হাওড়া, 30 অক্টোবর : একদিকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ অন্যদিকে হাওড়া ময়দান। এই দুই প্রান্তকে যুক্ত করছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডর। ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে ফুলবাগান স্টেশনের পরিষেবা। তবে এই রুটের হাওড়া মেট্রো স্টেশনটি নিয়ে সকলের মধ্যে রয়েছে কৌতূহল। কারণ, কলকাতা থেকে হাওড়া পর্যন্ত মেট্রো ছুটবে নদীর নিচ দিয়ে ৷ হুগলি নদীর নিচ দিয়ে ঘন্টায় প্রায় 80 কিলোমিটার বেগে দৌড়বে মেট্রো রেল। যা দেশের মধ্যে প্রথম ৷
এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন হাওড়া স্টেশন। হাওড়া স্টেশনের ঠিক নিচেই তৈরি হয়েছে মেট্রো স্টেশনটি। হুগলি নদীর প্রায় 13 মিটার নিচ দিয়ে গিয়েছে এই সুড়ঙ্গ পথ ৷ হাওড়া মেট্রো স্টেশনটি লম্বায় 210 মিটার, প্রস্থে 65 মিটার ও গভীরতায় 33 মিটার। জলের তলা দিয়ে সুড়ঙ্গের যে অংশটি গিয়েছে তা লম্বায় প্রায় 510 মিটার।
আরও পড়ুন : Petrapole Gold Recover: অন্তর্বাস ও মোবাইলে লুকিয়ে সোনা পাচার, পেট্রাপোল সীমান্তে ধৃত 5
প্রত্যেক দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্যবহার করেন হাওড়া স্টেশন, বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতা আসার জন্য হাওড়া স্টেশনে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ ৷ ফলে মেট্রো চালু হলে হাওড়া স্টেশনে ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তাই যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও রকম আপোস করা হয়নি এখানে। অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় এই স্টেশনে অনেক বেশি সংখ্যক ভেন্টিলেশন ডাক্ট তৈরি করা হয়েছে যাতে অনেক বেশি পরিমাণ বাতাস চলাচল করতে পারে। হুগলি নদীর নিচে যেখানে গিয়ে সুড়ঙ্গটি শেষ হচ্ছে, সেখানে করা হয়েছে একটি ভেন্টিলেশন শাফট। সুড়ঙ্গের মধ্যে যদি কোনওরকম আপদকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয় তৈরি হয় এবং যদি ট্রেন খালি করে দিতে হয় তাহলে সুড়ঙ্গের ভেতরের ওয়াক ওয়ে দিয়ে হেঁটে গিয়ে যাত্রীরা ভেন্টিলেশন সাফট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারবেন। আর কোনও মেট্রো স্টেশনে এই ওয়াক ওয়ে নেই। এই স্টেশনের প্রত্যেক 240 মিটার অন্তর একটি করে ক্রস -প্যাসেজ রয়েছে প্রয়োজনে এই ক্রস - প্যাসেজ ব্যবহার করে যাত্রীরা বেরিয়ে যেতে পারবেন। গোটা সুড়ঙ্গে এইরকম আটটি ক্রস - প্যাসেজ রয়েছে। এই ক্রস প্যাসেজের আরেকটি কার্যকারিতা হল, পাশাপাশি দুটি সুরঙ্গকে এই ক্রস প্যাসেজ যুক্ত করে। অর্থাৎ কোনও একটি সুড়ঙ্গ থেকে অপর সুড়ঙ্গে যেতে হলে ক্রস প্যাসেজ দিয়ে যেতে হবে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের সম্পূর্ণ ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে। অর্থাৎ এখানেই রয়েছে ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম। তবে যদি এই ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে তাহলে ব্যাক আপ ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে হাওড়া মেট্রো স্টেশনে। যেহেতু এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো স্টেশন ৷ তাই এইখানে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায় না কর্তৃপক্ষ ৷ যাত্রীদের সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে সাতটি লিফট, এস্কেলেটর রয়েছে 33টি ও 52 জোড়া সিঁড়ি রয়েছে। যদি আপদকালীন পরিস্থিতির জন্য লিফট ও এস্কেলেটর বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে উপরে পৌঁছতে হলে অতিক্রম করতে হবে প্রায় 200টি সিঁড়ি। স্টেশনটি হবে চারতলা। এই স্টেশনে দু'দিকেই খুলবে ট্রেনের দরজা। এই ব্যবস্থাকে ডবল ডিসচার্জ সিস্টেম বলা হয়। কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর ইঞ্জিনিয়ার তুষার আচার্য বলেন, "স্টেশন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সুড়ঙ্গ তৈরির কাজও প্রায় শেষ । তবে এখনও আরও কিছু ইন্টার্নাল স্ট্রাকচার ও আর্কিটেকচারাল কাজ এখনও বাকি রয়েছে।"