ETV Bharat / state

Bally Bridge: জন্মদিনেও 'ব্রাত্য' নবতিপর বালি ব্রিজ - ঐতিহাসিক বালি ব্রিজ

হাওড়ার ও বালির সঙ্গে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণেশ্বরকে যুক্ত করে নব্বই বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালি ব্রিজ বা বিবেকানন্দ সেতু ৷ আজ এই সেতুর জন্মদিন (Bally Bridge) ৷

ETV Bharat
বালি ব্রিজ
author img

By

Published : Dec 29, 2022, 6:57 PM IST

90 বছর পেরল বালি ব্রিজের বয়স

হাওড়া, 29 ডিসেম্বর: গঙ্গার বুকে এ এক নব্বই বছরের বৃদ্ধ নিঃসঙ্গ এক দুয়োরানি সেতুর কাহিনী । যা সকলের কাছে পরিচিত বালি ব্রিজ (Bally Bridge) ওরফে 'উইলিংডন সেতু' নামে (Willingdon Bridge) ৷ তবে বর্তমানে 'বিবেকানন্দ সেতু' (Vivekananda Setu) নামেই ডাকা হয় এই সেতুটিকে ৷ কলকাতা লাগোয়া উত্তর 24 পরগনার দক্ষিণেশ্বরকে হাওড়া জেলার সঙ্গে যুক্ত করার কাজে নব্বই বছর ধরে অক্লান্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সেতু । হাওড়া ব্রিজ নিয়ে আলোচনা, গল্প অনেক হয় ৷ সেই তুলনায় বালি ব্রিজ অখ্যাত বলা যায় ৷ বৃহস্পতিবার অর্থাৎ 29 ডিসেম্বর এই সেতুর জন্মদিন ৷

কলকাতা-হাওড়া সংযোগকারী সেতুগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই সেতু। তবে ইতিহাসের পাতায় এই সেতু যেন দুয়োরানি হয়েই রয়ে গিয়েছে । অতীত গৌরবের ইতিহাস বুকে নিয়ে 91 বছরে পা দিল এই 'বৃদ্ধ' সেতুটি ৷ তবে হাওড়া ব্রিজের মতো চর্চায় না থাকায়, সেই সেতুর জন্মদিনের কথাও এখন আর কারও মনে থাকে না ৷ হয়না 'জন্মদিন' পালন ৷ সাড়া বছরে গায়ে জমে থাকা ময়লাও কেউ পরিষ্কার করে না তার (present condition of Bally Bridge)। এমনই এক বঞ্চনার রোজনামচা নিয়েই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ হচ্ছে এই ‘উইলিংডন ব্রিজ’৷

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফরের সূচিতে পরিবর্তন, শুক্রে কখন কোথায় থাকছেন মোদি ?

লোকমুখে বহুল প্রচলিত বালি ব্রিজের এই বিদেশি নাম ছেড়ে এক সময়ে তার নাম রাখা হয়েছিল 'বিবেকানন্দ সেতু' । ইংরেজদের হাতে 1931 সালের 29 ডিসেম্বর গঙ্গার উপরে উদ্বোধন করা হয়েছিল এই রেল ও সড়ক সেতুটির । সেতুটির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, গুজরাতের কচ্ছ এলাকার বাসিন্দা রেলের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী রায়বাহাদুর জগমল রাজা 1926 সালে এই সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন । সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য গুজরাতের কচ্ছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল দক্ষ কারিগরদের । ব্রিজের ভিত তৈরি করার জন্য সেই সময় গঙ্গার নীচে 100 ফুট গভীর পাতকুয়ো খোঁড়া হয়েছিল । তার উপরে স্তম্ভ বানিয়ে স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহার করে রেল ও সড়ক পথে ব্যবহারযোগ্য এই সেতুটি তৈরি হয় । তৎকালীন সময়ে এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা (history of Bally Bridge) ।

