আলিপুরদুয়ার, 23 জুন: দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন চোখের সমস্যায় । ছেলেকে বললেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। উপায় না পেয়ে অশীতিপর বৃদ্ধা সোজা পৌঁছে যান বিডিও অফিসে । চোখের সমস্যার কথা তুলে ধরেন । সই কথা জানা মাত্র এক মুহূর্ত দেরি করেননি বিডিও । বর্তমানে চোখ অপারেশনের পর সেই বৃদ্ধা দেখতে পান । সেইদিনের উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শুক্রবার বিডিও-র জন্য নিয়ে গেলেন বিশেষ উপহার । উপহার পেয়ে চোখে জল বিডিও-র । আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের এই ঘটনা মানবিকতা ও ভালোবাসার নতুন পথ দেখায় ।
আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের ভলকা চড়াই মহল এলাকার বাসিন্দা উষারানী দেবনাথ। দীর্ঘদিন ধরেই চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বাড়িতে এক ছেলে থাকলেও তার চোখের ডাক্তার দেখানোর বিষয়টি নিয়ে তাঁর অনিহা ছিল বলে জানা যায়। এরপরেই সেই বৃদ্ধা হাজির হন বিডিও অফিসে । বিডিও মিহির কর্মকারকে জানান তাঁর চোখের সমস্যার কথা । মানবিক বিডিও বৃদ্ধার সমস্যার কথা শুনেই সমাধানের চেষ্টা করেন ।
আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে যোগাযোগ করেন । সেখানে হয় বৃদ্ধার চোখের অপারেশন । বর্তমানে সেই বৃদ্ধা চোখে দেখতে পান। হাসপাতাল থেকে তাঁকে চশমাও দেওয়া হয়েছে। সেই আনন্দেই শুক্রবার বৃদ্ধা উপহার হিসাবে আম নিয়ে আসেন বিডিওর জন্য। বিডিওকে সেই আম খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। বৃদ্ধার এইরকম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দেখে চোখে জল আসে বিডিও মিহির কর্মকারের। বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরেন তিনি ।
কুমারগ্রাম ব্লকের বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, "এক বছর আগে এক বৃদ্ধা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁর চোখের সমস্যা ছিল। তিনি চোখে ঠিকমতো দেখতে পেতেন না। আমাকে জানিয়েছিলেন সাহায্য করার জন্য। আমি তাঁকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। আমি বিডিও অফিস থেকে লোক দিয়ে গাড়ি করে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে পাঠাই চিকিৎসার জন্য। কয়েকমাস হাসপাতালের পরামর্শ মত তিনি ওষুধ খান । তারপর কয়েকমাস আগে তাঁর চোখের অপারেশন হয়।"
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত বৃদ্ধা, মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ বিডিওকে
তিনি আরও বলেন, "এখন তিনি চোখে দেখতে পান। আজ সকালে দেখি বৃদ্ধা আমার চেম্বারে আসেন আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তিনি চেম্বারে ঢুকে বলেন, বাবা, একটা জিনিস দিলে তুমি খাবে ? আমি বললাম অবশ্যই খাব। কিন্তু কি জিনিস ? প্রশ্ন করতেই উনি ব্যাগ থেকে চারটি আম বের করলেন। আমাকে দিলেন। আমি অবাক হলাম। অনেকের অনেক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু এইভাবে কেউ কোনওদিন আমার কাছে আসেননি। আমার কর্ম জীবনে একটা বড় প্রাপ্তি হল। একজন মা আমাকে যেভাবে আশীর্বাদ করলেন তাতে আমি ধন্য হলাম। এইভাবে কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। যিনি আগে আমার কাছে কালো চশমা পরে দেখা করতে এসেছিলেন আজ নিজে চোখে আমাকে দেখলেন। আমি কেবল সেতু বন্ধনের কাজটা করেছি মাত্র। চোখ অপারেশন আমি করিনি। সেটা ডাক্তার করেছে।"