ETV Bharat / state

কোরোনার জেরে শাড়ি বিক্রি নেই, ধুঁকছে ধনিয়াখালির তন্তু সমবায়গুলি

হুগলিতে ধনিয়াখালির তসর, বালুচরি, কটকি ও জরি-সহ নানা ধরনের শাড়ি তৈরি হয় । বর্তমানে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে ফেব্রিক, এপ্লিক কাজও করা হয় । এখানে 4টি তন্তু সমবায় আছে । ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায়, সোমসপুর সমবায়, গুরাপ সমবায় ও বান্না সমবায়।

ধনিয়াখালির তন্তু সমবায়
ধনিয়াখালির তন্তু সমবায়
author img

By

Published : Aug 26, 2020, 5:06 PM IST

ধনিয়াখালি, 26 অগাস্ট : ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ির খ্যাতি দেশ বিদেশে । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে শাড়ির বিক্রি বন্ধ । ধনিয়াখালির সমবায়গুলিতে মজুত হয়েছে কয়েক হাজার শাড়ি । তাঁতিরা শাড়ি তৈরি করছেন ৷ কিন্তু, ক্রেতার অভাবে সেই শাড়ি বিক্রি করতে পারছে না সমবায়গুলি ৷ ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তারা ৷ এভাবে চলতে থাকলে সংস্থা উঠে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সমবায় কর্তৃপক্ষ ।

হুগলিতে ধনিয়াখালির তসর, বালুচরি, কটকি ও জরি-সহ নানা ধরনের শাড়ি তৈরি হয় । বর্তমানে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে ফেব্রিক, এপ্লিক কাজও করা হয় । এখানে 4টি তন্তু সমবায় আছে । ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায়, সোমসপুর সমবায়, গুরাপ সমবায় ও বান্না সমবায় । আনুমানিক প্রায় কমবেশি 700 তাঁতি আছে এই সমবায়গুলির মধ্যে ।

এখানে সমবায়ের মাধ্যমেই তাঁতিদের সুতো দেওয়া হয় । বাড়িতে সুতোয় রঙ করে শুকিয়ে নেন তাঁতিরা । তারপর মাকুতে রঙ বাহারি সুতো দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি । শিল্পীরা শাড়ির পার থেকে গোটা শাড়িতে নকশা তোলেন মাকুর সাহায্যে । একটা শাড়ি তৈরি করতে 2 দিন থেকে চার দিন সময় লাগে । সেই শাড়ি সমবায়ে দিয়ে তাঁতিরা তাদের প্রাপ্য মজুরি নিয়ে যায় । এভাবেই তাঁতিরা কাজ করে চলছে ।

ধনিয়াখালির তাঁতের  শাড়ি
ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ি

ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায়ের দীনবন্ধু লাহা বলেন,‘‘সমবায় থেকেই পাইকারি দোকানদার এবং বিভিন্ন বিক্রেতারা শাড়ি নিয়ে যায় । এছাড়া খুচরো খরিদ্দার এই ধনেখালির তাঁতের শাড়ি নিজেদের বাড়ির জন্য নিয়ে যায় । লকডাউন এর ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ । ফলে বিক্রেতারা শাড়ি কিনতে আসতে পারছেন না । মার খাচ্ছে তাঁতের শাড়ির ব্যবসা । তাঁতিদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে সমবায়ের মূলধন ভেঙে ৷ এই পরিস্থিতি ছয় মাস থেকে সাত মাস চলতে থাকলে একটা সময় সমিতি বন্ধ করতে বাধ্য হবে । সমবায় থেকে রঙ সুতো ও শিল্পীদের মজুরি দিতে হয় । যার ফলে সমবায়ে গচ্ছিত টাকা সেটাও শেষ হতে বসেছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারি তরফে তন্তুজ যে শাড়ি কিনেছে তা যথেষ্ট নয় । বেসরকারিভাবে যে কাপড় বিক্রি হয় সেটার পরিমাণ অনেকটাই ৷ সেটাও এখন বন্ধ ৷ ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায় এখনও পর্যন্ত 35 লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়নি । চৈত্র সেল এবং ইদ বা দুর্গাপুজো মিলিয়ে প্রায় 30 থেকে 32 লাখ টাকায় বিক্রি হয় । কিন্তু বর্তমান আর্থিক বছরে দু-আড়াই লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়নি । আমাদের ধারণা এই বছরে 5 থেকে 6 লাখ টাকার বেশি বিক্রি হওয়া সম্ভব নেই । বাজার চাঙ্গা না হলে সমবায় আর্থিক সমস্যায় মধ্যে পড়বে ।’’