এই সেতুর গঠনশৈলী অত্যন্ত অনবদ্য । নব্বই বছর অতিক্রম করা এই সেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে 770 মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে 8 মিটার প্রস্থের লোহার কাঠামোর উপর । সেতুটির সাতটি স্তম্ভের উপর রয়েছে সাতটি স্থিতিস্থাপন মূলক জোড় । আর তার উপর পাতা হয়েছিল ঢেউ খেলানো ট্র্যাপ প্লেট । এই প্লেটের উপরেই কংক্রিট করা অংশ দিয়ে হাওড়ার বালি ও দক্ষিণেশ্বর অভিমুখে গাড়ি চলাচল করে । সেতুর উপর দুই রাস্তার মাঝে রয়েছে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার রেললাইন । ভারতীয় রেলের ইতিহাসেও এই সেতুর অনেক গুরুত্ব রয়েছে । রেলের ইতিহাস বলছে এই সেতুর উপর দিয়েই প্রথম বার হুগলি নদী পারাপার করেছিল ট্রেন ।

আরও পড়ুন: বঙ্গবাসীর রসনা তৃপ্তি! বাংলাদেশ থেকে ভারতে মহম্মদ রহিম

বয়সের প্রশ্নে বিবেকানন্দ সেতু হাওড়া সেতুর থেকেও 11 বছরের বড় এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতুর চেয়ে 60 বছরের বেশি পুরনো । তবে হাওড়া শহরের দুই প্রান্তে গঙ্গার উপরে থাকা এই দুই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে অনেক ফারাক ও উপেক্ষার ছাপ ৷ রয়েছে বিশাল বৈপরীত্য । প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠা দিবসে ও বছরের বিশেষ দিনে রঙিন আলোয় সেজে ওঠে রবীন্দ্র সেতু । সেখানে বিবেকানন্দ সেতুতে সেভাবে বিশেষ দিনে কোনও আলো জ্বলে না । আলোর সমস্যার সমাধানে পূর্ত দফতর এখন নতুন আলো লাগানো হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু আলো বন্ধ থাকে । আবার সেতুর রাস্তা খারাপ হয়ে গেলেও তা সারানো নিয়ে রেল ও রাজ্যের চাপান-উতোর চলে ।

বিবেকানন্দ সেতুর দুই প্রান্তে রয়েছে চারটি ঘর । আর তার পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে ব্রিজের নীচে যাওয়ার চারটি সিঁড়ি । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণের পরে ওই ঘরগুলি থেকেই টোল আদায় করা হত । তবে পরবর্তীকালে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ঘর-সিঁড়ি সবই আজ ভগ্নপ্রায় দশাতে পরিণত হয়েছে । আর এই ঘরগুলির গায়ে ঝোপের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে এই ‘বৃদ্ধ' সেতুর জন্মদিনের তারিখ । পাশাপাশি চাপা পড়ে গিয়েছে ব্রিটিশদের দেওয়া নামের ফলকটিও ।

90 বছর পেরল বালি ব্রিজের বয়স

হাওড়া, 29 ডিসেম্বর: গঙ্গার বুকে এ এক নব্বই বছরের বৃদ্ধ নিঃসঙ্গ এক দুয়োরানি সেতুর কাহিনী । যা সকলের কাছে পরিচিত বালি ব্রিজ (Bally Bridge) ওরফে 'উইলিংডন সেতু' নামে (Willingdon Bridge) ৷ তবে বর্তমানে 'বিবেকানন্দ সেতু' (Vivekananda Setu) নামেই ডাকা হয় এই সেতুটিকে ৷ কলকাতা লাগোয়া উত্তর 24 পরগনার দক্ষিণেশ্বরকে হাওড়া জেলার সঙ্গে যুক্ত করার কাজে নব্বই বছর ধরে অক্লান্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সেতু । হাওড়া ব্রিজ নিয়ে আলোচনা, গল্প অনেক হয় ৷ সেই তুলনায় বালি ব্রিজ অখ্যাত বলা যায় ৷ বৃহস্পতিবার অর্থাৎ 29 ডিসেম্বর এই সেতুর জন্মদিন ৷

কলকাতা-হাওড়া সংযোগকারী সেতুগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই সেতু। তবে ইতিহাসের পাতায় এই সেতু যেন দুয়োরানি হয়েই রয়ে গিয়েছে । অতীত গৌরবের ইতিহাস বুকে নিয়ে 91 বছরে পা দিল এই 'বৃদ্ধ' সেতুটি ৷ তবে হাওড়া ব্রিজের মতো চর্চায় না থাকায়, সেই সেতুর জন্মদিনের কথাও এখন আর কারও মনে থাকে না ৷ হয়না 'জন্মদিন' পালন ৷ সাড়া বছরে গায়ে জমে থাকা ময়লাও কেউ পরিষ্কার করে না তার (present condition of Bally Bridge)। এমনই এক বঞ্চনার রোজনামচা নিয়েই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ হচ্ছে এই ‘উইলিংডন ব্রিজ’৷

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফরের সূচিতে পরিবর্তন, শুক্রে কখন কোথায় থাকছেন মোদি ?

