এবার ভরা বর্ষার মাঝে নদীতে জল বাড়ার সতর্কতা রয়েছে ৷ তাই বাড়িতে জল ঢুকে গেলে তাঁদের বাঁধে চলে আসতে হয় ৷ বাড়িতে জল ঢুকলে নিজের প্রাণ বাঁচানোর কথাই মানুষ আগে ভাববে ৷ ভোটে একটা প্রভাব তো পড়বেই ৷ জল বেড়ে গেলে ভোটদানের হার কমে যাবে ৷ নদীতে জল না থাকলে ভালো ৷ জলপাইগুড়ি জেলা নির্বাচনী আধিকারিক মৌমিতা গোদারা জানান, সব দিক থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ৷ বর্ষার মাঝে ভোট হওয়ায় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নজরে রেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ স্পিড বোট-সহ নৌকাও তৈরি রাখা হয়েছে ৷