সংকটে ধনিয়াখালির তন্তু সমবায়গুলি

সোমসপুর সমবায়ের বিনয় লাহা বলেন, ‘‘সমবায়ে এখনও পর্যন্ত 75 লাখ টাকা শাড়ি মজুত আছে । এই অবস্থায় শাড়ি বিক্রি হওয়া অসম্ভব । এভাবে কতদিন চালানো যাবে বুঝতে পারছি না । সমবায়ের যে মূলধন আছে তাতে কোন সমবায়ের সর্বোচ্চ ছয় মাস চলতে পারে । না হলে বাধ্য হয়ে বন্ধ সমবায় করতে হবে ৷’’

ধনিয়াখালি সমবায়ে 190 জন তাঁত শিল্পে কাজ করেন । এছাড়া 7 থেকে 8 জন কর্মচারী এই সমবায় হয়ে কাজ করেন । তারাও ভবিষ্যতে এভাবে চলতে থাকলে বেকার হয়ে যাবেন । ‘‘আমাদের সমবায়েই প্রায় 11 হাজার শাড়ি গোডাউনে মজুত আছে । জুন মাসে কিছু বিক্রি হয়েছিল । জুলাই পড়তে সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেছে । সরকার শাড়ি নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় । আমাদের সমবায়ে এখনও পর্যন্ত 6 লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার থাকলেও ট্রান্সপোর্টের সমস্যার কারণে মাল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না ।’’ বলছিলেন বিনয়বাবু ৷

ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ি
সমবায়ে জমা শাড়ি

ধনিয়াখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘কোরোনা পরিস্থিতির জন্য রাজ্য ও দেশে অর্থনীতির যা পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে তাঁতিদের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে ৷ সুতো বা রঙের সঠিকভাবে সাপ্লাই নেই । লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে পুরোটা বন্ধ ছিল ঠিকই । এখন কিছুটা হলেও বিক্রি বেড়েছে । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁতিদের কথা ভাবছেন ৷ গত বছরের মতো এবছরও তন্তুজ ও বিশ্ব বাংলা তাঁতের শাড়ি নিচ্ছে । ধনিয়াখালি তাঁত বিশ্ব বিখ্যাত । রাজ্য সরকার ধনেখালির তাঁত ও সমবায়গুলোকে বাঁচানোর জন্য নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে ।

ধনিয়াখালি, 26 অগাস্ট : ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ির খ্যাতি দেশ বিদেশে । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে শাড়ির বিক্রি বন্ধ । ধনিয়াখালির সমবায়গুলিতে মজুত হয়েছে কয়েক হাজার শাড়ি । তাঁতিরা শাড়ি তৈরি করছেন ৷ কিন্তু, ক্রেতার অভাবে সেই শাড়ি বিক্রি করতে পারছে না সমবায়গুলি ৷ ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তারা ৷ এভাবে চলতে থাকলে সংস্থা উঠে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সমবায় কর্তৃপক্ষ ।

হুগলিতে ধনিয়াখালির তসর, বালুচরি, কটকি ও জরি-সহ নানা ধরনের শাড়ি তৈরি হয় । বর্তমানে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে ফেব্রিক, এপ্লিক কাজও করা হয় । এখানে 4টি তন্তু সমবায় আছে । ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায়, সোমসপুর সমবায়, গুরাপ সমবায় ও বান্না সমবায় । আনুমানিক প্রায় কমবেশি 700 তাঁতি আছে এই সমবায়গুলির মধ্যে ।

এখানে সমবায়ের মাধ্যমেই তাঁতিদের সুতো দেওয়া হয় । বাড়িতে সুতোয় রঙ করে শুকিয়ে নেন তাঁতিরা । তারপর মাকুতে রঙ বাহারি সুতো দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি । শিল্পীরা শাড়ির পার থেকে গোটা শাড়িতে নকশা তোলেন মাকুর সাহায্যে । একটা শাড়ি তৈরি করতে 2 দিন থেকে চার দিন সময় লাগে । সেই শাড়ি সমবায়ে দিয়ে তাঁতিরা তাদের প্রাপ্য মজুরি নিয়ে যায় । এভাবেই তাঁতিরা কাজ করে চলছে ।