লোকমুখে বহুল প্রচলিত বালি ব্রিজের এই বিদেশি নাম ছেড়ে এক সময়ে তার নাম রাখা হয়েছিল 'বিবেকানন্দ সেতু' । ইংরেজদের হাতে 1931 সালের 29 ডিসেম্বর গঙ্গার উপরে উদ্বোধন করা হয়েছিল এই রেল ও সড়ক সেতুটির । সেতুটির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, গুজরাতের কচ্ছ এলাকার বাসিন্দা রেলের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী রায়বাহাদুর জগমল রাজা 1926 সালে এই সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন । সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য গুজরাতের কচ্ছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল দক্ষ কারিগরদের । ব্রিজের ভিত তৈরি করার জন্য সেই সময় গঙ্গার নীচে 100 ফুট গভীর পাতকুয়ো খোঁড়া হয়েছিল । তার উপরে স্তম্ভ বানিয়ে স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহার করে রেল ও সড়ক পথে ব্যবহারযোগ্য এই সেতুটি তৈরি হয় । তৎকালীন সময়ে এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা (history of Bally Bridge) ।

এই সেতুর গঠনশৈলী অত্যন্ত অনবদ্য । নব্বই বছর অতিক্রম করা এই সেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে 770 মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে 8 মিটার প্রস্থের লোহার কাঠামোর উপর । সেতুটির সাতটি স্তম্ভের উপর রয়েছে সাতটি স্থিতিস্থাপন মূলক জোড় । আর তার উপর পাতা হয়েছিল ঢেউ খেলানো ট্র্যাপ প্লেট । এই প্লেটের উপরেই কংক্রিট করা অংশ দিয়ে হাওড়ার বালি ও দক্ষিণেশ্বর অভিমুখে গাড়ি চলাচল করে । সেতুর উপর দুই রাস্তার মাঝে রয়েছে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার রেললাইন । ভারতীয় রেলের ইতিহাসেও এই সেতুর অনেক গুরুত্ব রয়েছে । রেলের ইতিহাস বলছে এই সেতুর উপর দিয়েই প্রথম বার হুগলি নদী পারাপার করেছিল ট্রেন ।

আরও পড়ুন: বঙ্গবাসীর রসনা তৃপ্তি! বাংলাদেশ থেকে ভারতে মহম্মদ রহিম

বয়সের প্রশ্নে বিবেকানন্দ সেতু হাওড়া সেতুর থেকেও 11 বছরের বড় এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতুর চেয়ে 60 বছরের বেশি পুরনো । তবে হাওড়া শহরের দুই প্রান্তে গঙ্গার উপরে থাকা এই দুই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে অনেক ফারাক ও উপেক্ষার ছাপ ৷ রয়েছে বিশাল বৈপরীত্য । প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠা দিবসে ও বছরের বিশেষ দিনে রঙিন আলোয় সেজে ওঠে রবীন্দ্র সেতু । সেখানে বিবেকানন্দ সেতুতে সেভাবে বিশেষ দিনে কোনও আলো জ্বলে না । আলোর সমস্যার সমাধানে পূর্ত দফতর এখন নতুন আলো লাগানো হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু আলো বন্ধ থাকে । আবার সেতুর রাস্তা খারাপ হয়ে গেলেও তা সারানো নিয়ে রেল ও রাজ্যের চাপান-উতোর চলে ।

বিবেকানন্দ সেতুর দুই প্রান্তে রয়েছে চারটি ঘর । আর তার পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে ব্রিজের নীচে যাওয়ার চারটি সিঁড়ি । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণের পরে ওই ঘরগুলি থেকেই টোল আদায় করা হত । তবে পরবর্তীকালে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ঘর-সিঁড়ি সবই আজ ভগ্নপ্রায় দশাতে পরিণত হয়েছে । আর এই ঘরগুলির গায়ে ঝোপের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে এই ‘বৃদ্ধ' সেতুর জন্মদিনের তারিখ । পাশাপাশি চাপা পড়ে গিয়েছে ব্রিটিশদের দেওয়া নামের ফলকটিও ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.