হাওড়া, 13 ফেব্রুয়ারি : মাত্র একবছর আগের ঘটনা । বলেছিলেন, ছুটিতে এসে নতুন বাড়ি রং করাবেন । বাড়ি রং হয়েছে । কিন্তু, তা দেখে যেতে পারেননি । তার আগেই বাড়িটিকে রংহীন করে চিরছুটিতে চলে গেছেন হাওড়ার বাউড়িয়ার বাবলু সাঁতরা । গত বছর 14 ফেব্রুয়ারি "ভালোবাসার" দিনেই ভালোবাসার লোকেদের কাছ থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা । কিন্তু, কাছের মানুষটিকে হারানোর যন্ত্রণা বুকে চেপেই বাবলুর পরিবার এখনও বলছে, তারা বদলা চায় না । শান্তি চায় ।
একবছর পরই অবসর নেওয়ার কথা ছিল । কথা ছিল কয়েকদিনের মধ্যেই ছুটিতে বাড়ি আসবেন । কিন্তু, বড্ড তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি । তবে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়ে নয় । কাঁদিয়ে । সেদিন তাঁদের এলাকায় উঠেছিল "শহিদ বাবলু সাঁতরা অমর রহে" স্লোগান । কান্নার রোলে তাঁকে বিদায় জানিয়েছিল সবাই । তাঁর মা, স্ত্রী, ভাইদের চোখের জল সেদিন বাধ মানেনি । আর বাবলুর চিরছুটিতে যাওয়ার একবছর হতে চলল । তিনি নেই । কিন্তু, বাড়ির প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি আজও চোখে পড়ে । স্মারক, ছবি, শংসাপত্রে । তা নিয়েই এখন বেঁচে আছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ।
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় বাবলুর সঙ্গে শহিদ হয়েছিলেন আরও ৩৯ CRPF জওয়ান । রাগে, দুঃখে, শোকে বদলা চেয়েছিলেন অনেকেই । কিন্তু, তাঁর পরিবার চায়নি । তাঁর স্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা যুদ্ধ চান না । যুদ্ধ সমাধান হতে পারে না । তাঁর মা ও ভাইয়ের গলাতেও শোনা গেল একই সুর । মা বনমালা সাঁতরা বলছেন, বদলা চাই না । শুধু শান্তি চাই । তাঁর ভাই কল্যাণ বলছেন, যুদ্ধ করলেই সবকিছুর সমাধান হয় না । তবে সবাই যাতে ভালোভাবে ডিউটি করতে পারে সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার ।
বাবলুর মৃত্যুর পর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দু'পক্ষকেই তারা পাশে পেয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার । অর্থ সাহায্যও পেয়েছে । যোগাযোগ রেখেছে CRPF-ও । কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, খোঁজ নেয় তারা । কারও প্রতি কোনও অভিযোগ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাবলুর পরিবারের নেই । কয়েকদিন আগে বাড়ির মাটিও নিয়ে গেছে CRPF । আর কয়েকদিন পর বাড়ির সামনের মাঠে অনুষ্ঠানও করবে বলে জানানো হয়েছে ।
শুধু সরকার বা CRPF নয়, এলাকাবাসীও প্রতিটা মুহূর্তে তাঁদের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কল্যাণ । এলাকায় দাদার মূর্তিও বসেছে । তবে দাদার অভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেন । বলেন, দাদাই সামনে থেকে সব ঝড়-ঝাপটা সামাল দিত । প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা দিনই মনে হয় দাদা থাকলে ভালো হত । গলা ধরে আসে তাঁর...