ধনিয়াখালির তাঁতের  শাড়ি
ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ি

ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায়ের দীনবন্ধু লাহা বলেন,‘‘সমবায় থেকেই পাইকারি দোকানদার এবং বিভিন্ন বিক্রেতারা শাড়ি নিয়ে যায় । এছাড়া খুচরো খরিদ্দার এই ধনেখালির তাঁতের শাড়ি নিজেদের বাড়ির জন্য নিয়ে যায় । লকডাউন এর ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ । ফলে বিক্রেতারা শাড়ি কিনতে আসতে পারছেন না । মার খাচ্ছে তাঁতের শাড়ির ব্যবসা । তাঁতিদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে সমবায়ের মূলধন ভেঙে ৷ এই পরিস্থিতি ছয় মাস থেকে সাত মাস চলতে থাকলে একটা সময় সমিতি বন্ধ করতে বাধ্য হবে । সমবায় থেকে রঙ সুতো ও শিল্পীদের মজুরি দিতে হয় । যার ফলে সমবায়ে গচ্ছিত টাকা সেটাও শেষ হতে বসেছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারি তরফে তন্তুজ যে শাড়ি কিনেছে তা যথেষ্ট নয় । বেসরকারিভাবে যে কাপড় বিক্রি হয় সেটার পরিমাণ অনেকটাই ৷ সেটাও এখন বন্ধ ৷ ধনিয়াখালি ইউনিয়ন সমবায় এখনও পর্যন্ত 35 লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়নি । চৈত্র সেল এবং ইদ বা দুর্গাপুজো মিলিয়ে প্রায় 30 থেকে 32 লাখ টাকায় বিক্রি হয় । কিন্তু বর্তমান আর্থিক বছরে দু-আড়াই লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়নি । আমাদের ধারণা এই বছরে 5 থেকে 6 লাখ টাকার বেশি বিক্রি হওয়া সম্ভব নেই । বাজার চাঙ্গা না হলে সমবায় আর্থিক সমস্যায় মধ্যে পড়বে ।’’

সংকটে ধনিয়াখালির তন্তু সমবায়গুলি

সোমসপুর সমবায়ের বিনয় লাহা বলেন, ‘‘সমবায়ে এখনও পর্যন্ত 75 লাখ টাকা শাড়ি মজুত আছে । এই অবস্থায় শাড়ি বিক্রি হওয়া অসম্ভব । এভাবে কতদিন চালানো যাবে বুঝতে পারছি না । সমবায়ের যে মূলধন আছে তাতে কোন সমবায়ের সর্বোচ্চ ছয় মাস চলতে পারে । না হলে বাধ্য হয়ে বন্ধ সমবায় করতে হবে ৷’’

ধনিয়াখালি সমবায়ে 190 জন তাঁত শিল্পে কাজ করেন । এছাড়া 7 থেকে 8 জন কর্মচারী এই সমবায় হয়ে কাজ করেন । তারাও ভবিষ্যতে এভাবে চলতে থাকলে বেকার হয়ে যাবেন । ‘‘আমাদের সমবায়েই প্রায় 11 হাজার শাড়ি গোডাউনে মজুত আছে । জুন মাসে কিছু বিক্রি হয়েছিল । জুলাই পড়তে সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেছে । সরকার শাড়ি নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় । আমাদের সমবায়ে এখনও পর্যন্ত 6 লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার থাকলেও ট্রান্সপোর্টের সমস্যার কারণে মাল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না ।’’ বলছিলেন বিনয়বাবু ৷

ধনিয়াখালির তাঁতের শাড়ি
সমবায়ে জমা শাড়ি

ধনিয়াখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘কোরোনা পরিস্থিতির জন্য রাজ্য ও দেশে অর্থনীতির যা পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে তাঁতিদের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে ৷ সুতো বা রঙের সঠিকভাবে সাপ্লাই নেই । লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে পুরোটা বন্ধ ছিল ঠিকই । এখন কিছুটা হলেও বিক্রি বেড়েছে । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁতিদের কথা ভাবছেন ৷ গত বছরের মতো এবছরও তন্তুজ ও বিশ্ব বাংলা তাঁতের শাড়ি নিচ্ছে । ধনিয়াখালি তাঁত বিশ্ব বিখ্যাত । রাজ্য সরকার ধনেখালির তাঁত ও সমবায়গুলোকে বাঁচানোর জন্য নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.