হায়দরাবাদ: দ্বিতীয়বার মহাকাশ অভিযানে গিয়ে আর ফেরা হয়নি ৷ অভিযানের নাম ছিল এসটিএস-107। মাটি ছোঁয়ার মাত্র 16 মিনিট আগে ঘটে দুর্ঘটনা ৷ মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যান কল্পনা চাওলা ও তাঁর সঙ্গী 6 মহাকাশচারী ৷ দিনটা ছিল 2003 সালের 1 ফেব্রুয়ারি, আজ তাঁর 22 তম মৃত্যু বার্ষিকী ৷
সালটা ছিল 2003 ৷ 16 জানুয়ারি মাসে নাসার মহাকাশযান 'কলম্বিয়া' 7 মহাকাশচারীকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল 15 দিনের জন্য । 2003 সালের 1 ফেব্রুয়ারি মহাকাশ-অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরছিল এটি । ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে 'কলম্বিয়া' মহাকাশযান । পৃথিবীর মাটি ছুঁতে যখন মাত্র 16 মিনিট বাকি, তখনই ঘটে বিস্ফোরণ । কয়েক মুহূর্তে বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায় 'কলম্বিয়া'। প্রাণ যায় মহাকাশযানে থাকা সাত নভোচারীর। ওই যানে কল্পনা চাওলা ছিলেন প্রথম ভারতীয়-বংশোদ্ভূত মহিলা মহাকাশচারী । নিচিহ্ন হয়ে গিয়েছিলেন কল্পনা চাওলা-সহ 7 মহাকাশচারী ।
কল্পনা চাওলার মৃত্যুর কারণ
কলম্বিয়া-মহাকাশযানের বিপর্যয়ই ছিল তৎকালীন সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা । কল্পনা চাওলার সঙ্গে কলম্বিয়ায় থাকা বাকি 6 জন মহাকাশচারী সে দিন প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন- রিক হাসব্যান্ড, তিনিই ছিলেন মহাকাশযানের কম্যান্ডার। ছিলেন পাইলট উইলিয়াম ম্যাককুল, পে লোড কম্যান্ডার মিশেল অ্যান্ডারসন, আয়ান রামান, ডেভিড ব্রাউন ও লরেল ক্লার্ক।
সাফল্যের ধ্বংস
কেনেডি স্পেস সেন্টারের মধ্যে তখন সাফল্য উদযাপনের তোড়জোড় চলছে । কিন্তু কে জানত সেটা আসলে ব্যর্থতা ৷ মহাকাশচারীদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তৈরি নাসার কন্ট্রোল রুম। গ্রাউন্ড স্টেশনে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের চোখে পড়েছিল অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে আসছে তিনটে আলোর রেখা। মুহূর্তে সব কিছু বদলে যায় ৷ হঠাৎ ঘন বাষ্প আর তারপর সব ঝাপসা। কলম্বিয়ার সঙ্গে সব যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। শেষ হয় সব কিছু ৷ বুঝতে অসুবিধা হয় না সব শেষ, সাফল্যের আনন্দ নয় ধ্বংস ৷ 2003 সালের 1 ফেব্রুয়ারি, মাটি থেকে প্রায় দু’লক্ষ ফুট উপরে ধ্বংস হয়ে যায় মহাকাশযান কলম্বিয়া। সারা বিশ্ব কেঁপে ওঠে সেই দুর্ঘটনার খবরে। চিরদিনের মতো মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যান 7 মহাকাশচারী ৷
কলম্বিয়া কেন ধ্বংস হয়েছিল
কলম্বিয়া ধ্বংসের কারণ অনুসন্ধান করেছেন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, যান্ত্রিক ত্রুটিই কলম্বিয়া ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে মহাকাশযানের সমস্ত সেন্সর অকেজো হতে শুরু করেছিল । রেডিয়ো সিগন্যাল কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ছিলেন মহাকাশচারীরা । হাইড্রলিক ট্যাঙ্কে লিকের কারণে গ্যাস বেরিয়ে আসছিল বাইরে ।
এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ায় মহাকাশযান কলম্বিয়ার উইংয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল । মাটি থেকে 61 হাজার 170 মিটার উপরে হাইপারসনিক বেগে ছুটে চলা কলম্বিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল মহাকাশাতচারীরা । দাউদাউ করে জ্বলছিল আগুন। মহাকাশে বিলীন হয়ে যান 7 মহাকাশচারী।
কল্পনা চাওলা-র জীবনী
1962 সালের 17 মার্চ ভারতের হরিয়ানার কার্নাল শহরে জন্ম কল্পনা চাওলার । 1988 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচ ডি করে নাসাতে যোগ দিয়েছিলেন। 1995 সালে নাসার অ্যাস্ট্রোনট কোর্স করার পরের বছরই মহাকাশ অভিযানের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি । ততদিনে একাধিক ইঞ্জিন চালিত স্পেসক্রাফ্ট ওড়ানো, গ্লাইডার চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছিলেন কল্পনা । তিনিও ভালোবাসতেন মহাকাশকে ৷ নক্ষত্রদের মাঝে হারিয়ে যেতে চাইতেন । বলতেন, মহাকাশই একদিন তাঁকে টেনে নেবে। তবে সেটাই হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, 2024 সালের 5 জুন বোয়িং স্টারলাইনারে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন সুনীতা উইলিলাম ও মার্কিন মহাকাশচারী ব্যরি উইলমোর ৷ মহাকাশচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্টারলাইনারকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৷ তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য স্পেসএক্স-এর সিইও ইলন মাস্ককে দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প ৷