কলকাতা, 18 অগাস্ট: তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল । শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা 80 শতাংশেরও নিচে নেমে গিয়েছিল । এমন এক COVID-19 রোগীর শারীরিক অবস্থা এতটাই আশঙ্কাজনক ছিল যে তিনি আর বেঁচে ফিরবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকরাও । অন্যদিকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই রোগীও ৷ অবশেষে 45 দিন ভেন্টিলেশনে কাটিয়ে মৃত্যুকে হারিয়ে বাড়ি ফিরলেন 59 বছরের COVID-19 রোগী । প্রায় দু'মাস পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি ৷ বললেন, "নতুন জীবন পেলেন । "
উত্তর ২৪ পরগনার নাটাগড়ের বাসিন্দা ওই COVID-19 রোগী রেলওয়ের একজন কর্মী । তাঁর আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল ৷ কোরোনা আক্রান্ত হওয়ায় 18 জুন তাঁকে হাওড়ার ফুলেশ্বরের কাছে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল । রেলওয়ের একটি হাসপাতাল থেকে হাওড়ার বেসরকারি ওই হাসপাতালে তাঁকে রেফার করা হয়েছিল । COVID-19 সংক্রমণের কারণে তাঁর ফুসফুসের দু'দিকই বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল । যার জেরে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন । হাওড়ার বেসরকারি ওই হাসপাতালে তাঁকে যখন ভরতি করানো হয়েছিল, তখন তাঁর শরীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন 80 শতাংশের নিচে ছিল । ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা এতটাই আশঙ্কাজনক ছিল যে, সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকরাও । রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার সম্ভাবনা অনেক কম ছিল ।
ভরতির পরই তাই চিকিৎসকরা তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ৷ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানসিকভাবেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন কোরোনা আক্রান্ত ওই রোগী । মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শও দেওয়া হয় ৷ তাঁর জন্য ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থাও করা হয় । এরপরই দেখা যায় ধীরে ধীরে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন ৷ তাঁর শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে । কিন্তু চিকিৎসকরা দেখেন, দীর্ঘদিন নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের সাপোর্টে রয়েছেন বলে ভেন্টিলেশনের উপর তিনি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন । এক্ষেত্রে তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট থেকে মুক্ত করার বিষয়টি কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । এই অবস্থায় চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয় । 45 দিন পরে এই তাঁকে নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের সাপোর্টের বাইরে আনতে সমর্থ হন চিকিৎসকরা । এর পরেও আরও কয়েকদিন তাঁকে অক্সিজেনের সাপোর্ট দিতে হয় । এর পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি ৷ 17 অগাস্ট বিকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় ।
বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেন, "COVID-19-এ আক্রান্ত হয়ে ওই রোগী যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তাঁর এতটাই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল যে আমরা চিকিৎসকরাও ভাবতে পারিনি তিনি বাঁচবেন । তাঁর ফুসফুসের দু'টি দিকেই প্রায় 100 শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নিউমোনিয়ার কারণে ।" হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর সোমবার বাড়িতে ফেরার সময় তিনি বলেন, "চিকিৎসকরা আমাকে বাঁচিয়ে তুলেছেন । জীবনে এই ঋণ আমি কোনও দিন শোধ করতে পারব না ।" তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন । বলেন, "চিকিৎসকরা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।"