জলপাইগুড়ি, 14 জুন: কোভিড হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরেও রাতের অন্ধকারে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে ও সাইকেল করে বাড়ি ফিরতে হল কোরোনামুক্ত যুবককে। পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ। জলপাইগুড়ি শহরের ঘটনা। এমন অভিযোগ শুনে হতবাক জেলাশাসক।
জানা গিয়েছে, গতকাল জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতাল থেকে ধুপগুড়ি গদেয়ার কুঠির ওই যুবককে ছুটি দেওয়া হয়। অভিযোগ, তাঁকে বাড়ি পৌছানোর জন্য কোনও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেনি জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জলপাইগুড়ি থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য গদেয়ার কুঠির উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু পুলিশ সাহায্য না করার সেই গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স যেতে চায়নি। অগত্যা মাঝ রাস্তার তাঁকে ছেড়ে দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি।
কোরোনামুক্ত হওয়া ওই যুবকের অভিযোগ, বাড়ির থেকে বলা হয়েছিল ধুপগুড়ি থানায় গিয়ে দেখা করে তারপর বাড়ি আসতে। কিন্তু ধুপগুড়ি থানার পুলিশ তাঁকে কোনওরকম সহযোগিতা করেনি। এমনকি বাড়ি যেতে বারণ করে। থানা থেকে বলা হয় ওই এলাকা কনটেইনমেন্ট জ়োন করা আছে। তাই অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকতে। এরপরেই যুবকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাম্বুলেন্সে রওনা দেন। অ্যাম্বুলেন্স চালককে অনুরোধ করে জলঢাকা সেতুর কাছে নামিয়ে দিতে। তিনি জানান, জলঢাকা সেতু থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় 8 থেকে 9 কিলোমিটার।
এরপর জলঢাকা সেতুর থেকে রাতের অন্ধকারে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেই পার করেন। আসার পথে তাঁর এক আত্মীয় সাইকেল জোগাড় করে দিলে তাতেই বাড়ি ফেরেন।
পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “আমি সুস্থ তাও আমাকে বাড়ি ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এদিকে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়িতেই ফিরছে। আমার বাড়ির কোন সদস্যের কোনও রকম সোয়াব টেস্ট হয়নি। তাই আমাকে বাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছিল। আমি 11 তারিখে রাতে জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে ভরতি হই। 12 তারিখে সোয়াব নেওয়া হয় 13 তারিখ দুপুরের আমাকে বলা হয় আমি সুস্থ। আমাকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। আমি মাথা ব্যথার ওষুধ চাইলে আমাকে বলে বাইরে থেকে কিনে নিতে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক পাপ্পু শীল বলেন, “কোভিড আক্রান্ত সুস্থ হওয়ার পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি স্বাস্থ্যবিভাগ। আমরা সাহায্যের জন্য তাঁকে বাড়ি ফেরানোর জন্য গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ সাহায্য করেনি বলে যেতে পারিনি।”
এদিকে ময়নাগুড়ির স্বাস্থ্য কর্মী ডাক্তার, অন্যদিকে নার্সিং ছাত্রী কোরোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে কনটেইনমেন্ট জ়োনেই তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। ময়নাগুড়ি থানা থেকে সবাইকেই বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম রয়েছে তাঁরা সুস্থ হয়ে তাঁদের বাড়িতেই হোম কোয়ারানটিনে থাকবেন। কিন্তু ধুপগুড়ির ক্ষেত্রে পুলিশের অতিসক্রিয়তা দেখা গেল বলে অভিযোগ।
এদিকে ধুপগুড়ি থানার IC সুবীর কর্মকার বলেন, “BDO সাহেব কনটেইনমেন্ট জ়োন করেছেন। তিনিই বিষয়টা বলতে পারবেন।”
এদিকে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক কুমার তিওয়ারিকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, “এমন হওয়া উচিত ছিল না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেই দিকে নজর রাখা হবে।”
জলপাইগুড়ির DSP ক্রাইম বিক্রমজিৎ লামা জানান, “বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। তবে ওই এলাকা কনটেইনমেন্ট জ়োন আছে তাই হয়ত ওকে যেতে না বলেছিল।”